সাতকানিয়ায় সন্ত্রাসের নেপথ্যে বহিরাগত ভাড়াটিয়া

62

শহীদুল ইসলাম বাবর, সাতকানিয়া

সাতকানিয়ার নলুয়া ইউনিয়নের মরফলা বোর্ড অফিস কেন্দ্র। সকাল আটটা থেকে শুরু হওয়া ভোট গ্রহণের কার্যক্রম বেশ সুন্দরভাবেই চলছিল। কেন্দ্রে নীরবে ভোটগ্রহণ আর কেন্দ্রের বাইরে বিরাজ করছিল উৎসব মুখর পরিবেশ। কিন্তু হঠাৎ করে দমকা হওয়ার মত কিছু লোক লাঠিসোঁটা, রামদা, কিরিচ নিয়ে ভোট কেন্দ্রের বাইরে মানুষের মাঝে আতংক ছড়িয়ে দেয়। এসময় তারা ভোট কেন্দ্রের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্কুল ছাত্র তাসিফ (১২) কে কুপিয়ে হত্যা করে।
কারা করলো এমন ঘটনা? প্রত্যক্ষদর্শীদের এক উত্তর, বহিরাগত লোকজনই আচমকা এসে এমন জঘন্য কাজটি করেছে। তাসিফের স্বজনদের অনেকেই নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা লিয়াকত আলীর সমর্থক। তাদেরই একজন কৃষক লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই (বোর্ড অফিস) কেন্দ্রটি ছিল অনেকটা আমাদের দখলে, ভোটারদের চেয়ারম্যানের ব্যালট পেপারটি দেয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে কারো প্রতিবাদও নেই। শুধুমাত্র মেম্বার প্রার্থীদের ব্যালটটিতেই পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিচ্ছে ভোটাররা। এমন সময় দমকা হাওয়ার মত আচমকা কিছু লোক এসে আতংক তৈরি করে শিশু তাসিবকে হত্যা করলো। হামলাকারীরা কারা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিজয় নিশ্চিত করতে অনেক প্রার্থীই বহিরাগতদের সমাবেশ ঘটিয়েছে। তারাই আতংক তৈরি করবার জন্য এমনটি ঘটিয়ে থাকতে পারে।
বখাটে টাইপের শতাধিক যুবক অবস্থান নিয়ে বাজালিয়া ইউনিয়নের বোর্ড অফিস কেন্দ্রটির পশ্চিম দিক থেকে ভোটারদের আসতে বাধা দেয়া হচ্ছিল- বার বার এমন অভিযোগ ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী শহীদুল্লাহ চৌধুরীর। দুপুর ১২ টার দিকে আরেকটি গ্রæপ শঙ্খনদ পার হয়ে ভোটারদের বাধা দেয়া যুবকদের (অপরিচিত) উপর হামলা করে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আব্দুস শুক্কুর নামের একজনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে কেরানীহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাতকানিয়ায় তার কোনো স্বজন না থাকায় তাকে হাসপাতালে এনেছিলেন মোহাম্মদ মুন্না ও হৃদয় নামের যুবকদ্বয়। তারা জানান, নিহত শুক্কুর থাকেন নগরীর শুলকবহর এলাকায়। নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচণে প্রভাব বিস্তারের জন্য নিহত শুক্কুরসহ ১০০ জন যুবক এসেছিলাম। আমরা একটি কেন্দ্রে অবস্থান নিলে অপর প্রার্থীর লোকজন আমাদের উপর হামলা চালায়। এতে শুক্কুর নিহত ও আরো ৭ জন আহত হয়। আহতদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এছাড়াও খাগরিয়ার ঘটে দুই প্রার্থীর পক্ষের লোকজনের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ঐ দৃশ্য ধরা পড়ে সাংবাদিকদের ক্যামেরায়। অস্ত্র হাতে বীরত্ব প্রদর্শন করা অনেকেই বহিরাগত বলে ধারণা করছেন এলাকার মানুষ। ভোটের আগের দিন থেকে বহিরাগতদের এলাকা ছাড়ার স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও শত শত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এড়িয়ে অস্ত্রবাজীতে লিপ্ত হওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসীর পাশাপাশি বেশ চিন্তিত প্রশাসনও।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুল জলিল বলেন, সন্ত্রাসমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের প্রচেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। আমরা ভোটের আগের রাতে অস্ত্রসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছিলাম। তাদের আজ (মঙ্গলবার) আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অস্ত্রবাজীতে জড়িতদের ফুটেজ আমরা যাচাই-বাছাই করছি। বহিরাগতসহ অস্ত্রবাজী করা সন্ত্রাসীদের পরিচয় সনাক্ত করে দ্রæত গ্রেপ্তার করা হবে।
নিহত শুক্কুরের বিষয়ে তিনি বলেন, শুক্কুরের বাড়ি সাতকানিয়ায় নয়। আমরা তার রেকর্ড পর্যালোচনা করে তার বিরুদ্ধে বোয়ালখালী থানায় একটি ডাকাতি মামলা পেয়েছি। তার বিষয়ে আরো জানার চেষ্টা করছি।
সহিংস খাগরিয়ায় অভিযানে অস্ত্রসহ আটক ১
এদিকে সাতকানিয়ার খাগরিয়ায় অস্ত্রসহ একজনকে আটক করে পুলিশ। এসময় একটি লম্বা বন্দুক ছাড়াও চাপাতি, ছুরি ও ৩টি লোহার টুকরো উদ্ধার করা হয়। পুলিশের দাবি, নির্বাচনের দিন এ আগ্নেয়াস্ত্র ভোট কেন্দ্রে গোলাগুলিতে ব্যবহৃত হয়েছে। আটক ব্যক্তির নাম জসিম উদ্দিন (৪২)। তিনি খাগরিয়া এলাকার ছৈয়দ আহমদের ছেলে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার খাগরিয়ার ৪নং ওয়ার্ড এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
তবে নির্বাচনী সহিংসতায় পৃথক ঘটনায় দু’জন নিহতের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানান ওসি আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন খাগরিয়ায় ভোট কেন্দ্রের বাইরে যেসব অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে ছবি ও ভিডিও দেখে আমরা তাদের সনাক্ত এবং গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি কেউ।
অন্যদিকে উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন চৌধুরী। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে সোনাকানিয়ার মির্জাখীল বাংলাবাজার এলাকায় ভোটকেন্দ্র দখল করে ফলাফল পরিবর্তনের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়।