সাধারণ সভাজুড়ে জলাবদ্ধতা ও গৃহকর

50

নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাথে নগরীর অন্যান্য সেবা সংস্থগুলোর কার্যক্রমের সমন্বয় না হলে চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডের সুফল হুমকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। গতকাল চসিকের ২৫তম সাধারণ সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি। সভাপতির বক্তব্যে মেয়র বলেন, আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী চসিকের ইতিহাসের সর্বোচ্চ আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছেন। এই প্রকল্পসহ চলমান প্রকল্পগুলো শেষ হলে চট্টগ্রামের বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে। তবে, সেবা সংস্থাগুলো চসিকের সাথে সমন্বয় না করলে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের সুফল হুমকির মুখে পড়বে।
অন্য সংস্থার রাস্তা কাটা নিয়ে মেয়র বলেন, ‘ওয়াসা চলমান স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য রাস্তা কাটবে। শুধু ওয়াসা নয়, যে কোনো সংস্থাকে রাস্তা কাটার আগে অবশ্যই চসিকের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে এবং যথাযথ প্রাক্কলনের মাধ্যমে পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের সাথে সমন্বয় করে রাস্তা কাটতে হবে। আমরা রাস্তা বানাবো আর কোনো সংস্থা রাতের আঁধারে কেটে ফেলবে এমন অভিযোগ পেলে কঠোর পদক্ষেপ নিব।’ মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে টানেল থেকে ফ্লাইওভার নির্মাণসহ ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করায় চট্টগ্রামের সন্তান এবং মেয়র হিসেবে চট্টগ্রামের জনগণের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) স্থায়ী কার্যালয় না থাকায় নাগরিক সেবা প্রদানে সমস্যা হচ্ছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি চসিকের নিজস্ব ফান্ডে স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ করব। প্রকল্প কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার স্বার্থে একজন ঠিকাদারকে এক টেন্ডার নোটিশে একাধিক কাজ দেয়া হবে না। আর যেসব ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না তাদের কালো তালিকাভুক্ত করব। আমি কঠোর না হলে পিসি রোড হতো না। ঝুঁিক নিয়ে কঠোর হয়ে পিসি রোডের কাজ শেষ করেছি। অনৈতিক কার্যক্রমে জড়িত ঠিকাদারদের ছাড় দিব না। কর্মকর্তাদেরও সতর্ক করছি, কারো গাফিলতির জন্য জনদুর্ভোগ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিব।
সভায় প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলরসহ চসিকের কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
মেয়র বলেন, নগরীকে পরিচ্ছন্ন করার জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। রাজস্ব থেকে পাওয়া অর্থ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে প্রাধিকারের ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সড়ক ও ওয়ার্ড কার্যালয়গুলো সংস্কার করা হবে। বিশ^ব্যাংক থেকে পাওয়া ২৭৫ কোটি টাকার কোভিড রেসপন্সের অর্থকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে আমাদের।
মেয়র আরও বলেন, ‘কেবল বস্তুগত উন্নয়ন নয়, সার্বিক উন্নয়নের জন্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রমেরও প্রসার প্রয়োজন। এবার চসিক অন্য বছরগুলোর তুলনায় আরো বড় পরিসরে বইমেলার আয়োজন করেছে। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ম্যুরাল নির্মাণের পাশাপাশি চট্টগ্রামের কৃতী সন্তানদের নামে সড়ক ও স্থাপনাসমূহের নামকরণ করব। মানুষের অবসর সময়কে আনন্দময় করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে শিশুপার্ক ও বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে নান্দনিক নগর গড়ে তুলব।’
সভায় একাধিক কাউন্সিলর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের জন্য খালে বাঁধ নির্মাণ করায় বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং এ বিষয়ে সিডিএকে দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণের আহŸান জানান। তারা গৃহকর নিয়ে একটি কুচক্রিমহল গুজব ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসনে যে প্রকল্প পরিচালনা করছে, সেখানে রিটেইনিং ওয়ালের কারণে নালা-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় নগরীর অনেক এলাকার মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। আমি সিডিএ চেয়ারম্যান মহোদয়সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেছি, যাতে এ প্রকল্পের জন্য বর্ষায় মানুষ কষ্ট না পায়। তবে সিডিএ থেকে এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখছি না। গৃহকর নিয়ে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়, কারণ আপিলের মাধ্যমে কর নেয়া হচ্ছে। আর জনগণ গৃহকর দিয়ে হাসিমুখে ঘরে ফিরছে।