সাদ মুসা গ্রুপ : বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে সম্ভাবনার হাতছানি

138

 

১৯৮২ সালে পোশাক খাত দিয়ে ব্যবসা শুরু করে সাদ মুসা গ্রুপ। চট্টগ্রামের পোশাক খাতের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মহসিন চট্টগ্রাম ফেব্রিকস বোর্ড লিমিটেড, সাদ মুসা ফেব্রিকস লিমিটেড, এমএ রহমান ডায়িং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, সাদ মুসা হোম টেক্সটাইল অ্যান্ড ক্লথিং লিমিটেড, দেশ কম্পিউটার, মার্স অটোমোবাইলস, সাদ মুসা হাউজিং কমপ্লেক্স লিমিটেড, হাসনি বনষ্পতি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড, আল মুস্তফা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আহমদি অয়েল মিলস লিমিটেড, ক্রিসেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, রোকেয়া স্পিনিং মিলস লিমিটেড, এমদাদ এতিমিয়া স্পিনিং মিলস লিমিটেড, সুলতান হাবিবা ফেব্রিকস লিমিটেড, মাহমুদ সাজিদ কটন মিলস লিমিটেড, সায়মা সামিরা টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, কর্ণফুলী জুট ট্রেডিং সহ একের পর এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সাদ মুসা গ্রæপ সাফল্যের দেখা পায় ১৯৯০ এর দশকে টেক্সটাইল ব্যবসা শুরুর পর। ২০১০ সাল পর্যন্ত তাদের ব্যবসা ভালোই চলছিল। এ সময়ে তারা একটি নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করে। কিন্তু এর বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয় ইউটিলিটি সংযোগ না পাওয়ায়।
এসময় প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরতে বিপুল বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে শিল্প গোষ্ঠীটি। চলমান টেক্সটাইল ব্যবসার পাশাপাশি ইস্পাত, সিমেন্ট, কৃষি, অবকাশ কেন্দ্র ও আবাসনের মতো খাতেও নতুন করে বিনিয়োগের কথা ভাবছে। গ্রæপটি প্রায় ৩৩৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়েছে, যার সিংহভাগ অর্থায়ন আসবে বিদেশি ঋণের মাধ্যমে। স্থাপন করছে সুলতানা হাবিবা ফ্যাব্রিক্স মিল, যাতে থাকবে আটটি ইউনিট। এ কারখানায় কটন ইয়ার্ন স্পিনিং, ব্লেন্ডেড ইয়ার্ন স্পিনিং, ওয়েভিং, সার্কুলার নিটিং, আরএমজি ডাইং, প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং, হোম টেক্সটাইল ডাইং এবং ইয়ার্ন ডাইং এর কার্যক্রম চলবে বলে জানান কোম্পানিটির কর্মকর্তারা। এই মিলটি স¤প্রসারণ ছাড়াও সাদ মুসা ডেনিম এবং সাদ মুসা টেরি টাওয়েলস মিলে আরও ৯০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে গ্রুপটি। সাদ মুসা গ্রুপের টেক্সটাইল খাতে শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারপরও, সুলতানা হাবিবা ফ্যাব্রিক্স মিলের মতো আরেকটি বড় কারখানা স্থাপন করছে, তৈরি পোশাক ও গৃহস্থালি টেক্সটাইলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে। আগামী বছরে নতুন কারখানায় উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে এরমধ্যেই ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে মিলটির আংশিক নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে গ্রুপটি। এখন বিদেশি ঋণে দরকারি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। সাদ মুসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহসিন জানান, ইতোমধ্যে চীন, বেলজিয়াম ও জার্মানির কয়েকটি ব্যাংক ৩ শতাংশ সুদে প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছি।
গ্রুপের মূল ব্যবসা টেক্সটাইল খাত- বিশেষত হোম টেক্সটাইল কেন্দ্রিক হলেও, ভবিষ্যতের বাজার ও ব্যবসা সম্ভাবনা মাথায় রেখে ইতোমধ্যেই অন্যান্য খাতেও ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে এবং আরও স¤প্রসারণের পরিকল্পনাও নিয়েছে।
২০২৫ সালের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র, অটো ব্রিকস, কৃষি-ভিত্তিক প্রকল্প, সিমেন্ট ও ইস্পাত শিল্প এবং ২০৩০ সালের মধ্যে আবাসন খাতে ব্যবসা বৈচিত্র্যকরণের পরিকল্পনা করছে সাদ-মুসা।
মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে নতুন কয়েকটি খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ হলে গ্রুপটিতে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। বর্তমানে আমাদের ২৭টি শিল্প ইউনিটে কর্মসংস্থান প্রায় ১২ হাজার। সম্প্রসারণ পরিকল্পনার অধীনে, ডালডা, ভেজিজেটেবল অয়েল এবং অন্যান্য তেল উৎপাদনে ৩০ মিলিয়ন ডলার, ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এইচএফও (হেভি ফুয়েল অয়েল) বিদ্যুতকেন্দ্রে ১৭৫ মিলিয়ন ডলার, পরিবেশবান্ধব অটো ব্রিকসে ২০ মিলিয়ন ডলার এবং কৃষি-প্রকল্পে ৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। প্রতিবছর ১০% হারে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকা সিমেন্ট শিল্পেও বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাদ মুসা গ্রুপ, যার জন্য শিকলবাহায় ২০ একর জমিও কিনেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে আনোয়ারায় ইস্পাত কারখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে, এজন্য আরও ২০ একর জমি কিনেছে। এই কারখানায় দৈনিক ১ হাজার টন ইস্পাত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কক্সবাজারে সাত তারকা মানের অবকাশকেন্দ্র এবং আবাসন খাতেও বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে গ্রুপটি।
২০১৬ সালে সুলতানা হাবিবা ফ্যাব্রিক্স মিল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় সাদ-মুসা। ওই সময় আইসিবি মিলটিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। সুলতানা হাবিবা ফ্যাব্রিক্স মিলের জন্য ঋণমঞ্জুরির মাধ্যমে ৪৮৫ কোটি টাকার অনুমোদন দেয়। নিজেরা বিনিয়োগের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক থেকে ৮৯০ কোটি টাকা ঋণ ব্যবস্থা করে দিতে লিড অ্যারেঞ্জারও ছিল আইসিবি। সবমিলিয়ে আইসিবি থেকে ১ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা ঋণের অনুমোদন পেয়েছিল সাদ-মুসা গ্রুপ। তবে পুঁজিবাজারের বাইরে বিনিয়োগের কারণে, আইসিবির ৪৮৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ বাতিল করা হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অনুমোদিত ঋণও বাতিল হয়ে যায়। মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ১,৩৭৫ কোটি টাকার ঋণ পাইপলাইনে থাকায় সাদ মুসা গ্রæপ নিজস্ব তহবিল ও অন্যান্য ব্যাংক থেকে ৭০০ কোটি টাকা নিয়ে ১২ লাখ বর্গফুটের মিলটির নির্মাণকাজ শুরু করে। তবে আইসিবির ঋণ মঞ্জুরি বাতিল হওয়ায় মেশিনারিজ আনা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় ব্যাংকগুলোর কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে নতুন টেক্সটাইল মিলটি নির্মাণে বিদেশি ঋণদাতাদের দ্বারস্থ হয় সাদ মুসা গ্রুপ। তাতে সাড়া দিয়ে চীন, বেলজিয়াম ও জার্মানিভিত্তিক কয়েকটি ব্যাংক যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৩২৫ মিলিয়ন ডলারের ঋণ দিতে রাজি হয়েছে।