সাধারণ মানুষকে আস্থায় ফেরাতে পুলিশের অপরাধ প্রবণতা বন্ধে কঠোর হতে হবে

48

‘জনগণের বন্ধু পুলিশ’ এ আপ্তবাক্যকে বাস্তবতায় রূপ দিতে সম্প্রতি পুলিশ প্রশাসনের ব্যাপক প্রচেষ্টা লক্ষ করা গেলেও মাত্র গুটিকয়েক পুলিশ সদস্যের কারণে পুরো পুলিশ বাহিনীর ভাবমুর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। দু-চারজনের জন্য পুরো পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, এটা মানা যায় না বলে অতীতে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। পুলিশের অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনতে পুলিশ সুপারদের কাছে বিশেষ নির্দেশনাও গেছে। কিন্তু তার পরও থেমে নেই পুলিশের অপরাধ তৎপরতা। সম্প্রতি কক্সবাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পুলিশের অপরাধমূলক কর্মকাÐ জড়িয়ে পড়ার খবরে সাধারণের মাঝে উদ্বেগ লক্ষ করা যাচ্ছে। অভিযুক্তদের ইতোমধ্যেই গ্রেফতার ও সাসপেন্ড করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন পুলিশ বলছেন, তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরাধী পুলিশ সদস্যকে হাতেনাতে ধরতে পেরেছে, সহযোগীকেও খুঁজে বের করা গেছে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- এসব অবশ্যই ইতিবাচক ব্যাপার। ছিনতাই, চাঁদাবাজি এসব তো একেবারেই মামুলি অপরাধ, উদ্দেশ্যমূলক গ্রেপ্তার, অপহরণ, নির্যাতন, খুনের মতো বড় বড় অপরাধকর্মেও এ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ত হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। আবার পুলিশের পোশাকে বা পুলিশ পরিচয় দিয়ে গ্রেপ্তারের নামে অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটে চলেছে। পুলিশের যে বিশেষ পোশাক জনগণের কাছে নিরাপত্তার ও নির্ভরতার প্রতীক হওয়ার কথা, সেটা অনেক সময়ই জনগণের কাছে আতঙ্কের বস্তুতে পরিণত হয়। সাধারণত মানুষ কোনো বিপদে পড়লে প্রথমে পুলিশ বাহিনীর দ্বারস্থ হবে এটাই হওয়ার কথা। কিন্তু এখন হচ্ছে যেন উল্টো। মানুষ পারতপক্ষে কোনো সাহায্য চেয়ে বা অভিযোগ নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হতে চায় না। পুলিশে ছুঁলে আঠারো ঘা- কথাটি বাস্তবতার ভিত্তিতেই প্রচলিত হয়েছে।
উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশের থানা ও ইউনিটগুলোতে কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও পুলিশের অপরাধমূলক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা। আবার এটাও ঠিক যে কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত হচ্ছে। বদলি, প্রত্যাহার বা সাময়িক বরখাস্তের মতো ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে কিন্তু পুলিশের অপরাধ বন্ধ হচ্ছে না। তবে ভুক্তভোগী অনেকেরই অভিযোগ, ফৌজদারি মামলার অপরাধ করলেও বেশির ভাগ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দিয়েই ইতি টানা হয়। অনেক সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার বা সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলে সময় নিয়ে কৌশলী তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে রক্ষা করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর অর্জন কিছু সদস্যের অনৈতিকতা ও অসাধুতার জন্য নিশ্চয়ই নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। আইনবিরোধী কর্মকান্ড ও দুষ্কৃতকারীদের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করাই হচ্ছে পুলিশের প্রথম ও প্রধান কাজ। কিন্তু এই বাহিনীর কিছু সদস্য যদি জেনে-বুঝে অপকর্মে লিপ্ত হয়, তাহলে এরচেয়ে দুঃখজনক তো আর কিছু নেই। পুলিশের যেসব সদস্য এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দ্রæত ব্যবস্থা না নিলে এ বাহিনীর ওপর মানুষের আস্থা কমে আসবে। পুলিশ বিশ্বাসযোগ্যতা হারালে তা হবে দেশের জন্য বড় ক্ষতি। কাজেই আমরা প্রত্যাশা করি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হোক।
সম্প্রতি পুলিশের মানবিক তৎপরতা জাতিকে আশাবাদী করে তুললেও বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশের পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের কাজ অপরাধী দমন। অথচ তারাই অপরাধ ঘটাচ্ছে, অপরাধীদের অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করছে আর নিরপরাধ মানুষকে অপরাধী বানাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতিই মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি করে। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ এ পরিস্থিতিতে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়তে পারে। পুলিশ নিজেই অপরাধী হলে দুর্বৃত্তরা অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা মনে করি, অপরাধী যেই হোক তার শাস্তি নিশ্চিত করাই হলো অপরাধ দমনের প্রথম পদক্ষেপ। আর অপরাধ দমনের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে যারা নিজেরাই অপরাধে লিপ্ত হবে, তাদের শাস্তি অধিকতর কঠোর হওয়া দরকার। বলতেই হয়, এত অভিযোগ অসন্তোষের পরও দেশের সাধারণ মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল পুলিশ। কিন্তু সেই আস্থার জায়গাটাকে মজবুত করতে হবে যে কোনোভাবে।