সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর চবি

19

শাহরিয়াজ মোহাম্মদ, চবি

নিজের ব্যাচের সেই পুরোনো বন্ধুদের খোঁজা, কাউকে খুঁজে পেলেই দৌঁড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কিছুমূহুর্ত অতীতে ফিরে গিয়ে স্মৃতিকাতর হওয়া, পুরোনো দিনের কোনো ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে একে অপরকে খোঁচা দেয়া আবার পরক্ষণেই পুরোনো কোনো স্মৃতি মনে পড়ে গিয়ে চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রু- এ যেন এক অকল্পনীয় স্মৃতির মিলন মেলা। একই ব্যাচের কয়েকজন জড়ো হলেই ছবি তোলা কিংবা নিজের বর্তমান পরিস্থিতি বা অবস্থা তুলে ধরে বন্ধুদের কাছে তা জানা- স্মৃতিকাতর সেই বন্ধুদের মিলন ঘটল আবারও। কেউ এসেছেন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে, কেউবা এসেছেন একা। অনেকে তো আবার নাতি-নাতনীদেরও সাথে করে নিয়ে এসেছেন।
গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে দেখা গেছে এমন চিত্র। ‘এসো মিলি পঞ্চাশের উৎসবে, গৌরবে অস্তিত্বে অনুভবে’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
বিভাগটির ১ম ব্যাচ থেকে শুরু করে শেষ ব্যাচ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন এতে। প্রায় ২ হাজার ১০০ প্রাক্তন শিক্ষার্থী, তাদের পরিবারের সদস্য ও বিভাগটির বর্তমান ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের অংশগ্রহণে প্রায় চার হাজার মানুষের মিলনমেলা ঘটে গতকালের এই উৎসবকে কেন্দ্র করে।
উৎসবস্থল ঘুরে দেখা যায়, নানা বয়সের-নানান পেশার লোকেরা এসেছেন এখানে। এরমধ্যে কেউ শিক্ষক, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ সরকারি কর্মকর্তা, আবার কেউ কেউ আছেন বিদেশের কোনো বড় কোম্পানিতে। তাদের কেউ এসেছেন লাঠিতে ভর দিয়ে আবার কেউ এসেছেন পরিবারের সদস্যদের হাত ধরে। দীর্ঘদিন পর মায়া জড়ানো এই প্রাণের ক্যাম্পাসে আসতে পেরে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই। আবার অনেকে প্রিয় বন্ধুদের সান্নিধ্য পেয়ে হয়ে পড়েন উচ্ছ¡সিত।
বিভাগটির মাস্টার্স প্রথম ব্যাচের ছাত্র কাজী আহমদ নবী। বর্তমানে ৭৪ বছর বয়সী এই প্রাক্তন ছাত্র এসেছেন তাঁর স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও ২ নাতিকে সাথে নিয়ে। আলাপের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে সেই ১৯৭১ সালে আমাদের মাস্টার্স ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিল। আর ভর্তি হয়েছিলাম আমরা স্বাধীনতার পর। বন্ধুদের সাথে কতশত স্মৃতি যে জমা হয়েছিল। আমাদের সময় তো আর যোগাযোগ ব্যবস্থা এতো উন্নত ছিল না। মাস্টার্স শেষ করে যাওয়ার পর আর বন্ধুদের সাথে খুব একটা যোগাযোগ হয়নি। আমি কল্পণাও করিনি আমার বন্ধুদের সাথে আবার দেখা হবে। হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের ফলে আমাদের অনেকের সাথে আবার দেখা হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে আমি যেন সেই পুরোনো দিনের ক্যাম্পাস জীবনেই ফিরে গিয়েছি। তবে আমাদের সব বন্ধুরাতো আর আসেননি। অনেকেই মারা গিয়েছেন। অনেকেই হয়তো চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।
কক্সবাজার থেকে এসেছেন ২৭তম ব্যাচের ছাত্র আব্দুল হক। তিনি রামু কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষও। বর্তমানে সেখানেই শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। কথা হয় তাঁর সাথেও। তিনি বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল সব বন্ধুরা মিলে আবারো মিলিত হবো। অবশেষে তা সম্ভব হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের একদম প্রথম ব্যাচ থেকে শুরু করে সর্বশেষ ব্যাচের সবার সাথেই আমাদের মিলিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে। এছাড়া আমাদের ব্যাচের বন্ধু-বান্ধবদের সাথেও আমরা মিলিত হতে পেরেছি। এই অনুভ‚তি সত্যিই বলে বুঝানোর মতো নয়।
সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ সংলগ্ন শহীদ মিনার এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। মোট ৩ পর্বের আলোচনার প্রথম পর্বে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন ও সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের আহব্বায়ক অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
তিনি বলেন, হিসাববিজ্ঞান বিভাগসহ আমাদের অনেক শিক্ষার্থীই দেশ বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রতিষ্ঠিত। তারা সেখানে সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনগ্রসর মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করার জন্য অ্যালামনাই সদস্যদের প্রতি আহবান জানান।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলাম। এ পর্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াশিকা আয়েশা খান এমপি, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিট জেনারেল অব বাংলাদেশ মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, বাংলাদেশ সরকারের সচিব মুহাম্মদ মোহসিন চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে।
২য় পর্বে ‘Contemporary Issues of Accounting’ বিষয়ের উপর স্মারক বক্তব্য প্রদান করেন একাউন্টিং রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ইন্ডিয়ার সভাপতি ও ইন্ডিয়ান একাউন্টিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক ড. ভবতোষ ব্যানার্জি।
৩য় পর্বে স্টার অ্যালামনাই সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। এ পর্বে ৯ ক্যাটাগরিতে সর্বমোট ১২৩ জন স্টার অ্যালামনাইকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এতে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আইয়ুব ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাকাউন্টিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক এম. হারুনুর রশীদ।
এদিকে বিকেল ৪টা থেকে নগরীর জিইসি কনভেনশন হলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে, গত শুক্রবার বিকেলে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা-উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।