সাধারণ মানুষ দিশেহারা

90

বাজেট পরবর্তী সময়ে বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। কোনো কোনো পণ্যের দাম বাজেট ঘোষণার আগেই বেড়েছে। পণ্যমূল্য বাড়ছে তো বাড়ছেই, লাগাম টানার কেউ নেই। আদা, পেঁয়াজ, রসুন, ডাল, গুঁড়োদুধসহ শিশু খাদ্যের দাম বাড়ছে। কোনো কোনো পণ্য কেজিতে ৫০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে। মাছের দামও অস্বাভাবিক। সব মিলিয়ে মধ্যবিত্ত-নি¤œবিত্ত, চাকরিজীবীসহ সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে কালোটাকার মালিকদের বিশাল ছাড় দেওয়া হলেও ভ্যাট ও শুল্ককর বাড়ানো হয়েছে ভোজ্যতেল, শিশুখাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা খাতে। ভ্যাটে রেয়াত সুবিধার পরিবর্তে স্বপ্নবিলাসী বাজেটের অর্থের জোগান দিতে উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোগ পর্যন্ত তিন স্তরে রাজস্ব দিতে হচ্ছে গ্রাহককে। এর মধ্যেই স¤প্রতি বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম। গ্যাসের দামও বেড়েছে চুলায় ১৭৫ টাকা। গ্যাসের দাম বাড়াতে প্রভাব পড়েছে গণপরিবহনে।
নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার, কাজির দেউড়িসহ একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। রসুনের দাম এক সপ্তাহ আগে ছিল প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। প্রতি কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। আদার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। গেল সপ্তাহে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। বর্তমানে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা। মসুর ডাল গেল সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৯০ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০টাকা। কেজিতে বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
গত ১ জুলাই থেকে অন্য খাতের মত আবাসিক খাতেও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। আবাসিক খাতে এক চুলা এবং দুই চুলা উভয় ক্ষেত্রে গ্যাসের মাসিক খরচ ১৭৫ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ দুই শ্রেণির মানুষের দৈনন্দিন খরচে নতুন বোঝা তৈরি করবে। এসব জনগোষ্ঠীর বড় একটা গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ চুক্তিভিত্তিক ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তাদের ওপরও নতুন করে ভাড়া বৃদ্ধির খড়গ নেমে আসবে।
বিশেষ করে সিএনজি গ্যাসে ৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে ঘনমিটার প্রতি ৪০ থেকে ৪৩ টাকা নতুন দাম নির্ধারণ করলেও অযৌক্তিকভাবে কয়েকগুণ ভাড়া বাড়িয়েছে কিছু পরিবহন মালিক। তারা জনপ্রতি দূরপাল্লায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি ট্যাক্সি ভাড়াও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে উঠানামা ১০০ টাকা দাবি করা হচ্ছে। ৮০ টাকার কমে কোথাও যেতে চায় না চালকরা। ফলে দিনে ২০ থেকে ৩০ টাকা খরচ শুধু ভাড়ায় বেড়েছে।
জানা যায়, গ্যাসের ওপরই নির্ভরশীল দেশের কৃষি-শিল্প উৎপাদন, বিদ্যুৎ, পরিবহন যোগাযোগসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম। তাই গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে নতুন আরেক চাপে পড়েছে সাধারণ আয়ের মানুষ, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এমন একের পর এক চাপে মধ্যবিত্তদের এখন করুণ দশা। কারণ গ্যাসের ওপর বিদ্যুৎ, কৃষি, পরিবহন, শিল্প কারখানাসহ অনেককিছু নির্ভরশীল। এ সিদ্ধান্তে সরকারের রাজস্ব বাড়লেও সীমিত আয়ের মানুষের আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়ে যাবে। দেশে রয়েছে সাড়ে ৪ কোটি বেকার। প্রবাসীদের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা এলেও তা বিনিয়োগ হচ্ছে না। বাজেটে ভ্যাট বাড়ানো আর গ্যাসের দামবৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যেই নিতপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য পেঁয়াজ, রসুন, শিশুখাদ্য গুঁড়োদুধের দাম বেড়ে গেছে। আরও দেড়-দুই মাস পর গ্যাস-ভ্যাটের খড়গের কুফল স্পষ্ট হবে।
এরই মধ্যে গুঁড়োদুধের দামও বেড়ে গেছে। বাজেটের অজুহাতে বাড়িয়ে দিয়েছে দোকানদাররা। প্রতি পেকেট গুঁড়োদুধ ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। শিশুখাদ্যেরও একই অবস্থা। প্রতি আধা কেজি শিশু খাদ্যে দাম বেড়েছে ১০০ টাকারও বেশি।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, মাছের দামে আগুন। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় যা আগে বিক্রি হত ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। কাতলা মাছ ও প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে। মলা মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, পুঁটি মাছ ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া মাছ ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। সমুদ্রের মাছের মধ্যে লইট্যা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, রিক্শা মাছ ৬৫০ টাকা, পোয়া মাছ ৪৫০ টাকা, রূপচান্দা ছোট ৫৫০ টাকা, বড় ৭৫০ টাকা, সুরমা ৪৫০ টাকা, ছোট ইলিশ ৭৫০-৮শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ফার্মের ডিম প্রতি ডজন ১১৫ টাকা, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, লেয়ার মুরগি ১৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৩৫০ খেকে ৪শ’ টাকা, কক ১৭০ থেকে ২শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫শ’ থেকে ৫৫০ টাকা ও খাসির মাংস ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায়।
ক্যাবের সভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের ত্রাহি অবস্থা। তাদের আয় বাড়েনি কিন্তু খরচ বেড়ে গেছে। তারা এখন দিশেহারা।
বাজার করতে আসা স্কুল শিক্ষক মীর আমজাদ খান জানান, দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় তার নাভিশ্বাস উঠেছে। বেতন বাড়েনি অথচ জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। তাতে তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অমরা মধ্যবিত্তরা কীভাবে বেঁচে থাকব?
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মধ্যবিত্ত লোকজন বিপাকে পড়েছেন। তারা চোখে অন্ধকার দেখছেন। না পারছেন বলতে, না পারছেন সইতে।
জানা যায়, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অধিকাংশ পাওয়ার প্ল্যান্ট গ্যাসনির্ভর। বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি হিসেবে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোয় গড়ে ৫০ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করা হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় সরবরাহ গ্যাসে ঘনমিটারপ্রতি ৩ টাকা ১৬ পয়সা থেকে ৪ টাকা ৪৫ পয়সা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে প্রায় ৪১ শতাংশ। তাই গ্যাসের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে অতীতের মতো কিছুদিন পর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হতে পারে। নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে বাসাবাড়িসহ কলকারখানার উৎপাদন ব্যয়ও বাড়বে। আবার গ্যাস-বিদ্যুতের ওপর সার উৎপাদনের নির্ভরশীল। এখানে গ্যাসের মূল্য প্রতি ঘনমিটারে ২.৭১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪.৪৫ টাকা করা হয়েছে, দামবৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬৫ ভাগ। সরাসরি এর প্রভাব পড়বে কৃষি উৎপাদনে।