সাধারণ মানুষের দুঃখ বোঝার কেউ নেই দ্রব্যমূল্য, গ্যাস, তেল ও গাড়িভাড়া বৃদ্ধি শক্তহাতে নিয়ন্ত্রণ জরুরি

23

সমগ্রদেশে নিয়ম-নীতি, নিষ্ঠা-দায়বদ্ধতা, সততা-সুচিন্তা, বৈধতা-মানবকল্যাণ, ত্যাগ ও হালালনিষ্ঠা তথা প্রকৃত মূল্যবোধ ভয়ানক অসুস্থ। এর জন্য পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশিক্ষার অভাবই দায়ী। প্রাণশক্তিসম্পন্ন শ্রেষ্ঠ-জীব হিসেবে যেসকল গুণাবলী মানুষের মধ্যে থাকা জরুরি তার লেশমাত্র বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের মধ্যে অনুপস্থিত। বিশ্বমানব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আবির্ভূত অস্তিত্ববাদী চেতনায় গা ভাসিয়ে জাগতিক ভোগবিলাসে মগ্ন। মানুষ নামক প্রাণির মন-চিন্তা-অনুভূতির শ্রেয় বৈশিষ্ট্য থাকা যে প্রয়োজন, তার বিপরীতে মানব মনে আটপ্রকারের স্থায়ী ভাব, পশুত্বের শক্তিতে ক্রিয়াশীল। রতি, হাস, শোক, ক্রোধ, ভয়, ঈর্ষা, জুগুপ্সা ও বিস্ময় এ আট প্রকারের মানব মনের স্থায়ীভাবকে শিক্ষা-দীক্ষা-পরিবেশ প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাকৃতিক ভাবে মানবমনের স্থায়ীভাব পশুদের মধ্যেও আছে। কিন্তু মানুষ শিক্ষা-দীক্ষা-পরিবেশ প্রভাবে পশুত্ব স্বভাব থেকে আলাদা হয়ে প্রকৃত মানুষ হয়। কিন্তু বর্তমান শিক্ষায় মানুষ হচ্ছে খুবই নগণ্য সংখক লোক। বর্তমান বিশ্বে পশু ও মানব স্বভাবের পার্থক্য ভয়ানক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। যার ফলে দূর্নীতি, ঘুষ, সুদ, চোরাকারবারী, দালালি, অবৈধ মজুদদারী, মিথ্যা অজুহাত, রাতারাতি পুঁজিপতি হওয়ার ইচ্ছা, প্রতারণা, ভেজালের জাল তৈরির ক‚টবুদ্ধিসহ ইত্যাকার প্রবণতার ঘোরে মানুষ নামের জীবগুলো ব্যস্ত। এদের নিয়ন্ত্রণ করতে রাজশক্তির নির্দয় শাস্তিমূলক কৌশলি ব্যবস্থা ছাড়া দেশের নিরীহ হালাল আয়ের মানুষ খেয়ে পরে সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারবে না।
দেশের বাজার ব্যবস্থার উপর সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এতে অসাধু ব্যবসায়ী স¤প্রদায় এবং অবৈধ ভাবে টুপাইচ রোজগারকারীদের কিছু যায় আসে না। যারা ঘুষ খেয়ে, দুর্নীতি করে, চোরাকারবারী করে, সুদ খেয়ে, অবৈধ ব্যবসা করে, লোকজনকে ঠকিয়ে, প্রতারণা করে রাতারাতি অঢ়েল টাকা পয়সার মালিক হয় তাদের জন্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তেল, গ্যাস,বিদ্যুত বিল এবং গাড়িভাড়া বৃদ্ধি সমস্যা নয়। এরা সংখ্যায় খুব বেশি না। দেশের অধিকাংশ মানুষ গরীব, স্বল্প আয়ের উপর নির্ভর করে দিন যাপন করে। তাদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক ভাবে এগিয়ে আসতে হবে সরকার ও প্রশাসনকে।
সাধারণ মানুষের দুঃখ বোঝার কেউ নেই। যখন বাজারে তেলের দাম বাড়ে তখন যাদের আর্থিক সমস্যা নেই তারা তাড়াহুড়ো করে দুইতিন মাসব্যাপী যে পরিমাণ তেল প্রয়োজন তা একসাথে কিনে নিয়ে বাজারে আরো বেশি পরিমাণ সংকট তৈরি করে থাকে। যখন চালের দাম বাড়ে তখন কয়েক বস্তা এক সাথে কেনে নেয়। কার্যত অবৈধ রোজগার কারী এবং অনৈতিক ভাবে যারা আয়ের চাকাঠিক রাখতে পারে তারাও দেশের দ্রব্যমূল্য বাড়ানোতে সহায়তা করে। কথা হচ্ছে সব ধরনের জনদুর্ভোগ সৃষ্টির পেছনে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তির হাত থাকে। কোন দ্রব্যে এক কেজিতে ১ টাকা বাড়লে খুচরা বিক্রেতারা একশত গ্রামে একটাকা করে কেজি প্রতি ১০ টাকা বাড়িয়ে নিয়ে থাকে। কোন নিয়মনীতি ও নৈতিক দায়বদ্ধতা ব্যবসায়ীদের নেই। গাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রেও একই দশা। লিটার প্রতি ২৫ পয়সা জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে গাড়িভাড়ার সরকারি নিয়মকে উপেক্ষা করে গণপরিবহনের মালিক শ্রমিক সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে যেমন খুশি বাড়তি ভাড়া আদায় করে থাকে। কিন্তু তার প্রভাব পড়ে বৈধভাবে রোজগারকারী ও স্বল্প আয়ের মানুষের উপর। যারা অবৈধ ভাবে টাকা রোজগার করে তাদের গায়ে লাগে না। তারা যেসকল যাত্রী প্রতিবাদ করে তাদের বিপক্ষে অবস্থান করে বাড়তি টাকা দিয়ে গাড়িতে চড়ার পাশাপাশি সৎ ও ন্যায়ের পক্ষে যারা কথা বলে তাদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। জুলুমবাজগণ পরিবহনের মালিক শ্রমিকদের সহায়তা করে। জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতেও সংকটে পড়ে সাধারণ মানুষ। যার কারণে দেশে শুধু জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়তে থাকে। রোজগার বাড়েনা দরিদ্রসাধারণ মানুষের। ফলে সরকার মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়ী, ঘুষখোর আমলা এবং বিভিন্ন অফিসের অবৈধ রোজগারের কর্মকর্তা কর্মচারী আরামে জীবন যাপন করে যায়। দেশটা অনৈতিক ব্যবসায়ী ও অসাধু চাকুরীজীবীদের তালুক হয়ে গেছে। তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় সব করে কিন্তু সাধারণ মানুষের বর্তমান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও দুর্ভোগ নিয়ে চিন্তাও করে না। ফলে দেশে গরীব দিনদিন আরো গরীব হতে থাকে। অন্যপক্ষে যারা আছে তারা অল্পসময়ে কোটিপতির সংখ্যায় যুক্ত হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক বাজার, যুদ্ধবিগ্রহ, পরিবহন সমস্যা ইত্যাকার অজুহাতে দেশের বাজারের সব সময় একটা না একটা দ্রব্যের মূল্য সাধারণ জনগণের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার ও প্রশাসনের মায়াকান্না ছাড়া কার্যকর জনহিতকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। দেশের সংবাদ মাধ্যম প্রতিনিয়ত এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে মাত্র। তাতে জনগণের কোন উপকার হয় না। বরং যারা এসকল কর্মকাÐে জড়িত তাদের আরো বেশি পরিমাণে জনগণকে জুলুম করার কোটকৌশলের যোগান হয়। এভাবে দেশের বাজার ব্যবস্থা চলতে পারে না। দেশটা স্বল্প সংখ্যক একটি বিশেষ শ্রেণির তো নয়। আঠারো কোটি মানুষের। তাই দেশে সবধরনের অফিসের দুর্নীতি, ঘুষ, বন্ধের কার্যকর আইন ও তার যথাযথ প্রয়োগের ব্যবস্থা ছাড়া এদেশের দূর্নীতি বন্ধ হবে না। ব্যবসার তাবৎ হিসাব সরকারের আওতায় রাখার ব্যবস্থা ছাড়া অসাধু ও সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। উৎপাদন, আমদানী, মজুদ, রপ্তানি এবং বাজারে মাসে কি পরিমাণ দ্রব্য বিক্রি হয় তার হিসাব সরকার সংরক্ষণ করে, ব্যতিক্রম অবস্থা দেখলে সাথে সাথে শাস্তিমূলক কঠোর ব্যবস্থা কার্যকর করা ছাড়া দেশের দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল করা সম্ভব নয়। এবিষয়ে সরকারি ভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করে দেশের অধিকাংশ জনগণের জীবনযাত্রার দূর্ভোগকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। পেঁয়াজকাÐ, চাল নিয়ে চালবাজি, সয়াবিন তেলকাÐ, অতঃপর ডিম কাÐ! সব ক্ষেত্রে মেঘহীন বৃষ্টিকাÐ দেখে যাচ্ছে দেশের মানুষ। এসবের কার্যকর পতিকার চায় দেশের দুঃখি মানুষেরা।