সাতকানিয়ায় পানিবন্দী দুই লক্ষাধিক মানুষ

56

সাতকানিয়ায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দী রয়েছেন ৫০ হাজার পরিবারের অন্তত দুই লক্ষাধিক মানুষ। পৌরসভাসহ উপজেলার সবকটি ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তা পানির নিচে থাকায় এসব এলাকার মানুষ মূলত গৃহবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। বসতঘরে পানি প্রবেশ করায় এসব এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় চন্দনাইশ-উত্তর সাতকানিয়ার সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের পক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ত্রাণ তৎপরতা দেখা গেলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
বাজালিয়া ইউনিয়নের মীরের পাড়া নামক স্থানে শঙ্খনদের বাঁধের উপর দিয়ে ব্যাপক পানির শ্রোত লোকালয়ে প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। অনেকে ঐ এলাকায় নদের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে বলে ধারণা করছেন। গতকাল শুক্রবার বিকালে নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইব্রাহীম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দুরদানা ইয়াছমিন ঐ এলাকা পরিদর্শন করেন। বাজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্ত ও ইউপি সদস্য সামশুল ইসলাম বলেন, ঐ এলাকায় বেশ কয়েকটি বসতঘর পানির স্রোতে ভেঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে।
গতকালও বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন।
এমন বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে গতকাল চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথম পর্যায়ে বাজালিয়া বড়দুয়ারা মাহালিয়া এলাকায় সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে বান্দরবানের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও গতকাল দস্তিদার হাট এলাকায় দুই পয়েন্টে সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
এদিকে উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নে চাচার সাথে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে তলিয়ে গিয়ে মো. সামিম (৭) নামের এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।
জানা যায়, চাচা মাহমুদুল হকের সাথে সামিম ও অভি (৯) মাছ ধরতে গিয়ে হঠাৎ সামিম ও অভি পানিতে পড়ে যায়। দুই ভাই পানিতে পড়ে গেলে বড় ভাই অভিকে উদ্ধার করতে পারলেও ছোট ভাই মো. সামিমকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সকাল এগারটা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত স্থানীয়রা পুকুরে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে ব্যর্থ হলে পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে সন্ধ্যা ছয়টায় সামিমের লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
মো. সামিম ঐ এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে। সে সাতকানিয়া পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ১ম শ্রেণির ছাত্র।
জানা যায়, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সাতকানিয়ার কেওচিয়া, বাজালিয়া, পুরানগড়, ছদাহা, পশ্চিম ঢেমশা, ঢেমশা, নলুয়া, আমিলাইশ, চরতী, সাতকানিয়া পৌর এলাকাসহ আরো বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। এসব এলাকার শত শত মৎস্য প্রজেক্টের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ায় মাছচাষীদের ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকা। সবজি চাষীদেরও ক্ষতি হয় ব্যাপক। সাতকানিয়া সরকারি কলেজ, সাতকানিয়া আদালত, সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপজেলা পরিষদের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। অন্তত ৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা ও কলেজের কার্যক্রমও।
চরতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. রেজাউল করিম জানান, চরতী দুরদুরী সড়কটি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও মধ্যম চরতী, দক্ষিণ চরতীর (বৈলতলীর অংশ) উত্তর ব্রাক্ষনডেঙ্গা, দক্ষিণ তুলাতলী, দক্ষিণ চরতী এলাকার অন্তত ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
উত্তর সাতকানিয়া যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী জানান, শুক্রবার বিকালে এমপি নজরুল ইসলাম চৌধুরী কেওচিয়া, বাজালিয়াসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ করেন। এখনো কেওচিয়ার ১-৮নং ওয়ার্ডের প্রায় সবকটি সড়কই পানির নিচে। আরো ব্যাপক সহায়তা দরকার।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইব্রাহীম চৌধুরী ও দুরদানা ইয়াছমিনসহ আমি বাজালিয়া, কালিয়াইশ, চরতীসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন সরেজমিন পরির্দশন করেছি এবং ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছি। তবে আরো ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালানো দরকার।