সাগরে লঘুচাপের ঘনঘটা

26

তুষার দেব

বর্ষপঞ্জিকার পাতায় বিদায় নিয়েছে শ্রাবণ। সোমবার থেকে যাত্রা শুরু হয়েছে ‘তালপাকা’ ভাদ্রের। তবে আবহাওয়ায় বিরাজমান পরিস্থিতিতে দেশের স্থলভাগে মৌসুমি বায়ু এখনও সক্রিয় রয়েছে। আর উত্তর বঙ্গোপসাগরে তা বিরাজ করছে মাঝারি অবস্থায়। এই অবস্থায় ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপক‚লের অদূরে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে, বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার টেকনাফ উপক‚ল দিয়ে দেশের স্থলভাগে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু যেমন কিছুটা আগেভাগেই প্রবেশ ও বিস্তার লাভ করেছে, তেমনি ক্যালেন্ডারের পাতায় বিদায় নিলেও মৌসুমি বায়ু বা বর্ষার আনুষ্ঠানিক বিদায়ও খানিকটা দেরিতেই হতে পারে। এমনকি মৌসুমি বায়ু পুরোপুরি বিদায় নিতে আগামী অক্টোবরের প্রথম পক্ষ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. আফতাব উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুুমি বায়ুর অক্ষের একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।
অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে বর্ষার শেষ সময়ে এসে সাগরে লঘুচাপের প্রবণতা বেড়েছে। এ সময় মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণও হচ্ছে। বিদায়ী জুলাই মাসে তিনটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয় সাগরে। যার মধ্যে একটি নিম্নচাপে রূপ নেয়। ওই সময়ের মধ্যে গত ২৭ জুলাই টেকনাফে সর্বোচ্চ তিনশ’ ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিবেচনা করেচলতি আগস্ট মাসেও দুটি মৌসুমি লঘুচাপের আভাস দিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময়ের মধ্যে ভারী বর্ষণে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের কিছু জায়গায় স্বল্পমেয়াদী বন্যার শঙ্কা রয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে জুলাইয়ের শুরুতে সারাদেশে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হয়েছে। ২৭ থেকে ৩০ জুলাই মৌসুমি নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালের অনেক জায়গায় অতি ভারী বর্ষণ হয়। এ সময় চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে বিশেষ করে কক্সবাজারে ভূমিধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এর আগে গত ১১ জুলাই, ২২ জুলাই ও ২৭ জুলাই সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। তার প্রভাবে বৃষ্টিপাতের প্রবণতাও বাড়ে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী চব্বিশ ঘন্টার জন্য প্রচারিত পুর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তি চব্বিশ ঘন্টায় ঢাকা বিভাগের ফরিদপুরে দেশের সর্বোচ্চ ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও বিক্ষিপ্তভাবে কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
বাংলা বর্ষপঞ্জিকায় নির্ধারিত দিন-ক্ষণ ও ঋতুচক্রের হিসাব অনুযায়ী, মধ্য জুন থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়কালকে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস গণনা করা হয়। আর কাগজে-কলমে ১২ মাসে ছয় ঋতুর মধ্যে আষাঢ়-শ্রাবণের সময়কালকে ‘বর্ষা ঋতু’ ধরা হয়। আবহাওয়াবিদরা অবশ্য মৌসুমি বায়ুর অবস্থানের সময়কালকে বিবেচনায় নিয়েই বর্ষার হিসাব করেন। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু যেদিন সমুদ্র-উপক‚ল দিয়ে দেশের স্থলভাগে প্রবেশ করে, সেদিন থেকেই বর্ষাকাল গণনা করেন আবহাওয়াবিদরা। প্রতিবেশি ভারতের কেরালা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হয়েই সমুদ্রকন্যা কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী টেকনাফ উপক‚ল দিয়ে দেশের স্থলভাগে মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটে। দীর্ঘ এই অঞ্চলজুড়ে কমবেশি প্রায় তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত অবস্থান শেষে ধীরে ধীরে মৌসুমি বায়ুর বিদায় ঘটে। এ বায়ুর অবস্থানকালীন সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ ও প্রতিবেশি ভারতের সীমান্ত অঞ্চলের রাজ্যগুলোতে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। প্রতি বছর জুনের মাঝামাঝিতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বা বর্ষার প্রবেশ ও বিস্তার ঘটলেও এবার ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ তার পালে হাওয়া দিয়েছে। এ কারণে খানিকটা আগে-ভাগেই গত ৬ জুন দেশের স্থলভাগে বৃষ্টিসমৃদ্ধ মৌসুমি বায়ুর প্রবেশ ঘটে। অনুক‚ল পরিবেশে তা এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশজুড়ে বিস্তার লাভ করে। মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করার শুরুতেই চট্টগ্রামসহ দেশের বেশ কয়েক জায়গায় অতি ভারী বর্ষণ হয়।
এর আগে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাস মেয়াদী পূর্বাভাসে আগস্ট মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে উল্লেখ করে বলা হয়, এ মাসে চট্টগ্রামে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পাঁচশ’ ৫৬ মিলিমিটার। তবে পূর্বাভাসে আগস্টে সম্ভাব্য বৃষ্টিপাতের পরিমাণ পাঁচশ’ থেকে ছয়শ’ ১০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে বলে জানানো হয়েছিল। একইভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে চলতি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ স্থিতিশীল থাকতে পারে জানিয়ে বলা হয়েছে, পরবর্তী সময়ে মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের কিছু স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। অপরদিকে উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অববাহিকার কিছু স্থানে স্বল্পমেয়াাদি আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আভাস দেয়া হয়েছিল।