সাগরে লঘুচাপ ঘনীভূত বাড়তে পারে বৃষ্টিপাত

10

আশ্বিনের শুরুতে তাপদাহের মধ্যেই উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ ঘনীভূত হয়েছে। অনুকূল পরিবেশে সেটি নিম্নচাপেও রূপ নিতে পারে। এর প্রভাবে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। একইসাথে উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু প্রবলভাবে সক্রিয় হয়ে উঠায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে উপকূলে ঝড়ো হাওয়ার গতি বাড়বে। এজন্য দেশের সমুদ্রবন্দরসমূহ ও উপকূলে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক সর্বশেষ আবহাওয়া পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পূর্বদেশকে জানান, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় রয়েছে এবং গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, মোংলা, ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহ এবং কক্সবাজার উপকূলে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থাগুলো বিদ্যমান তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে বলছে, লঘুচাপের পাশাপাশি দেশের ওপর একটি পূর্ণাঙ্গ শক্তিশালী বৃষ্টিবলয়ও সক্রিয় হয়েছে। এর প্রভাবে গত শনিবার দিবাগত রাত থেকেই দেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো বাতাসসহ বৃষ্টি শুরু হয়। প্রথমে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের বেশকিছু স্থানে এবং তারপর খুলনা বিভাগ, যশোর ও ঝিনাইদহসহ এর আশপাশের এলাকাগুলোর অনেক স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ অবস্থান করায় উত্তর বঙ্গোপসাগর কিছুটা উত্তাল রয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বায়ুপ্রবাহ বৃদ্ধি পেতে দেখা যাচ্ছে। গতকাল রবিবার থেকেই ধীরে ধীরে দেশের অভ্যন্তরে মেঘের প্রবেশ ঘটতে শুরু করেছে এবং আজ সোমবার থেকে দক্ষিণাঞ্চলের পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের অনেক স্থানে আকস্মিক বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাবে। এতে চলমান দাবদাহ অনেকটা কমে আসবে।
সরকারি আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা বা দৃশ্যপটে বলা হয়েছে, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর সক্রিয়, দেশের অন্যত্র মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে। আর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনাা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া, টাঙ্গাইল, নিকলি, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর এবং সৈয়দপুর অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি কিছু কিছু এলাকায় প্রশমিত হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী আটচল্লিশ ঘণ্টা বা দু’দিনের বৃষ্টিপাতের প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।
অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে গতকাল রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় সিলেট, ময়মনসিংহ ও খুলনা বাদে বাকি সব বিভাগের কোনও কোনও অঞ্চলে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে বরিশালে দেশের সর্বোচ্চ ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর দিনাজপুরে দেশের সর্বোচ্চ ৩৭ দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম বিভাগের টেকনাফ বাদে বাকি সব অঞ্চলেই বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে কুতুবদিয়ায়। এছাড়া, চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের এলাকায় ২০ মিলিমিটার, সীতাকুন্ড ১৭, রাঙামাটিতে ১৮, হাতিয়ায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে অধিদপ্তর। চট্টগ্রাম বিভাগজুড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ আগের দিন থেকে খানিকটা নিচে নেমে ৩০ থেকে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরেই উঠানামা করেছে।
এর আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের সেপ্টেম্বর মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, এ মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি মৌসুমি বৃষ্টিপাতজনিত কারণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি বর্ষাকালীন লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি বর্ষাকালীন নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। মৌসুমি বৃষ্টিপাতজনিত কারণে সেপ্টেম্বর মাসে দেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কতিপয় স্থানে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।