সাদ্কাতুল ফিতর রোজার ত্রুটির প্রতিকার করে

10

আবু নাছের মুহাম্মদ তৈয়ব আলী

রমজানুল মোবারকের রোজা পালনকালে রোজার যাবতীয় দোষ-ক্রটি মোচনার্থে যে সাদকা আদায় করা হয় তা-ই সাদকাতুল ফিতর। রমজানের জন্য সাদকায়ে ফিতর হলো নামাযে সাহু সিজদার ন্যায়। নামাযের ত্রুটি যেমনি সাহু সিজদা দ্বারা পূর্ণ হয় তেমনি রমজানের রোজার অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি সাদকায়ে ফিতর দ্বারা পূর্ণ হয়। শরীয়তের পরিভাষায় রাসূলে পাক সাল্লালাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে নির্দেশিত ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রত্যেক সামর্থ্যবান তথা নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারীর জন্য অবশ্য পরিশোধযোগ্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সাদকাহ আদায় করাকে সাদকাতুল ফিতর বলা হয়। অবশ্য নেসাব পরিমান সম্পদ এক বছর থাকা শর্ত নয় যেমনটি জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য পূর্বশর্ত। রাসূলে পাক সাল্লালাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, বান্দার রোজা আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত সাদকাহ-ই ফিতর আদায় না করে। হানাফী মাজহাব মতে এ সাদকা আদায় করা ওয়াজিব।
পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ছোট-বড় এমনকি নিজের মালিকানাধীন ক্রীতদাস-দাসীর পক্ষ হতেও পরিবারের কর্তাকে এ সাদাকাহ্ আদায় করতে হয়। উপার্জনক্ষম বালেগ সন্তানের পক্ষ হতেও পরিবারের কর্তাকে এ সাদকাহ্ আদায় করতে হয়। উপার্জনক্ষম বালেগ সন্তানের পক্ষ থেকে তার অনুমতি সাপেক্ষে পরিবারের কর্তা সাদকাতুল ফিতর আদায় করবেন। ফিতরা ঈদের নামাজে যাওয়ার পূর্বে আদায় করা উত্তম। উল্লেখ্য যে, ফিতরার উপযুক্ত গরিব আত্মীয়-স্বজন দূরে অবস্থান করলেও তাদের জন্য ফিতরা আলাদা করে রেখে দিলে অসুবিধা নেই। সাদকাতুল ফিতর শুকনো খেজুর, কিসমিস, ভুট্টা, যব, চাউল এবং গম বা আটার সুনির্দিষ্ট পরিমাণে পরিশোধ করতে হয়। গম বা আটা ছাড়া অন্যান্য বস্তু দিয়ে এক সা’ এবং গম বা আটা দ্বারা হলে অর্ধ সা’ পরিশোধ করতে হয়। বর্তমানে মুসলিম দুনিয়ায় সাধারণত গমের পরিমাণ বা তার স্থানীয় বাজার মূল্য হিসেব করেই সাদকাতুল ফিতর আদায় করা হয়। বিশুদ্ধ তাহকিক মতে-ফিতরার ন্যূনতম পরিমাণ হলো অর্ধ সা‘ (২ কেজি পঞ্চাশ গ্রাম পরিমাণ গম, আটা বা সমমূল্য) সরকারিভাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন হতে বিজ্ঞ ওলামাগণ এবারের ফিতরা সর্বনিম্ম ৭৫ টাকা ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিজনের ফিতরা একজন মিসকিনকে দিতে বাধা নেই, প্রয়োজনে একজনের ফিতরা কয়েকজন গরীব মিসকিনকেও ভাগ করে দেয়া জায়েজ।
অতএব মুমিন মুসলমান বান্দারা মাসব্যাপী রোজা আদায়ে সর্বপ্রকার সাবধানতা অবলম্বন করার পরও রোজার ছোটখাট ক্রটি-বিচ্যুতি থাকা অস্বাভাবিক নয়। রোজাকে ক্রটি বিচ্যুতি মুক্ত করে রোজা কবুল হওয়ার জন্য একটি উত্তম পন্থা সাদকাতুল ফিতর। এটা আল্লাহ ও রাসূলের পক্ষ হতে বান্দাদের জন্য মহা নেয়ামত। তদুপরি পবিত্র ঈদ উদযাপনের প্রাক্কালে সমাজের গরিব নিঃস্ব, এতিম অসহায়দের মুখে হাসি ফুটানোর লক্ষে ইসলামের এ বিধান কতই উত্তম। এ জাকাত-ফিতরার অর্থ পেয়ে খুশি মনে পবিত্র ঈদের আনন্দে শরীক হতে পারে গরিব-দুঃখীজনের ছোটছোট শিশুরাও। হাদীস শরীফে রয়েছে সাদকা বালা মুসিবত দূর করে। অর্থাৎ দান সাদকার কারণে দানকারী বহু বিপদ হতে রক্ষা পায়। ইসলামের এ জাকাত, ফিতরা, সাদ্কা ইত্যাদি বাস্তবিকই সাম্য সৌহার্দ্য ও প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করে সমাজের সর্বস্তরে। আল্লাহ আমাদের ইসলামের এ সুন্দর বিধান বাস্তবায়নের তৌফিক দিন। আমিন