সাধারণ ছুটি বাড়লো ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত

162

দেশে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় অফিস-আদালত বন্ধ রেখে ঘরে থাকার মেয়াদ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে সন্ধ্যা ৬টার পর বাইরে বের হতেও নিষেধ করেছে সরকার।
সরকারের এই নির্দেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে গতকাল শুক্রবার আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, “আগের ছুটির ধারাবাহিকতায় ১৫ ও ১৬ এপ্রিল এবং ১৯ থেকে ২৩ এপ্রিল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হল। সাধারণ ছুটির সময় আগামী ১৭-১৮ এপ্রিল এবং ২৪-২৫ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি সংযুক্ত থাকবে।
বর্ণিত ছুটি অন্যান্য সাধারণ ছুটির মতো বিবেচিত হবে না জানিয়ে আদেশ এই ছুটির সময় যেসব নির্দেশাবলী কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে তাও বলে দেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজের
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রশমনে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। অতীব জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ঘরের বাইরে বের না হলে সবাইকে অনুরোধ করা হল। সন্ধ্যা ৬টার পর কেউ ঘরের বাইরে বের হতে পারবেন না। এ নির্দেশ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচল কঠোরভাবে সীমিত করা হল। বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে।
আদেশে বলা হয়েছে, জরুরি পরিসেবার (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট ইত্যাদি) ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে না। “কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, জ্বালানি, সংবাদপত্র, খাদ্য, শিল্প পণ্য, চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, জরুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন এবং কাঁচা বাজার, খাবার, ওষুধের দোকান ও হাসপাতাল এ ছুটির আওতার বাইরে থাকবে।”
জরুরি প্রয়োজনে অফিস খোলা রাখা যাবে জানিয়ে ছুটির আদেশে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে ঔষধশিল্প, উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা চালু রাখতে পারবে।
“মানুষের জীবন জীবিকার স্বার্থে রিকশা-ভ্যানসহ যানবাহন, রেল, বাস সার্ভিস পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে। জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় ছুটিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।”
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব অফিস আদালত বন্ধ রেখে সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
সেই সঙ্গে সবাইকে যার যার বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়ায় বিশ্বের আরও অনেক দেশের মত বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষও ঘরবন্দি দশার মধ্যে পড়ে, যাকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বর্ণনা করা হচ্ছে ‘লকডাউন’ হিসেবে।

সরকারি ভাষায় সেই ‘ছুটির’ মেয়াদ এরপর বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। পরে তৃতীয় দফায় সেই ছুটি ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
এর আগে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার ১৭ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়।
অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণার পর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির মেয়াদ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ছুটি আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
একজন কর্মকর্তা বলেছেন, রোজার ছুটির সঙ্গে এই ছুটি মিলিয়ে ঈদের পর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তাভাবনা করছে সরকার।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ : করোনা ভাইরাসের মহামারী ঠেকাতে সরকার অফিস-আদালত বন্ধ রাখার মেয়াদ বাড়ানোর পর সারা দেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটিও চতুর্থ দফা বাড়ানো হয়েছে।
শুক্রবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সাধারণ ছুটি’ অনুযায়ী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সব ধরনের কোচিং সেন্টারও ওই সময় পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে। এর আগে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে তা দুই দফায় বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছিল।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টানা বন্ধ থাকায় পাঠদানের ধারাবাহিকতা রাখতে ২৯ মার্চ থেকে সংসদ টিভিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস দেখানো শুরু করেছে সরকার। আর প্রাথমিকের ক্লাস গত ৭ এপ্রিল থেকে দেখানো শুরু হয়েছে।
এই ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে এসব বাড়ির কাজ দেখাতে হবে।
মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজের উপর প্রাপ্ত নম্বর তাদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।

২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ গার্মেন্টস কারখানাও : সাধারণ ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করায় আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বিজিএমএইএ ও বিকেএমইএ’র সদস্যভুক্ত তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ রাখতে মালিকদের অনুরোধ করা হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সব কারখানার মালিকদের কাছে এ ব্যাপারে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ’র সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহ আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে বেতন দেওয়ার জন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের অফিস খোলা রাখার প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে নিজ নিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ/বিকেএমইএ) এবং শিল্প পুলিশকে অবহিত করতে হবে।