সালমান শাহ

42

সালমান শাহ, একজন বাংলাদেশি অভিনেতা ও মডেল। তার প্রকৃত নাম ‘চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন’। টেলিভিশন নাটক দিয়ে তার অভিনয়জীবন শুরু হলেও ১৯৯০-এর দশকে তিনি চলচ্চিত্রে অন্যতম জননন্দিত শিল্পী হয়ে উঠেন। ১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহানপরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত মুক্তি পায়। একই ছবিতে নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনের অভিষেক হয়। জনপ্রিয় এই নায়ক নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশে সাড়া জাগানো অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি সর্বমোট ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন এবং সবকয়টিই ছিল ব্যবসাসফল। তিনি ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
সালমান শাহর জন্ম ১৯৭১ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের সিলেট শহরে দাড়িয়া পাড়াস্থ তার নানা বাড়ি আব এ হায়াত ভবনে, যা এখন সালমান শাহ্ভবন হিসেবে পরিচিত। তার পিতা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। তিনি পরিবারের বড় ছেলে। যদিও তার জন্মনাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন, কিন্তু চলচ্চিত্র জীবনে তিনি সবার কাছে সালমান শাহবলেই পরিচিত ছিলেন।
সালমান পড়াশুনা করেন খুলনার বয়রা মডেল হাইস্কুলে। একই স্কুলে চিত্রনায়িকা মৌসুমী তার সহপাঠী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি ঢাকার ধানমন্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ধানমন্ডির মালেকা সায়েন্স কলেজ (বর্তমান ডক্টর মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ) থেকে বি.কম. পাস করেন।
সালমান শাহ ১২ আগস্ট ১৯৯২ তার খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন। সামিরা হক ছিলেন একজন বিউটি পার্লার ব্যবসায়ী। তিনি সালমানের ২টি চলচ্চিত্রে তার পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ করেন।
প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে সালমান শাহ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দ মেলা তিনটি হিন্দি ছবি সনম বেওয়াফা, দিল ও কেয়ামত সে কেয়ামত তক এর মেধাস্বত্ব নিয়ে সোহানের কাছে আসে এর যে-কোনো একটির বাংলা পুনঃনির্মাণ করার জন্য। কিন্তু তিনি উক্ত ছবিগুলোর জন্য উপযুক্ত নায়ক-নায়িকা খুঁজে না পেয়ে সম্পূর্ণ নতুন মুখ দিয়ে ছবি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। নায়িকা হিসেবে মৌসুমীকে নির্বাচিত করলেও নায়ক খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তখন নায়ক আলমগীরের সাবেক স্ত্রী খোশনুর আলমগীর ‘ইমন’ নামে একটি ছেলের সন্ধান দেন। প্রথম দেখাতেই তাঁকে পছন্দ করে ফেলেন পরিচালক এবং সনম বেওয়াফা ছবির জন্য প্রস্তাব দেন, কিন্তু যখন ইমন ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’ ছবির কথা জানতে পারেন তখন তিনি উক্ত ছবিতে অভিনেয়র জন্য পীড়াপীড়ি করেন। তার কাছে কেয়ামত সে কেয়ামত তক ছবি এতই প্রিয় ছিলো যে তিনি মোট ২৬ বার ছবিটি দেখেছেন বলে পরিচালক কে জানান। শেষ পর্যন্ত পরিচালক সোহানুর রহমান তাঁকে নিয়ে কেয়ামত থেকে কেয়ামত চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এবং ইমন নাম পরিবর্তন করে সালমান শাহ রাখা হয়। পরে মৌসুমীর বিপরীতে তিনি আরও তিনটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ছবি তিনটি হলো অন্তরে অন্তরে (১৯৯৪), স্নেহ (১৯৯৪) ও দেনমোহর (১৯৯৫)। শিবলী সাদিক পরিচালিত অন্তরে অন্তরে হিন্দি চলচ্চিত্র আও পেয়ার করের অনানুষ্ঠানিক পুনঃনির্মাণ, স্নেহ পরিচালনা করেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও শফি বিক্রমপুরী পরিচালিত দেনমোহর হিন্দি চলচ্চিত্র সনম বেওয়াফার আনুষ্ঠানিক পুনঃনির্মাণ।
তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র জহিরুল হক ও তমিজউদ্দিন রিজভী পরিচালিত তুমি আমার চলচ্চিত্রটি ব্যবসাসফল হয়। পরিচালক জহিরুল হক চলচ্চিত্রটির কিছু অংশ নির্মাণ করার পর মারা যান। পরে তমিজউদ্দিন রিজভী বাকি কাজ শেষ করেন। এই চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো তার বিপরীতে অভিনয় করেন শাবনূর। পরে তার সাথে জুটি বেঁধে একে একে সুজন সখি (১৯৯৪), বিক্ষোভ (১৯৯৪), স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৯৪), মহামিলন (১৯৯৫), বিচার হবে (১৯৯৬), তোমাকে চাই (১৯৯৬), স্বপ্নের পৃথিবী (১৯৯৬), জীবন সংসার(১৯৯৬), চাওয়া থেকে পাওয়া (১৯৯৬), প্রেম পিয়াসী (১৯৯৭), স্বপ্নের নায়ক (১৯৯৭), আনন্দ অশ্রæ (১৯৯৭), বুকের ভিতর আগুন (১৯৯৭) সহ মোট ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। সবকটি ছবি ব্যবসাসফল হয়।
সালমান শাহ মৃত্যুর আগে মন মানে না ছবির ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পেরেছিলেন; তার মৃত্যুর পর চিত্রনায়ক রিয়াজ কে দিয়ে ছবিটি করানো হয়। এছাড়াও কে অপরাধী, তুমি শুধু তুমি, প্রেমের বাজি সহ একাধিক মুভি সালমান শাহ অর্ধেক শুটিং করে মারা যান। পরবর্তীতে প্রেমের বাজি ব্যতীত বাকি সিনেমাগুলি অন্য নায়কদের দিয়ে নতুন করে শুটিং করা হয়। সালমানের অসমাপ্ত সিনেমার মধ্যে একমাত্র প্রেমের বাজি সিনেমার কাজ পরে আর শেষ হয় নি।
সালমান শাহ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান। ঢাকার ইস্কাটনে তার নিজ বাস ভবনে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ময়না তদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তার মৃত্যু নিয়ে রহস্য থেকে যায়। অনেকেই সালমান শাহর মৃত্যুর জন্য স্ত্রী সামিরার দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন, এমনকি পরবর্তীকালে সালমানের পরিবারের পক্ষ থেকে স্ত্রী সামিরা ও আরো কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়; কিন্তু পরে এই মামলার আর কোনো অগ্রগতি হয় নি ফলে সালমানের মৃত্যু নিয়ে রহস্য আর উদ্ঘাটিত হয় নি।
২০২০ সালের ২৪ ফেব্রæয়ারি পুলিশের তদন্ত বিভাগ জানায় যে সালমান শাহ আত্মহত্যাই করেছিলেন। সূত্র : উইকিপিডিয়া