সার্ভার জটিলতায় চট্টগ্রামে পাসপোর্ট সেবায় বিড়ম্বনা

52

রাহুল দাশ নয়ন

চট্টগ্রামে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের ভালোভাবেই ভোগাচ্ছে সার্ভার সমস্যা। কেন্দ্রীয়ভাবে সার্ভার ডাউন থাকার পরেও ঝুঁকি নিয়ে জমা নেয়া হচ্ছে পাসপোর্ট আবেদন। কিন্তু জমা স্লিপে পেমেন্ট স্ট্যাটাস আসছে ‘নট ভেরিফাইড’। দুই পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ পাসপোর্ট আবেদন জমা নিলেও ২০-৩০টি পাসপোর্ট সার্ভার ডাউনের কবলে পড়ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র, এমআরপি পাসপোর্ট তথ্য ও আবেদন তথ্য যাচাই না করে আবেদন জমা নেয়ার কারণেই এমন জটিলতা হচ্ছে। তবে গ্রাহকের চাপ সামলাতেই এমন কৌশল নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মনসুরাবাদ পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের পরিচালক আবু সাঈদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘সার্ভার জটিলতায় কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে প্রায় ৪০০ এর মতো পাসপোর্ট আবেদন জমা পড়ছে। প্রায়সময় সার্ভার ডাউনের ঝুঁকি থাকলেও ভোগান্তি কমাতে পাসপোর্ট জমা নেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে দৈনিক ৪-৫টির মতো পাসপোর্ট নানা জটিলতায় আটকে যাচ্ছে। বিশেষ করে পেমেন্ট জটিলতার কারণে এসব পাসপোর্ট পাওয়া সহজ হচ্ছে না। এখন এই কয়েকটি পাসপোর্ট সমস্যা হবে বলে যদি বাকি পাসপোর্ট জমা বন্ধ রাখা হয় তাহলে তো জটিলতা আরো বাড়বে। মানুষ ভোগান্তির শিকার হবে। তবে যেসব পাসপোর্ট আটকে যাচ্ছে সেগুলোও ঢাকায় যোগাযোগ করে দ্রæত ইস্যু করা হয়। সূত্র জানায়, মনসুরাবাদ ও পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ পাসপোর্ট আবেদন জমা হয়। কিন্তু সার্ভার ডাউন থাকার কারণে কাজ করতে বেকায়দায় পড়েন পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরমধ্যে সময় যত বাড়ে তত মানুষের চাপও বাড়তে থাকে। সার্ভার ডাউন ও মানুষের চাপের কারণে দৈনিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। মানুষের এমন চাপ সামলাতে গিয়ে সার্ভার ডাউন থাকলেও পাসপোর্ট জমা নেয়া হয়। এতে কিছুকিছু পাসপোর্টের পেমেন্ট স্লিপ সার্ভারে যুক্ত করা সম্ভব হয় না। যদিও ফিঙ্গারপ্রিন্ট, আইরিশ ও স্বাক্ষর নিয়ে গ্রাহকের পাসপোর্ট আবেদন জমা নেয়া হয় তবে এসব পাসপোর্টের কিছু কিছু আটকে যায়। পাসপোর্ট অফিসে আবেদন জমা নেয়ার সাথে যুক্ত কর্মচারীরা জানান, সার্ভার ডাউন থাকার সময় কাজ বন্ধ রাখা উচিত। কিন্তু আবেদন জমা না নিলে মানুষ চিৎকার চেঁচামেচি করে। যে কারণে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে আবেদন জমা নেয়া হয়। এক্ষেত্রে কিছু আবেদন আটকে যায়। পরে অবশ্য যোগাযোগ করলে এসব পাসপোর্ট যাতে দ্রুত পাওয়া যায় সে চেষ্টাই করি। একটি পাসপোর্ট আবেদন জমা নেয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র, এমআরপি পাসপোর্টের তথ্য ও আবেদনকারীর দেয়া তথ্য যাচাই করা হয়। সার্ভার না থাকলে আবেদনকারীর দেয়া তথ্য ছাড়া বাকি দুটি তথ্য দেখা যায় না। অনিশ্চিতভাবে আবেদনগুলো জমা নেয়া হয়। দেখা যায় পেমেন্ট জটিলতা ছাড়াও তথ্যে গড়মিল থাকার কারণেও অনেক পাসপোর্ট আটকে যায়। সার্ভার ডাউনে ভোগান্তির শিকার এক পাসপোর্ট আবেদনকারী বলেন, আমি ই-পাসপোর্ট আবেদন করতে গেলেই যিনি ছবি তুলছেন তিনি সার্ভার সমস্যার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বলেছিলেন ফোন করলে কিংবা মেইল করলে যোগাযোগ করতে। এরমধ্যে নির্ধারিত দিনে পাসপোর্ট আনতে গিয়ে দেখি পাসপোর্ট আটকে গেছে। পাসপোর্ট অফিসের লোকজন জানিয়েছেন পেমেন্ট স্ট্যাটাস নাকি ছিল না। যা আমাকে দেয়া কাগজেই লিখা ছিল। কিন্তু সে বিষয়টি আমাকে দেড় মাসেও পাসপোর্ট অফিস থেকে জানানো হয়নি। ফোনও দেয়নি। ইমেইল করেছে বলে জানানো হলেও আমারতো ইমেইল আইডিই নেই। আবেদনকালে যে ইমেইল দেয়া হয়েছে সেটি একটি দোকানের।’
বাঁশখালীর এক পাসপোর্ট আবেদনকারী বলেন, ‘মনসুরাবাদে পাসপোর্ট আবেদন করেছিলাম। কিন্তু জমা স্লিপে পেমেন্ট স্ট্যাটাসও ছিল ‘নট ভেরিফাইড’। বিষয়টি বুঝতে না পারলেও জমা নেয়ার এক সপ্তাহ পর ইমেইল আসে আমার আবেদনটি অসম্পূর্ণ ছিল। পরে আবারো যোগাযোগ করলে যাচাই-বাছাই করে নির্ধারিত সময়ে পাওয়ার কথা জানানো হয়। প্রথমদিন সার্ভার ডাউনের কারণেই এ সমস্যাটি হয়েছে বলে জেনেছি।’
পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মাসুম হাসান পূর্বদেশকে বলেন, ‘বিগত ১৫ দিন যাবত পাঁচলাইশে সার্ভার সমস্যা নেই। সার্ভার সমস্যা থাকলে কিছু সমস্যা হয়। এখন সে সমস্যা কেটে গেছে। তথ্য জটিলতা না থাকলে পাসপোর্ট সহজেই মিলে।’