সার্চ কমিটির বিধান রেখে ইসি গঠন আইন সংসদে উপস্থাপন

18

পূর্বদেশ অনলাইন
রাষ্ট্রপতি গঠিত ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ উপস্থাপন করা হয়েছে।
রোববার (২৩ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বিলটি উপস্থাপন করেন।
এরপর বিলটি পরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে আইন, বিচার ও সংসদ সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।
এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই বিলের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের নিয়োগে সংবিধানে আইনের কথা বলা থাকলেও দীর্ঘ ৫০ বছর এই আইন করা হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে আইন প্রণয়নে এ বিলটি সংসদে তোলা হয়েছে। এ বিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যোগ্যতার পাশাপাশি সার্চ কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে।
এক্ষেত্রে ইতোপূর্বে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি নিয়োগের বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইতঃপূর্বে গঠিত অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটির ও তৎকর্তৃক সম্পাদিত কার্যাবলী এবং উক্ত অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ বৈধ ছিল বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত বিষয়ে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।
বিলে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা সম্পর্কে বলা হয়েছে- সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার পদে কোনো ব্যক্তিকে সুপারিশ করার ক্ষেত্রে তিনটি যোগ্যতা থাকতে হবে। তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, নূন্যতম বয়স ৫০ বছর হতে হবে এবং কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার নূন্যতম ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
প্রস্তাবিত আইনে সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য ছয়টি অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- যদি আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষিত হন, দেউলিয়া হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেয়ে থাকেন, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নেন বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেন, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে নূন্যতম দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট-১৯৭৩ বা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার-১৯৭২ এর অধীনে কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়ে থাকেন কিংবা আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।
বিলে বলা হয়েছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সার্চ কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে। খসড়া আইনে সার্চ কমিটির কাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে- এই কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বর্ণিত যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।
এই সার্চ কমিটি সিইসি এবং কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য দুইজন করে ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। কমিটি গঠনের দশ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে দেবে বলে খসড়া আইনে বলা হয়েছে।
সার্চ কমিটিতে কারা থাকতে পারবেন সে সম্পর্কে বিলে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি যোগ্য ব্যক্তিদের নাম সুপারিশের জন্য ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করবেন। এই কমিটির সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুইজন বিশিষ্ট নাগরিক। তিনজন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম হবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদান স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, গণতন্ত্র সুসংহত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে এবং জনস্বার্থ সমুন্নত হবে মর্মে আশা করা যায়।’