সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা হোক

20

 

সাম্প্রতিক কয়েকটি দুঃখজনক ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। কুমিল্লায় পবিত্র কুরআন অবমাননা, বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা, হিন্দু ধর্মের উপসনালয় ভাংচুর, চাঁদপুরে নিরীহ মানুষের প্রাণ সংহারের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। সর্বশেষ রংপুরের জেলেপল্লীতে আগুন লাগার মতো নিন্দনীয় ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা বাংলাদেশের মতো সম্প্রীতির দেশের চিত্র হতে পারেনা। বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয়, উদার মুসলিম দেশ। এখানে হাজার বছর ধরে সব ধর্মের মানুষ একসাথে আত্মীয়ের মতো বাস করে আসছে। পৃথিবীর বহুদেশে যেখানে মুসলমান জনগোষ্ঠী নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে সেখানে আমাদের দেশে সংখ্যালঘু ধর্মীয় জনগোষ্ঠী নি:সংকোচে, ভয়হীন পরিবেশে থাকছে। এদেশের প্রত্যেক সরকার এবং জনগণ অন্যধর্মের মানুষের পাশে থেকেছে সবসময়। কিছু দুষ্কৃতিকারী হয়তো মাঝে মাঝে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব নিন্দনীয় কাজে জড়িয়েছে। যারা এসব কাজের পেছনে রয়েছে নি:সন্দেহে তারা দেশের ভালো চায়না। তারা চায় এদেশকে বিশ্বের কাছে খারাপভাবে উপস্থাপন করতে। অবশ্য প্রশাসন জড়িতদের খুঁজে বের করতে চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কুমিল্লায় পূজামন্ডপে পবিত্র কুরআন রাখা ব্যক্তি ইকবালকে কক্সবাজার থেকে আটক করা হয়েছে।
আমি দেখেছি, আমার দাদা, বাবা-চাচাদের সাথে হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষের কী দারুণ সম্পর্ক। স্থানীয় এক প্রবীণ স্কুল শিক্ষক ডা. হরিসাধন সাহা যিনি এখনো বেঁচে আছেন (এখনো হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন) ওনার সাথে আমার দাদা মৃত কাজী আবদুল হকের সম্পর্ক ছিল আপন ভাইয়ের মতো। ওনারা দুজনই প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক ছিলেন। একই স্কুলে শিক্ষকতা শেষে অবসর নেন। আমার দাদা যখন মারা যান তখন দেখলাম, ডা. হরিসাধন সাহা লাশের পাশে বসে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছেন। দাদা মারা গেছেন অনেক আগে। অথচ এখনও দাদার কথা মনে করে তিনি মন খারাপ করেন, চোখের জল ফেলেন। আমি এবং আমার দাদার নাতি, নাতনিরা ওনাকে (ডা. হরিসাধন সাহা) দাদা বলেই ডাকি। বাবা-চাচারা চাচা বলেই সম্বোধন করেন। আমি মনে করি, এমনই অনেক সম্পর্ক দেশের প্রত্যেক অঞ্চলেই রয়েছে। কিছুদিন আগে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে মুসলিম বন্ধুর জন্য ব্যবসায়ী হিন্দু বন্ধুর আহাজারি আর কান্না ঝরেছে। কবরের পাশে যেয়ে কান্নাকাটি করেছেন। এ ধরণের কোন মধুর দৃশ্য কি পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায়? এমন একটি সুন্দর ও ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সুমহান ইসলাম ধর্মও কখনো অন্যধর্মের উপাসনালয়ে হামলা কিংবা তাদের মূর্তিকে গালি দেওয়াকে অনুমোদন দেয়না। মদীনা রাষ্ট্রে প্রিয়নবি (সা:) সবধর্মের মানুষকে নিয়ে একসাথে থেকেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন।
বাংলাদেশের মতো উদার মুসলিম দেশে কোনধরণের ধর্মীয় সহিংসতা, অশান্তি কোন বিবেকবান মানুষ সমর্থন করেনা। ফায়দা লুটার চেষ্টা না করে কীভাবে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা যায় সে চিন্তা করা উচিত সংশ্লিষ্ট সবাইকে। কারণ, সম্প্রীতি নষ্ট হলে হিংসার আগুনে পুরে ছারখার হবে প্রিয় মাতৃভূমি। এমন কোন পরিবেশ কখনো আমরা কল্পনাও করিনা। অপরাধকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত দোষীদের শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। এনিয়ে কোন রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি দেশের সাধারণ মানুষ চায়না। যে কোনমূল্যে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতেই হবে। কে কী করল না করল সেদিকে তাকানোর কোন সুযোগ নেই। আমাদের দেশটাকে আমরা সকলে মিলেমিশে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব-এই হোক লক্ষ্য।

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক