সাগরে জলদস্যুরা ফের বেপরোয়া

43

নিজস্ব প্রতিবেদক

এলিট ফোর্স র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর্যুপরি অভিযানের মুখে প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুরা ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে গত এক পক্ষকালের ব্যবধানে সাগরের কক্সবাজার ও মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেল এবং বরিশালের পাথরঘাটার বরগুনাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় অর্ধশত ফিশিং ট্রলারে লুটপাট চালিয়েছে জলদস্যুরা। এর মধ্যে বরগুনা এলাকায় গত ৯ ডিসেম্বর র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে অজ্ঞাতনামা এক দলদস্যু নিহত হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল বুধবার গভীর সাগরে টানা ছয় ঘণ্টা ধাওয়া এবং অভিযান চালিয়ে লুণ্ঠিত মালামাল ও দেশি অস্ত্রসহ ৪৩ জলদস্যুকে আটক করছে কোস্টগার্ড। গভীর সাগর থেকে জলদস্যুদের এত বড় একটি দলকে একসাথে আটক করতে পারার ঘটনা এটাই প্রথম বলে দাবি করেছে কোস্টগার্ড।
অভিযানে অংশ নেয়া কোস্টগার্ড পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মেহেদী গভীর সাগর থেকে জলদস্যুদের আটক করার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বুধবার দুপুরে চারটি বোটে করে গভীর সাগরে অবস্থানরত স্ক্র্যাপবাহী জাহাজ এমভি লাদিন্দায় হানা দেয় জলদস্যুদের বিশাল বহর। শিপিং এজেন্ট থেকে এমন অভিযোগ পেয়েই তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে রওনা দেয় কোস্টগার্ড জাহাজ শহীদ মনসুর আলী। এরপর টানা অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় ৪৩ জলদস্যুকে। জব্দ করা হয় লুণ্ঠিত মালামাল। অনেকটা চ্যালেঞ্জে নিয়েই গভীর সাগরে অভিযান চালাতে হয়েছিল কোস্টগার্ড সদস্যদের। জলদস্যুদের দলটি বড় হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই তাদের আটক করতে হয়েছে।
কোস্টগার্ড পূর্বাঞ্চলের গোয়েন্দা শাখার ইনচার্জ ও জনসংযোগ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট আবদু রউফ পূর্বদেশকে বলেন, আটককৃত জলদস্যুদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে গভীর সাগরে বিদেশি জাহাজে ডাকাতি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। বিদেশি জাহাজের এজেন্টসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে গভীর সাগর এবং বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানরত জাহাজের তথ্য জানিয়ে দেয়া হত জলদস্যুদের। বাংলাদেশের জলসীমায় আসা বিদেশি জাহাজের কর্মকর্তারাই জলদস্যুদের তথ্য সরবরাহ করত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন কোম্পানি জানান, সম্প্রতি সাগরে জলদস্যুদের অপতৎপরতা আবার বেড়েছে। ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বোট নিয়ে তারা ফিশিং ট্রলারসহ গভীর সাগরে অবস্থানরত বিদেশি জাহাজে হানা দিয়ে লুটপাট চালাচ্ছে। আমরা বিষয়টি এর মধ্যে কোস্টগার্ডকে জানিয়েছি। গত এক পক্ষকালে প্রায় অর্ধশত ফিশিং ট্রলারের দুই কোটি টাকা মূল্যের জাল, মাছ ও জ্বালানি লুটপাট করেছে জলদস্যুরা। এ সময় বেশ কয়েকজন জলেকে অপহরণ করা হয়। প্রত্যেকে অপহৃত জেলের পরিবারের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। ডাকাতির কবলে পড়া ট্রলারের অধিকাংশই বাঁশখালী-আনোয়ারা এলাকার।
সাগরে জলদস্যুদের তান্ডব রুখে দিতে তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, জলদস্যুতা নির্মূলে সকল স্টেশনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন জলদস্যু ও মুক্তিপণ আদায়কারী বাহিনীর সর্দারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর গভীর রাত দুইটার দিকে বরগুনার পাথরঘাটার বাদুড়তলা এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জলদস্যু বাহিনীর অজ্ঞাতনামা এক সদস্য নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি রিভলবার, একনলা বন্দুক, সাত রাউন্ড গুলিসহ দেশি অস্ত্রশস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১২ সালে সুন্দরবনের জলদস্যু দমনের জন্য সরকার একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা ২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরবনসহ উপক‚লীয় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে অর্ধশত জলদস্যু নিহত হয়। এ সময় চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় তৎপর পাঁচ শতাধিক জলদস্যু চারশ’ ৭০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও সাড়ে ২২ হাজার গুলিসহ র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এরপর ২০১৮ সালের পয়লা নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন।