সাদাকালো টিভি এবং ভারতীয় চ্যানেল

14

 

১৯৭৬ সালে শ্বশুরবাড়িতে এলো সাদাকালো ১৭ ইঞ্চি টেলিভিশন। বসানো হলো ড্রইংরুমে।শুধু নিজেদের না আশেপাশের অনেকের জন্য বিনোদন। বিশেষত এ মাসের নাটক। প্রচারিত হতো বিকেলের দিকে পুরো তিনঘণ্টা। কি সব অসাধারণ নাটক! বাংলাদেশ টেলিভিশন। একটাই চ্যানেল। ১৯৭৭এর শেষের দিকে লিবিয়ায়। মাস ছয়েক পরে কেনা হল পুরনো ২৪ ইঞ্চির সাদাকালো টিভি। বেশ কয়েকটি চ্যানেল। লিবিয়ার চ্যানেলে সারাদিন গাদ্দাফির গুণকীর্তন। তবে মাসে একবার রাতে ঐতিহাসিক কাহিনী নিয়ে ইংরেজি ছায়াছবি। মিশরীয় চ্যানেল বিনোদনের প্রিয় মাধ্যম। ইসরায়েলের চ্যানেলে শুধু শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান। তখনই মনে হত- এই দেশ এগুচ্ছে। ভিসিআর তখন বাঙালি প্রবাসী জীবনের আরেক বিনোদন। ভাড়া করা হতো। যিনি ভাড়া করতেন তাঁর বাসায় মিলনমেলা। খাওয়াদাওয়া, কমপক্ষে দুটো ভারতীয় ছায়াছবি। বাসায় ফেরা হতো গভীর রাতে। দেশে এলাম আশির মাঝামাঝি। তখনও বাংলাদেশ টেলিভিশন বেশ জনপ্রিয়। বিশেষত সপ্তাহের নাটক এবং ধারাবাহিক নাটক। হুমায়ুন আহমেদের নাটক মানেই একসাথে বসে চরিত্রের মাঝে মিশে যাওয়া।সিনেমা হলের দর্শক কমছে। আমরা ভি সি আর এ দেখছি ভারতীয় ছায়াছবি। মোড়ে মোড়ে তখন ভিডিও ক্লাব। হারিয়ে যাচ্ছে লাইব্রেরি। ১৯৯১সালের মহা প্রলয়ের পরে এর জনপ্রিয়তা একেবারে তুঙ্গে। ১৯৯৯ এর অক্টোবরে বেসরকারি চ্যানেল- চ্যানেল আই। এরপরে একুশে টিভি এবং ধীরে ধীরে আরও অনেক। বিদেশি চ্যানেলএ ছিলো বিবিসি এবং সিএনএন।কোনও এক সময়ে ভারতীয় চ্যানেলের প্রচার। নিয়ে এলো সর্বনাশা ঢেউ। বিশেষত সিরিয়ালে আসক্তি এবং শিশুদের মোটু পাতলু। নারীদের আসক্তি বিভিন্ন সিরিয়ালে এবং ক্রাইম চ্যানেলে সম্ভবত উঠতি বয়সের কিশোরের। একুশ শতকে এসব চ্যানেল গ্রামেগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায়। এরই সাথে বেড়ে গেলো নৈতিক অবক্ষয়জনিত সামাজিক সমস্যা। পণ্য সভ্যতার মোহে আকৃষ্ট শুধু শহরের না গ্রামের নাগরিক সমাজের অনেকে। এখন হঠাৎ বন্ধ হয়েছে ভারতীয় চ্যানেল। স্বস্তি এলেও মনে হচ্ছে কেবলি সময়ের অপেক্ষা। আবারও শুরু হবে। মোবাইলে এখন ইউটিউবের অফারও পাচ্ছি। অর্থাৎ ইচ্ছে করলেই দেখা যায়। একবার যে স্রোতে ভাসছি আমরা তা সহজে বন্ধ হবেনা। আর আমরা সামাজিক সমস্যার নানা ভয়াবহ চিত্রের সাক্ষী হতে থাকবো।