সাম্প্রদায়িক শক্তির শেকড় অনেক গভীরে চলে গেছে

21

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, ১৯৭১ ও ১৯৭৫ সালে একাধিকবার ধর্মকে কলঙ্কিত করা হয়েছিল। পরে বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে ক্ষমতা দখল করলে সাম্প্রদায়িক শক্তির শেখড় বাংলার মাটির অনেক গভীরে চলে যায়। বাংলা সংস্কৃতির জারি-সারি, পল্লীগীতি, ভাটিয়ারী গান সমাজ থেকে হারিয়ে যায়। এখন এসেছে ওয়াজ মাহফিল। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরীফ। আর ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম, শান্তির ধর্ম। কিন্তু এই ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করে তথাকথিত ধর্ম ব্যবসায়ীরা বারবার আমাদের ধর্মকে কলঙ্কিত করেছে।
গতকাল শনিবার বিকালে নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত আলকরণ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারেক সোলেমান সেলিমের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তারেক সোলেমান সেলিম নাগরিক স্মরণসভা কমিটি এ সভার আয়োজন করে।
হানিফ বলেন, হিন্দুদের পূজামন্ডপে কোরআন শরীফ রেখে সাম্প্রদায়িক বীজ ছড়িয়ে দেশের মধ্যে হানাহানি শুরু হয়েছে। যে ব্যক্তিটি করেছে সে ইতোমধ্যে ধরা পড়েছে। তিনি একজন মুসলমান। একজন মুসলমান পবিত্র ধর্মগ্রন্থ অন্য জায়গায় রেখে, মন্দিরে রেখে সম্মানিত করলো নাকি অসম্মানিত করলো। হুজুগে বাঙালি, ধর্মান্ধরা সেটি বিচার বিবেচনা না করে মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর করে আমরা দেখিয়ে দিলাম কোরআনের উপর আমাদের কত সম্মান। আসলে এভাবে কোরআন শরীফকে অসম্মান করা হলো।
তিনি আরও বলেন, আমরা এমন একটা ধর্মান্ধতায় চলে এসেছি যা থেকে ছাত্র সমাজ, যুব সমাজ ও তরুণদেরকেই শিক্ষা নিতে হবে। আমরা যার যার ধর্ম পালন করতে চাই। সকল ধর্ম নিজেদের মতো পালন করবো। পবিত্র কোরআনে অন্য ধর্মকে আঘাত করার কথা কোথাও বলা নেই। সাম্প্রদায়িক বীজবাষ্প ছড়িয়ে একটি চক্র দেশের মধ্যে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়। আমরা ধর্মপরায়ন হতে চাই, ধর্মান্ধ হতে চাই না। ধর্মান্ধরা মানুষকে ভুলপথে পরিচালিত করেছে। আমাদের ধর্ম পরায়ন হওয়ার পাশাপাশি আমাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতিকে জাগিয়ে তুলতে হবে। ওয়াজের নামে মানুষকে ভুল শিক্ষা দিয়ে মানুষকে ধর্মান্ধ বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ইসলামি বক্তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আপনারা ভালো দিকগুলো ওয়াজ মাহফিলে তুলে ধরুন। ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পৃথিবীতে মুসলমানদের ছোট করবেন না।
প্রয়াত কাউন্সিলর তারেক সোলেমান সেলিমের রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, তারেক সোলেমান যে জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন তা স্মরণসভায় প্রমাণিত হয়েছে। তারেক সোলেমান কেমন ব্যক্তি ছিলেন তা নতুন করে বলার কিছু নেই। একজন ব্যক্তি যদি পরপর চারবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হন তাহলে বুঝা যায় তার জনপ্রিয়তা কতটুকু শক্তিশালী ছিলো। অসম্ভব জনপ্রিয় হলেই একজন মানুষ পরপর চারবার নির্বাচিত হতে পারেন। যেটা তারেক সোলেমান ছিলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার আত্মমর্যাদাশীল উন্নত দেশ গড়ার। আমাদের এই স্বাধীনতা-সংগ্রামের ভিত্তি ছিল চারটি মূলনীতি। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করে ৭০ সালের নির্বাচনে জনগণ ম্যান্ডেট দিয়েছিল। পরে দেশ স্বাধীন হয়েছিল এই মূলনীতির ভিত্তিতে। এই সংবিধানের মূল স্তম্ভ ছিল জাতীয় চার মূলনীতি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে সাম্প্রদায়িক শক্তির বীজবপন করেছেন। নিষিদ্ধ দল জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন। কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আযমকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। সরকার গঠন করে স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। কুখ্যাত রাজাকারদের হাতে জাতীয় পতাকা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের অপমানিত করেছেন।
তারেক সোলেমান সেলিম নাগরিক শোকসভা কমিটির চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব জামশেদুল আলম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু, যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম রাসেল, প্রয়াত তারেক সোলেমান সেলিমের পুত্র মোহাইমিন তারেক রাতুল, সাবেক কাউন্সিলর জালাল উদ্দিন ইকবাল, সাবেক ছাত্রনেতা সাদেক হোসেন পাপ্পু, কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন, নুরুল আলম, আতাউল্লাহ চৌধুরী, হাসান মুরাদ বিপ্লব প্রমুখ।