সামনে বর্ষা, বাড়ছে এডিশ মশা প্রতিরোধে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে

11

ঝড়, বৃষ্টি, শুষ্ক মৌসুম বা গ্রীষ্ম মাস, কোন কালেই চট্টগ্রাম নগরী মশামুক্ত ছিলনা। বলা যায়, জলাবদ্ধতা, পবিশে দূষণ ও যানজটের মত মশার উপদ্রব এবং মশাবাহিত রোগের প্রাদূর্ভাব নগরবাসীর কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ সংকট হিসেবে বিবেচিত। মশা নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নানা উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে সামনে আসছে বর্ষা মৌসুম। কিন্তু ইতোমধ্যে মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। বিশেষ করে হালকা বৃষ্টিতে জমাটবাধা বিভিন্ন পাত্রের পানিতে এডিশ মশা বাসা বাধতে শুরু করেছে বলে মত দেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ। ফলে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এখনই মশক নিধনে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া না হলে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। চট্টগ্রাম, ছাড়া রাজধানী ঢাকার অবস্থা আরো মারাত্মক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২২টি ওয়ার্ডকে ডেঙ্গুর জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে একটি জরিপ প্রকাশ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জোর পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিচ্ছেন কীটতত্ত¡বিদরা। ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ডেঙ্গু রোগে তখন ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এখনো ডেঙ্গুজ্বরের কোনো প্রতিষেধক বের করতে পারেনি সরকার। ডেঙ্গু থেকে রেহাই পেতে হলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আইইডিসিআরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। সাধারণত মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দায়ী। হঠাৎ থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় প্রজনন সক্ষমতা পায়। ফলে এডিস মশার বিস্তারও ঘটে বেশি। এ মশা যত বেশি হবে ডেঙ্গুর হারও তত বাড়বে। উৎস বন্ধ না করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে। ২ বছর আগে ডেঙ্গুর প্রকোপ চলাকালীন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। এরপর সিটি কর্পোরেশনগুলো মশক নিয়ন্ত্রণে যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করেছে সেগুলো ছিল কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনগুলো তেমন কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে দেখা যায়নি। তবে এ বছর চট্টগ্রামসহ দেশের সিটি করপোরেশনগুলো মশক নিধন কাজে বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। বাড়িয়েছে এ খাতের বরাদ্দও। এখন থেকে তারা প্রস্তুতি শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। দুই ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে করপোরেশনগুলো। প্রথমত বছরব্যাপী, দ্বিতীয়ত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনাটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনাটি যাচাই-বাছাই চলছে। এডিস মশা নির্মূলে সিটি করপোরেশন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মার্ক করা ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে অভিযান শুরু করেছে। আমরা চট্টগ্রামের বর্তমান মেয়র এম. রেজাউল করিম চৌধুরীকে শুরু থেকে মশা নিধনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগের বিসয় আন্তরিক হতে দেখেছি। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা দলের পরামর্শও তিনি গ্রহণ করেছেন বলে জানতে পারি। বিকল্প উদ্যোগ হিসিবে মেয়রের এ কার্যক্রমগুলোর প্রশংসিত হলেও এখন এ নিয়ে দৃশ্যমান কোন কিছু রক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। আমরা মনে করি, মেয়র শুরুতে যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন, তা যথাযত বাস্তবায়ন করতে পারলে নগরীকে মশামুক্ত করতে দুঃচিন্তায় ভোগতে হবে না। সিটি করপোরেশন এডিস নিধন এবং এডিসের বংশবিস্তার রোধে জোরদার অভিযান পরিচালনা করবে- এ প্রত্যাশা নগরবাসীর।