সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনার ঝড়

34

পটিয়া প্রতিনিধি

পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডের সমালোচনা এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। এরপর তার এ বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয় ফেসবুকে। প্রকশ্যে জনসভায় ওই ঘোষণার সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ উপস্থিত ছিলেন।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর অসংখ্য নেতাকর্মী ফেসবুকে পক্ষে-বিপক্ষে নানা ধরনের পোস্ট দিচ্ছেন। ফেসবুক ছাড়াও চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা।
জানা গেছে, পটিয়া উপজেলার ছনহরা ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মামুনুর রশিদ রাসেলের মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহব্বায়ক ও যুগ্ম আহব্বায়কের উপস্থিত না থাকাকে কেন্দ্র করে ওই ঘটনার জন্ম হয়।
গত মঙ্গলবার ইউনিয়ন পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম দাখিলের শেষ দিন ছিল। দুপুরে মামুনুর রশিদ রাসেল মনোনয়ন ফরম জমা দেয়ার সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। রাসেলের মনোনয়ন ফরম জমা দেয়া শেষে নেতৃবৃন্দ মাঠে এলে সেখানে উপস্থিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।
এ সময় রাসেলের সমর্থনে সংক্ষিপ্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ। সবশেষে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বক্তব্যের শুরুতেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলের কর্মকান্ড নিয়ে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, নৌকার বিরোধীতাকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নিয়ে রহস্যজনক ভূমিকা নিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। আগামীতে বিদ্রোহী ও নৌকার বিরোধীতাকারীদের দমনে ব্যর্থ হলে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, দলের পদ-পদবী ব্যবহার করবেন আর দলের প্রার্থী ও প্রতীকের বিরোধীতা করবেন, তা মেনে নেয়া যায় না। আমি অগোচরে কথা বলি না, যা বলা উচিত, তা সামনে বলি।
এ বিষয়ে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হয় তার বক্তব্যে কোন ভূল ছিলো কিনা? তিনি বলেন, না কোন ভুল নয়, ছনহরা ইউনিয়নে গত নির্বাচনে বীর মুক্তিযোদ্ধা সামশুল আলম আলমদারকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক কেউ সে সময় ফরম জমা দিতে আসেননি এবং নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেনি। ওই ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যানের মৃত্যু হলে তারই পুত্র মামুনুর রশিদ রাসেলকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। তার ফরম জমা দেয়ার সময় গত মঙ্গলবারও তারা আসেননি। গত ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক নৌকার পক্ষে কাজ না করলেও এবার উপ নির্বাচনে যুগ্ম আহবায়ক ওসমান আলমদারের নামে দলীয় মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করা হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কারের বদলে পুরস্কৃত করার চেষ্টার কারণে এ ক্ষোভ।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জমান চৌধুরী বলেন, আমরা কোন বিদ্রোহীর পক্ষে ছিলাম না এবং এখনও নেই। মোতাহের ভাই ইচ্ছাকৃতভাবে এ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি আমাদের হেয় করেছেন। অথচ তিনি হাইদগাঁও ইউনিয়নে বহিষ্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থী বিএম জসিমের পক্ষে অবস্থান নেন। পরবর্তীতে জসিম চেয়ারম্যান হওয়ার পর দলের নেতাকে গাছে বেঁধে পিটিয়েছেন। বিএম জসিমের উপর আশির্বাদ আছে মোতাহের ভাইয়ের। যুগ যুগ ধরে ছনহরায় নৌকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। সেটি মাথায় রেখে কাজ করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু মোতাহের ভাইয়ের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ বক্তব্য দেয়া উচিৎ হয়নি।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ও প্রার্থীর বিরোধীতা করায় মোতাহের ভাইসহ তিন জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ওই আদেশ এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ বলেন, মোতাহের ভাইয়ের বক্তব্যে আমরা বিব্রতবোধ করছি। ছনহরায় গত নির্বাচনে দলের নেতৃবৃন্দের অবস্থানের বিষয়ে কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ দায়ের করেনি। তখন অভিযোগ দেয়া হলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম। জনসম্মুখে এভাবে বক্তব্য দেয়া যায় না। এটা সাংগঠনিক বিষয়। প্রয়োজনে জেলা কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচনা করতে পারতেন।
ছনহরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহব্বায়ক ওসমান আলমদার জানান, গত নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম দেয়ার সময় তাদের বলা হয়নি। তাই তারা যাননি। এবারও বলা হয়নি, তাই এবারও যাননি। তবে দলের প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন। মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে দলকে ধংসের চেষ্টা করছেন।