সাঙ্গু নদীতে রথ বিসর্জনে সমাপ্ত প্রবারণা উৎসব

8

বান্দরবান প্রতিনিধি

বান্দরবানে সাঙ্গু নদীতে রথ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হল প্রবারণা উৎসব। শুক্রবার মধ্যরাতে সাঙ্গু নদীতে রথ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ স¤প্রদায়ের এই প্রবারণা উৎসব শেষ হয়। বুধবার থেকে দুইদিন ব্যাপী বান্দরবানে মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ওয়াগ্যোই পোয়ে বা প্রবারণা পূর্ণিমা শুরু হয়। প্রবারণা উৎসবে বান্দরবানের বিভিন্ন ক্যাংয়ে ছোয়াইং দান (খাবার প্রদান), হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও রাতে মারমা পল্লীতে ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরি, রথযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফানুস বাতি ওড়ানোর উৎসবে মেতে উঠেছিলো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। এছাড়া উৎসবের প্রধান আকর্ষণ বাঁশের তৈরি একটি রথ (পাখি সদৃশ)। যুবক-যুবতীরা এতিহ্যবাহী মার্মা গানের সাথে রথটি টেনে বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার প্রদক্ষিণ করে এবং রথের মধ্যে মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে উৎসবের শেষে সাঙ্গু নদীতে বিসর্জন দেয়। আর এ উৎসব আয়োজনের লক্ষে প্রতিটি ক্যাং ও পাহাড়ি পল্লীতে মারমা যুবক-যুবতিরা দলবেঁধে তৈরি করছে নানা রঙের ফানুস বাতি, রথ ও বেতের তৈরি নানা সামগ্রী। সন্ধ্যায় উৎসবে সহস্রাধিক রং বেরংয়ের ফানুস ও আতশবাজির ঝলকে রঙিন হয়ে ওঠে বান্দরবানের আকাশ। জাতিগত ভেদাভেদ দূরে সরিয়ে সকল সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে সৃষ্টি হয় এক অপূর্ব দৃশ্য। উপস্থিত সবার মুখে উচ্চারিত হতে থাকে ধর্ম যার যার উৎসব সবার।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শুক্রবার মধ্যরাতে সাংগু নদীতে ময়ূর সদৃশ রথ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই প্রবারণা উৎসবের। ‘ছংরারাসিহ্ ওয়াগ্যোয়াই লাহ্ রাথা পোয়েঃ লাগাইমে’ (সবাই মিলেমিশে রথ যাত্রায় যাই) এ বিশেষ মারমা গান গেয়ে মহারথ নিয়ে সাংগু নদীর তীরে পৌঁছে রথযাত্রা। পাংখো নৃত্যের তালে তালে রথে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং নগদ অর্থদানে অংশ নেয় শত শত মারমা তরুণ-তরুণী ও পুণ্যার্থীরা। এর আগে ‘সত্য-সুন্দর ও ন্যায়কে বরণ এবং অশুভকে বর্জন’ বাণীকে বুকে ধারণ করে বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠে উদযাপিত হয় ফানুস উৎসব।
ফানুস উৎসবের উদ্বোধন করেন পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কাজল কান্তি দাশ, পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র সৌরভ দাশ শেখর, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অমল কান্তি দাশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আব্দুল আজিজ, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মো. ইয়াছির আরাফাত, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অজিত কান্তি দাশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তগণ।
অপরদিকে ফানুস বাতি ওড়ানো অনুষ্ঠানে পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এমনই বিশ্বাস করেন স¤প্রীতির বান্দরবানের এগারটি আদিবাসী জনগোষ্ঠির মানুষ ও স্থানীয় বাঙালিরা। তাইতো বর্তমান সরকারের আমলে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে সকলের মধ্যে স¤প্রীতির এক অটুট বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যেক স¤প্রদায় এখন তাদের উৎসব নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সকলের সাথে একত্রে পালন করছে।