সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই

20

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে শপিং মলে না গিয়ে অনলাইনে ঈদের কেনাকাটা করার জন্য সবার প্রতি আহব্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় নিজের সরকারি বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ আহব্বান জানান তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, “শপিং মলে যারা সরাসরি কেনাকাটা করছেন সেখানে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। সেখানে সরাসরি না গিয়ে প্রযুক্তির সহায়তা ও অনলাইনে কেনাকাটা করুন। অনলাইনে কেনাকাটার বিষয়টিও আজকাল জনপ্রিয় হয়েছে। অনেকেই অনলাইনে শপিং করছেন।
“অত্যাবশ্যকীয় না হলে পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে অনলাইনে কেনাকাটা করতে আহব্বান জানাচ্ছি। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যাব।”
সরকার চলাচলে বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল করায় সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দুরত্ব, শারীরিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশনা উপেক্ষিত হচ্ছে বলে মনে করছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এই উপেক্ষা ‘বড় বিপর্যয়’ ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
কাদের বলেন, “বিশ্বে বর্তমানে ২১২টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে। এর মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বশেষ ৩৪ তম। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত-পাকিস্তানসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের অবস্থান ভালো হলেও পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতিশীল। ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে বলেই স্পষ্টত প্রতীয়মান হচ্ছে। এই রোগ বা সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম পন্থা। এমন সংকটে আমাদের সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।
“অথচ আমরা লক্ষ করছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ ছুটি কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিথিল করার পর বাণিজ্য কেন্দ্র, ফেরিঘাট, তৈরি পোশাক শিল্প ও অন্যান্য কারখানাসহ সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব, শারীরিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলার আহব্বান উপেক্ষিত হচ্ছে।”
এ বিষয়ে সাবধান হওয়ার আহব্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, সামান্য উপেক্ষা বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনবে। তাই এখন থেকেই সতর্ক থাকার অনুরোধ করিছ। করোনাভাইরাসের সঙ্গে বসবাসের অভ্যাস রপ্ত করতে হবে আমাদের সকলকে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত জনগণকে সচেতন থাকতে ও সংক্রমণ প্রতিরোধে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “তিনি চিকিৎসাসহ সার্বিক পরিস্থিতি গভীরভাবে মনিটর করছেন। আমরাও আমাদের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে সক্ষমতা অর্জন করছি।
“প্রধানমন্ত্রীর আহব্বানে সাড়া দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় সকলকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করছি। আপনাদের মনোবল রাখতে হবে সাহস রাখতে হবে; শেখ হাসিনার সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সৎ ও সাহসী নেতৃত্বে আমরা ঘুরে দাঁড়াব।”
করোনাভাইরাসের কারণে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ সীমিত হওয়ায় তারা যে সমস্যায় পড়ছেন, তা বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসকদের প্রতি এসব রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার আহব্বান জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখা, বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা পরিস্থিতিগত কারণে সীমিত হয়ে পড়েছে। এতে সাধারণ মানুষ তথা রোগীরা অন্যান্য রোগের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিধি মেনে এবং সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করে প্রতিদিন কিছু সময় প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখার জন্য চিকিৎসকদের কাছে আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।
“পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোতেও সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করে অন্যান্য রোগীদের সেবা চালু করার অনুরোধ জানাচ্ছি। অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে পথিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। স¤প্রতি একজন অতিরিক্ত সচিবসহ আরো কয়েকটি ঘটনা গণমাধ্যমে এসেছে।”
যে সব চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সামনের সারিতে থেকে কাজ করছেন, তাদের পাশাপাশি যারা প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখছেন এবং যে সব হাসপাতাল স্বাস্থ্য সেবা অব্যাহত রেখেছে তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
ত্রাণ কার্যক্রমে অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করেছে বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনগত, প্রশাসনিক এবং দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সেটাই প্রমাণ করে। সরকার কঠোর অবস্থানে আছে বলেই সামান্য অনিয়ম ধরা পড়লেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
“ত্রাণ নিয়ে সরকারের এই কঠোর অবস্থানের পরও একটি মতলবি মহল ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে কল্পিত অভিযোগ করছে। সেটা কোনোভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।”
গত এক দশকে সরকার ‘বিপুল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সক্ষমতা’ অর্জন করার কারণে করোনাভাইরাস সংকটে বড় অঙ্কের টাকা প্রণোদনা ও ত্রান দিতে পারছে বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত এক দশকে বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সক্ষমতা অর্জন করেছে এ কারণে এই সংকটকালে বিপুল পরিমাণের প্রণোদনা ও ত্রাণ সহায়তা প্রদান সম্ভব হয়েছে।
“প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ, এক কোটি মানুষকে রেশনের আওতায় আনা এবং ৫০ লাখ মানুষকে নগদ সহায়তা প্রদান সমসাময়িক বিশ্বে নজিরবিহীন।”