সাবেক বনপ্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা জাফরুল ইসলাম আর নেই

39

নিজস্ব প্রতিবেদক

দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী আর নেই। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে নগরীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
বিএনপি সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাফরুল ইসলাম চৌধুরী মৃত্যুকালে দুই ছেলে ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহŸায়ক আবু সুফিয়ান জানান, জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর প্রথম নামাজে জানাজা আজ বুধবার সকাল ১০টায় নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে, দ্বিতীয় জানাজা দুপুর ২টায় বাঁশখালী জলদী হাইস্কুল মাঠে এবং তৃতীয় জানাজা বিকেল ৩টায় গুনাগরির বাঁশখালী ডিগ্রি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বাঁশখালীতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। গত সোমবার বিএনপির একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। এরপরই অসুস্থবোধ করলে তাকে দ্রæত হাসপাতালে ভর্তি কারা হয়। গতকাল মৃত্যু হয় এ প্রবীণ রাজনীতিবিদের।
জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৫০ সালের ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি বিএনপি সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক ডিগ্রিধারী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৯৬-৯৭ সালে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) সভাপতিও ছিলেন। ২০০৯ সালের জুনে তিনি দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহŸায়ক নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। টানা ২০১৯ সাল পর্যন্ত সেই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ-জাতীয় সংসদীয় ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একমাত্র সংসদ সদস্য ছিলেন এ রাজনৈতিক নেতা।
মুখে হাসি সদালাপী মানুষটি আসা-যাওয়ার পথে দাঁড়িয়ে, হাত নেড়ে, জড়িয়ে ধরে মানুষকে আপ্লুত করবেন না। বাঁশখালী থেকে ৪ বার সাংসদ নির্বাচিত হওয়া ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও সব দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত ছিলেন সজ্জন ব্যক্তি হিসাবে। দলীয় পরিচিতির বাইরেও তার প্রতি সাধারণের ছিল অন্যরকম মুগ্ধতা।
বেশ কিছুদিন ধরে নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন তিনি। রাজনৈতিক জটিলতার সমাধান খুঁজতে ইদানিং তার ঘনিষ্টজনদের মতে, শারীরিক জটিলতার কথা ভুলে গিয়েছিলেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে মাঠেই ছিলেন বিএনপির এ নেতা। মাঠে সরব থাকা এ মানুষটি যেন হঠাৎ করেই নিভে গেলেন।
দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। এতেও মনোবল হারাননি তিনি। বিএনপির জন্য নিবেদিত প্রাণ এ ব্যক্তি যে কোন কর্মসূচিতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। এমনকি মৃত্যুর আগের দিনও দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়েছেন। অসুস্থতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষটা হঠাৎ করেই যেন চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী সাহেব বিএনপির জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু বিএনপির একটি কর্মসূচি বাদ দেননি। প্রতিটি কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতেন। এমনকি সোমবার বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচিতেও উপস্থিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে চট্টগ্রামের জনগণ শোকাহত। তাঁর শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর মতো একজন অভিভাবককে আমরা হারালাম। তিনি সবার সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে মিশতেন। তিনি শুধু জনপ্রিয় নেতাই ছিলেন না, দলের জন্য ছিলেন খুবই আন্তরিক। দলের যে কোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতেন। শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ার পরও তিনি কর্মসূচি বাদ দিতেন না। সোমবার বিপ্লব উদ্যানের কর্মসূচিতেও ছিলেন। এমন একজন আন্তরিক মানুষকে আমরা হারালাম।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে গত সোমবার সকাল ১১টায় নগরীর বিপ্লব উদ্যানে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। সেখানে বক্তব্যও রাখেন তিনি। অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে অসুস্থবোধ করেন। এরপর তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতলে। মৃত্যুর আগের দিনের অনুষ্ঠানেই নয়, প্রায় প্রতিটি কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। যদিও দীর্ঘ কয়েকবছর ধরেই শারীরিক অসুস্থতায় ভোগছিলেন তিনি। ডায়াবেটিস ছাড়াও কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে নিয়মিত ডায়ালসিস করে আসছিলেন। এরমধ্যেও দলীয় কর্মসূচিতে ছুটে আসতেন তিনি।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, সোমবার বিপ্লব উদ্যানে অনুষ্ঠানের পরই বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি কিডনি রোডে আক্রান্ত ছিলেন, নিয়মিত ডায়ালসিস করাতেন। দলীয় কোন কর্মসূচি বাদ দিতেন না। এমনকি ঢাকায় হাসপাতাল থেকে ক্যানেলা হাতে তিনি দলীয় কর্মসূচিতে চলে যান। রোগে আক্রান্ত হলেও তার মনোবল শক্ত ছিলো। হঠাৎ করেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো।
এদিকে বরেণ্য রাজনীতিবিদ জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী ও এম মনজুর আলম, চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এমএ লতিফ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহাজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, আব্দুল আউয়অল মিন্টু, গিয়াস কাদের চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্ঠা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবেদীন ফারুক, অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন (ভিপি), চিটাগাং চেম্বারের পরিচালকমÐলীর পক্ষে সভাপতি মাহবুবুল আলম, সিনিয়র সহ-সভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন ও সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি সভাপতি আলী আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। বিএনপি নেতা ইসমাইল জবিউল্লাহ, রোজি কবির, গোলাম আকবর খন্দকার, অধ্যাপক সুকোমল বড়–য়া, এসএম ফজলুল হক, ডা. মামুন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন দিপ্তি, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহেদ, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচএম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, মহানগর ছাত্রদলের আহŸায়ক সাইফুল আলম ও সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন, সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জামাল হোসেন, সদস্য সচিব গোলাম রাসুল মোস্তাক, পৌরসভা বিএনপির আহŸায়ক শওকত আলী চৌধুরী, সদস্য সচিব আবদুর রহিম প্রমুখ পৃথক বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেন।
এছাড়া বাঁশখালীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর কবির চৌধুরী, অধ্যক্ষ মাওলানা জহিরুল ইসলাম, সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম হোসাইনী, লেয়াকত আলী চেয়ারম্যান, সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাকিমুল হায়দার খান, আমিনুর রহমান চৌধুরী, আবদুস সবুর চৌধুরী, মাস্টার লোকমান, ইব্রাহিম খলিল, আকতার হোসেন, রেজাউল হক চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আসহাব উদ্দিন চেয়ারম্যান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আলী আব্বাস, জিয়া উদ্দিন চৌধুরী আশফাক প্রমুখ শোক প্রকাশ করেন। তারা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।