সাগরে নিম্নচাপ আরো ঘনীভুত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে

4

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাল্গুনের শেষপক্ষে এসে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। এতে সাগর উত্তাল হওয়ার পাশাপাশি ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে এ খবর জানিয়ে দেশের সমুদ্রবন্দর ও উপক‚লীয় অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। শীত ঋতুর কাগজে-কলমে বিদায় এবং বসন্তের পথচলা শুরুর মৌসুমে সাগরে এটাই প্রথম নিম্নচাপ।
অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভ‚ত হয়ে গভীর নিম্নচাপ আকারে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ছ’টায় একই এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
এছাড়া, আজ রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘন্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের তাপমাত্রা প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। গভীল নি¤œচাপজনিত কারণে কোনো সঙ্কেত জারি করা না হলেও চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজার উপক‚লীয় এলাকার সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ১ হাজার ৬১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার উপকূল থেকে ১ হাজার ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা বন্দর থেকে ১ হাজার ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা বন্দর থেকে ১ হাজার ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে কেন্দ্রীভূত ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভাষ্যমতে, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ এবং সাগর উত্তাল থাকবে।
এদিকে, বসন্ত-বাতাসে ধীরে ধীরে চড়তে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। অবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সমুদ্র উপক‚লীয় সীমান্ত এলাকা কক্সবাজারের টেকনাফে দেশের সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। অধিদপ্তরের তিন মাস মেয়াদী জলবায়ু অবস্থায় বলা হয়েছে, মার্চ মাসে সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু’দিন মাঝারি থেকে তীব্র কালবৈশাখী ও বজ্রঝড় এবং অন্যত্র দুই থেকে তিনদিন হালকা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী বা বজ্রঝড় হতে পারে। এ মাসে দিনের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়ে ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে গিয়ে ঠেকতে পারে। তবে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। এরপর এপ্রিলে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নি¤œচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কালবৈশাখী ও বজ্রঝড় ছাড়াও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র এক থেকে দুটি মৃদু বা মাঝারি তাপদাহ বয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নামে বৈশাখ যুক্ত থাকলেও শীতের বিদায়ের পর ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, সমগ্র পূর্ব এবং উত্তরপূর্ব ভারতে যে ঝড় বয়ে যায়- তাই কালবৈশাখী। বাংলা বর্ষের শুরুতে মানে বৈশাখ মাসে এ ঝড় তুলনামূলকভাবে বেশি হয় বলেই এ ঝড় কালবৈশাখী নামে পরিচিত লাভ করেছে। কালবৈশাখীর আসল নাম ‘নর-ওয়েস্টার।’ অর্থাৎ উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে এই ঝড় ধেয়ে আসে বলে একে বলে ‘নর-ওয়েস্টার’। তাই বলে কালবৈশাখী শুধুমাত্র বৈশাখ মাসেই (১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত) দেখা যাবে-এমনটি নয়। কালবৈশাখী এবং সাধারণ ঝড়ের মধ্যে পার্থক্য বিচার করারও কিছু মাপকাঠি রয়েছে। মোটা দাগে বলা যায়, ঝড়ের গতিবেগ ঘন্টার ৫০ কিলোমিটারের বেশি এবং স্থায়ীত্ব অন্তত একমিনিট হলে সেটাই কালবৈশাখী ঝড়।
উল্লেখ্য, এশিয়া অঞ্চলের আবহাওয়াবিদরা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি এবং ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে গণনা করেন।