সাতকানিয়ায় পানি নামছে ধীরগতিতে

22

সাতকানিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমে উন্নতি হচ্ছে। ভেসে উঠতে শুরু করেছে তলিয়ে যাওয়া জনপথ। গত রবিবার পর্যন্ত সর্বশেষ প্রায় চার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী থাকলেও পানি কমতে শুরু করায় এ সংখ্যা কমে এখনও দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিতে বন্দী অবস্থায় রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারি বেসরকারি উদ্যেগে রান্না করা খাবার ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বানভাসী লোকজন।


কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের কেরানীহাট থেকে দস্তিদার হাট পর্যন্ত সড়কের পানি কমলেও সত্যিপীরের মাজার এলাকা ও বাজালিয়া ইউনিয়নের মাহালিয়া রাস্তার মাথা এলাকায় সড়ক এখনো কোমর সমান পানির নিচে থাকায় বান্দরবানের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করে সাতকানিয়াকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন। ১০ জুলাই মাহালিয়া রাস্তার মাথা এলাকায় সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্যার্তদের সেবা দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যেগে ভ্রাম্যমাণ টিম গঠন করা হয়েছে। গতকাল বিভিন্ন ইউনিয়নে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর উদ্দিনের নেতৃত্বে ডা. হারুনুর রশিদসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বেশ কয়েকটি এলাকায় চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন।
গতকাল সোমবার উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়ায় বন্যার পানির স্রোতে দ্বিতল বিশিষ্ট একটি পাকা দালান ধসে পড়ে। বাড়িটি স্থানীয় খলিলুর রহমান সওদাগরের। এর আগেও মোস্তাফিজুর রহমান নামের আরেক ব্যক্তির বসতঘরও ধসে যায়।
জানা যায়, ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ভারী বর্ষণের ফলে সাতকানিয়ায় কেওচিয়া, ঢেমশা, পশ্চিম ঢেমশা, বাজালিয়া, পুরানগড়, ধর্মপুর, কালিয়াইশ, খাগরিয়া, নলুয়া, আমিলাইশ, কাঞ্চনা, এওচিয়া, চরতী, পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। পানি উঠে উপজেলা পরিষদ, আদালত ভবন, থানা ভবন, সাতকানিয়া কলেজ, সাতকানিয়া আদর্শ মহিলা কলেজ, জাফর আহমদ চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ, বাজালিয়া অলি আহমদ বীর বিক্রম ডিগ্রি কলেজসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি বেসরকারি কার্যালয়ে। ডুবে যায় উপজেলার সবচেয়ে উঁচু এলাকা হিসেবে পরিচিত কেরানীহাটও।
তবে গত রবিবার রাত থেকে পানি কমতে শুরু করে। গতকাল সোমবার রাত ৯টা খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেরানীহাট থেকে দস্তিদার হাট পর্যন্ত সড়ক থেকে সম্পূর্ণরূপে পানি নেমে গেছে। সড়কের আশপাশ উঁচু এলাকা থেকে পানি কমলেও নিচু এলাকার অন্তত ২ লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দী রয়েছে। বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাপস দত্ত জানান, বাজালিয়া ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। তাদের জন্য সরকারি পক্ষ থেকে ৮ মে. টন চাল ও সাড়ে ৪শ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়। ঐ ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়ায় খলিল সওদাগরের দ্বিতলা বিশিষ্ট দালান বন্যার পানির স্রোতে সম্পূর্ণ রূপে ধসে যায়। গতকাল বিকালে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান মোল্লা ধসে যাওয়া বাড়ি ও বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। আমিলাইষ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এইচ এম হানিফ জানান, ইতোমধ্যে আমিলাইষে ২১টি বসতঘর শঙ্খনদে বিলীন হয়ে গেছে। গৃহহারা হয়েছে ৫ শতাধিক পরিবার। গৃহহারা মানুষগুলো স্কুল, মাদ্রাসা ও আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। সরকারিভাবে ৯ মে. টন চাল, ৬শ প্যাকেট শুকনো ও রান্না কারা খাবার বানভাসীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু তাহের জিন্নাহ জানান, তার ইউনিয়নের মোট ৬টি ওয়ার্ড এখনো পানির নিচে ডুবে রয়েছে। ৮০ শতাংশ মানুষ গৃহহীন ও পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, দুর্যোগকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন আশ্রয় নেওয়ার জন্য একটি সাইক্লোন সেল্টার অনুমোদন ও টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু এখনো কাজ শুরু হয়নি। এটির কাজ শুরু করে দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানান তিনি। সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, সাতকানিয়ার বানভাসি মানুষদের জন্য বন্যা কবলিত সবকটি ইউনিয়নে ত্রাণ হিসেবে চাল, শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। আরো সাহায্য আমরা চেয়েছি। সব মিলিয়ে ৯৫ মে. টন চাল, সাড়ে ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়। আগামীতে আরো ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।
৪ দিন ধরেই অচল শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করায় গত চারদিন ধরেই অচল রয়েছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিম শরীফ জানান, সাতকানিয়া পৌরসভাসহ উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ রয়েছে। সাতকানিয়া সরকারি কলেজ, সাতকানিয়া আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজ, জাফর আহমদ চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ ও বাজালিয়া অলি আহমদ বীর বিক্রম কলেজসহ মাধ্যমিক পর্যায়ের অন্তত ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় বেশ কয়েকদিন থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ। এদিকে সাতকানিয়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সামশুল হক জানান, সাতকানিয়ার ১শ ৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শতাধিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় ৩ দিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করা যাচ্ছে না। গতকাল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমলেই এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে।