সার্চ কমিটি নাকি আইনে

14

এম এ হোসাইন

‘সার্চ কমিটি করেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন মন্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গন আবার মূখরিত হয়ে উঠেছে। আগামি নির্বাচন কমিশন কিভাবে হবে? সে বিষয়টি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ থেকেও নানা মত আসছে।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে সংবিধান অনুযায়ী একটি আইন প্রয়োজন বলে দাবি করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। গত সোমবার সুজনের একটি অনলাইন গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে ‘সার্চ কমিটি’ একটি ধোঁকা দেওয়ার প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে অযোগ্যদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে খুঁজে বের করা হয়। যার ফলে গত দু’টি নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। শুধু একটি ভালো নির্বাচন কমিশন হলেই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। এজন্য নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন প্রয়োজন।
সার্চ কমিটি গঠন জনগণের সঙ্গে ধোঁকাবাজি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আমরা গতবার দেখলাম, ২০১৮ সালের নির্বাচনে হুদা (কে এম নুরুল হুদা) সাহেবের যে কমিশন, সেই কমিশন পুরোভাবে সরকারের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে আগ বাড়িয়ে তাদের সেই দলীয় ভূমিকা পালন করেছে, যেটা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য না। তিনি বলেন, যদি নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার না থাকে, তাহলে সেই নির্বাচনটা কখনোই সুষ্ঠু, অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য হয় না। এটা আমার কথা নয়, আগে নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত (এম সাখাওয়াত হোসেন) সাহেবরা যে নির্বাচন কমিশনে ছিলেন, তারা খুব সুস্পষ্ট করে বলেছেন, একটা সুষ্ঠু অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে হলে একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকাটা সবচেয়ে জরুরি।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহব্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে ওরা ওদের কথা বলেছে। জনগণের কথা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের জন্য গঠিত সার্চ কমিটি গ্রহণযোগ্য নয়। অতীতে সার্চ কমিটির মাধ্যমে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে সেগুলো নিরপেক্ষ হয়নি। বিশেষ করে রাকিব উদ্দিনের অধীনে ২০১৪ ও কে এম নুরুল হুদার অধীনে ২০১৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছে; সেগুলো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাদের অধীনে যে নির্বাচন হয়েছে সেগুলো সার্চ কমিটির মাধ্যমে হয়েছিল। কাজেই সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশন কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
‘যেহেতু অতীতের দুই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি, জনগণের উপস্থিতি হয়নি, জনগণের ভোট হয়নি। সেহেতু সামনের যে নির্বাচন কমিশন সেটাতে সার্চ কমিটির মাধ্যমে হলে গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। সামনের নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক আইনের ম্যাধমে হতে হবে। কারণ আমাদের যে সংবিধান, সে সংবিধানের শাসনতন্ত্রের ১১ নম্বর অনুচ্ছেদের স্পষ্ট লিখা আছে, প্রজাতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো গণতন্ত্র। গণতন্ত্র হচ্ছে আমাদের জনপ্রতিনিধি যারা থাকবে তাদের অবশ্যই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হতে হবে। শাসনতন্ত্রের এই ধারা পূরণ করতে হবে। সাংবিধানিক আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে’ বলেন ডা. শাহাদাত।
তিনি বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে যে নির্বাচন কমিশন সেটা সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী হয় না। সাংবিধানিক আইন না মানার কারণে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের যে কমিশন সেটা আওয়ামী লীগের পকেট কমিটি হয়েছিল। তারা পুরোপুরি আওয়ামী লীগের নির্বাচন কমিশন ছিল, গৃহপালিত আওয়ামী লীগের কমিশন ছিল। সার্চ কমিটির মাধ্যমে কোনো নির্বাচন কমিশন হলে গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতিসহ বাংলাদেশের সকল পেশাজীবীর মতামত নিয়ে সাংবিধানিক আইনটা করতে হবে। এখন যে সার্চ কমিটি হয় সেখানে আওয়ামী লীগপন্ত্রি সবাইকে রাখা হয়। এভাবে যেন না হয়, এভাবে হলে আবার আমরা পাবো আওয়ামী লীগপন্ত্রি কমিটি। দলমত নির্বিশেষে সকল পেশাজীবীর মতামতের ভিত্তিতে সাংবিধানিক আইনের অধীনে নির্বাচন কমিশন হতে হবে।
‘শাসনতন্ত্রের ১১ অনুচ্ছেদ এবার বিলুপ্ত হয়েছিল। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর দ্বাদশ সংশোধনীতে আবার যুক্ত করা হয়। নির্বাচন কমিশন যখন সাংবিধানিক আইনে হবে তখন তারা নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবে। এটা নিরপেক্ষ হয়ে যাবে। তারা নিরপেক্ষ সরকার হবে। প্রশাসন থেকে শুরু করে সব কিছুর দায়-দায়িত্ব তারা বহন করবে’- যোগ করেন ডা. শাহাদাত হোসেন।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, সার্চ কমিটি সবচেয়ে স্বচ্ছ। সার্চ কমিটির মাধ্যমেই ইসি নিয়োগ দেয়ার কথাই বারবার বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এখন বিএনপি যদি এটা না মেনে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ তার জবাব দিবে। তাছাড়া বিএনপির আন্দোলন করার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। কিন্তু তাদের আন্দোলন জনগণ প্রত্যাখান করবে। অতীতে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের কনসেপ্ট নষ্ট করেছিল বিএনপি। বিএনপি কখনো স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ইসি গঠন করেনি। ১৯৯০ ও ২০০১ সালে সঠিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেনি। এখন যে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি নিয়োগ দেয়া হবে এটিই সাংবিধানিক ও ন্যায়সঙ্গত।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, গতবারও এভাবে দলীয় নেতাদের কমিশনে এনেছে। এবারও সার্চ কমিটি করে তাদের লোক আনতে চাচ্ছে। এটা বিরোধীদলসহ সাধারণ মানুষ মানবে না। আমরা এটার ঘোর বিরোধিতা করছি। নির্বাচন আসলে কিছুতেই নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে না হলে সুষ্ট নির্বাচন হবে না। এখনো যারা দেশের সুশিল সমাজ এবং রাজনীতিক দলের নেতাদের সাথে সংলাপে বসে একটি কমিশন গঠন করুক। বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। আগামিকালের ভোট যদি আজকে হয়ে যায় তাহলে এটার করণীয় কি? নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।