সাঙ্গু ও মাতামুহুরি সেতুতে গাড়ি চলবে ঈদের আগেই

146

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া মাতামুহুরি সেতু ও চন্দনাইশের সাঙ্গু নদীর উপর নির্মিত সাঙ্গু সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে আগামি ঈদ-উল আযহার আগেই। ইতোমধ্যে মাতামুহুরি সেতুর কাজ ৯০ শতাংশ এবং সাঙ্গু সেতুর কাজ ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ দুটি সেতু চালু হওয়ার পর আরও দুইটি সেতু পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন।
বর্তমানে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ছয় লেনবিশিষ্ট ৪টি নতুন সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ক্রমান্বয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে সেতুগুলো। আর এ চার সেতুতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫১ কোটি ৮ লক্ষ টাকা। যার মধ্যে দোহাজারীর সাঙ্গু সেতুতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা এবং চকরিয়ায় মাতামুহুরি সেতুতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫২ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা।
গতকাল শনিবার কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে পূর্বদেশকে নিশ্চিত করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রূভমেন্ট প্রকল্পের ব্যবস্থাপক জুলফিকার আহমেদ।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে পটিয়ার ইন্দ্রপুল, চন্দনাইশের বরুমতি খাল ও দোহাজারী সাঙ্গু নদী, চকরিয়ার মাতামুহুরিসহ ৪টি সেতু ছয় লেইনবিশিষ্ট হলেও যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে সাঙ্গু ও মাতামুহুরি সেতু প্রথমে তিন লেইনের কাজ সম্পন্ন করে আগামি জুলাই মাসে ঈদ-উল আযহার আগেই যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। পরবর্তীতে পটিয়ার ইন্দ্রপোল ও বারুমতি খালের সেতুও উন্মুক্ত করা হবে।
পটিয়ার ইন্দ্রপোলের সেতুতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা, চন্দনাইশের বারুমতি খালের মাজার পয়েন্ট সেতুতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা, দোহাজারীর সাঙ্গু সেতুতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা এবং চকরিয়ায় মাতামুহুরি সেতুতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫২ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা।
এছাড়াও বিদ্যমান পুরনো সেতুগুলো ভেঙে বাকি তিন লেইনের কাজ করা হবে। আগামি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ঐ সেতুর বাকি তিন লেইনের কাজও সম্পন্ন হবে বলে জানা গেছে। তবে চন্দনাইশ উপজেলার বরুমতি খালের উপর মাজার পয়েন্ট সেতুর ছয় লেইনের কাজ সম্পন্ন করে আগামি জুলাই মাসের শেষের দিকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। চারটি সেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে স্প্রেক্টা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) বেশির ভাগ আর্থিক সহায়তায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ছয় লেইনের চারটি নতুন সেতু নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। সরকার ও জাইকার যৌথ অর্থায়নে ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রূভমেন্ট প্রকল্পের অধীনে নির্মাণাধীন ছয় লেইনের চার সেতুগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়ক এন-১ এ ২৫ কিলোমিটারে পটিয়া ইন্দ্রপুল সেতু। এটি ৬০ মিটার লম্বা ও ৩১.২০ মিটার চওড়া। ৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ চন্দনাইশের বারুমতি খালের মাজার পয়েন্ট সেতু ৬০.১৫ মিটার লম্বা ও চওড়া ৩১.২০ মিটার। ৪৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারীতে অবস্থিত সাঙ্গু নদীর ওপর স্থাপিত সেতুটি ২৩৮ মিটার লম্বা ও ৩১.২০ মিটার চওড়া। অন্যদিকে ১০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর ওপর স্থাপিত মাতামুহুরী সেতু ৩২১ মিটার লম্বা ও ৩১.২০ মিটার চওড়া।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত এসব সেতু ও কালভার্টের দুই পাশে হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রূভমেন্ট প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. জুলফিকার আহমেদ জানান, চন্দনাইশ উপজেলায় সাঙ্গু নদীর উপর নির্মিত সাঙ্গু সেতুর সাতটি পিলারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। পিলারের উপর গার্ডার বসানো শেষে স্ল্যাব বসানোর কাজও সম্পন্ন হয়েছে। অর্থাৎ কাজের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ শেষ। ঈদের আগেই গাড়ি চলাচল করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, চন্দনাইশ উপজেলায় বরুমতি খালের ওপর মাজার পয়েন্ট সেতুর পিলার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পুরোদমে চলছে গার্ডার ও স্ল্যাব এবং এপ্রোচ সড়কের কাজ। অপরদিকে পটিয়া উপজেলার ইন্দ্রপুল সেতুর তিন লেইনের পাইলের কাজ শেষে এখন চলছে পিলার নির্মাণের কাজ। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া মাতামুহুরি নদীর ওপর মাতামুহুরি সেতুর আটটি পিলারের সবক’টির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে স্ল্যাব বসানোর কাজ। আগামি জুন মাসের মধ্যে সাঙ্গু, মাতামুহুরি সেতুর তিন লেইন যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। পরে বিদ্যমান পুরনো সেতুগুলো ভেঙে বাকি তিন লেইনের কাজ শেষে আগামি ডিসেম্বরের মধ্যে তিন সেতুর ছয় লেইন দিয়েই যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
অপরদিকে চন্দনাইশ উপজেলার মাজার পয়েন্ট সেতু ও পটিয়ার ইন্দ্রপোল সেতুর কাজ একেবারে সম্পন্ন করে পর্যায়ক্রমে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতসমৃদ্ধ পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে ঘিরে কয়েকটি মেগা প্রকল্প দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন করছে সরকার। এসব প্রকল্পকে ঘিরে দেশি-বিদেশি পর্যটকের পদচারণা বেড়েই চলেছে। তাদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। পর্যটন খাতের ব্যবসার প্রায় পুরোটাই নির্ভরশীল এ সড়ককর উপর।