সাংবাদিক নির্যাতনকারী আইনজীবীদের গ্রেপ্তার ও সনদ বাতিলের আল্টিমেটাম

28

নিজস্ব প্রতিবেদক

আদালত প্রাঙ্গণে যমুনা টেলিভিশনের দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)। সমাবেশে সাংবাদিক নির্যাতনকারী আইনজীবীদের গ্রেপ্তার ও বার কাউন্সিল সনদ বাতিলের জন্য ৩ দিনের আল্টিমেটাম দেন সাংবাদিক নেতারা। অন্যথায় সারাদেশের সাংবাদিকদের নিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কড়া রোদ উপেক্ষা করে সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের পেশাজীবী প্রতিনিধিরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন।
সভপতির বক্তব্যে সিইউজে সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, চট্টগ্রামের যে কোনও প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামে আইনজীবীদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন সাংবাদিকরা। দীর্ঘদিনের এই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যেই আদালত প্রাঙ্গণে একদল উম্মত্ত আইনজীবীর সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত ও ন্যক্কারজনক। আমরা বিশ্বাস করি, দেশবিরোধী কোনও স্বার্থান্বেষী চক্রের ইন্ধনে আইনজীবী পরিচয়ে সাংবাদিকদের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। কারণ, জঙ্গী হামলা মামলার রায়ের সংবাদ করতে গিয়ে দুই সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন। দোষীদের চিহ্নিত করে আইনজীবী সমিতিকে তাদের সদস্যপদ বাতিলসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তিনদিনের মধ্যে হামলাকারীদের আইনজীবী সনদ বাতিল না করলে ধারাবাহিক কর্মসূচির মাধ্যমে সাংবাদিক সমাজ কঠোর আন্দোলন শুরু করবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস বলেন, সারাদেশে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর অব্যাহত হামলা দুঃখজনক। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে বারবার সাংবাদিকদের ওপর এ ধরনের হামলার ঘটনা ঘটছে। দোষীরা যাতে পার না পায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ বলেন, দুই সাংবাদিকের ওপর ঠুনকো অজুহাতে দুই দফায় হামলা হয়েছে। আইনজীবী পরিচয়ে কিভাবে আদালত পাড়ায় এ বেআইনি ন্যাক্কারজনক হামলা হলো তা রহস্যজনক। কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল আইনজীবী চট্টগ্রাম আদালতে কর্মরত দশ হাজার আইনজীবীর প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। আইনজীবী সমিতিকেই দোষীদের চিহ্নিত করতে হবে।
সিইউজে সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম বলেন, নিউ মার্কেট এলাকায় সাংবাদিক প্রীতম দাশের ওপর হামলার ঘটনার সপ্তাহ না যেতেই আদালত প্রাঙ্গণে আরও দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ, ছবিসহ সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে সেটা হবে দুঃখজনক। সাংবাদিক সমাজ দেশের আপামর জনসাধারণকে নিয়ে এ দুর্বৃত্তদের রুখে দাঁড়াবে।
সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভ’র সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন সিইউজে’র সিনিয়র সহ-সভাপতি রতন কান্তি দেবশীষ, সহ-সভাপতি অনিন্দ্য টিটো, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব মহসিন কাজী, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব তপন চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির উদ্দিন তোতা, সাধারণ সম্পাদক লতিফা আনসারী রুনা, প্রণব বড়ুয়া অর্ণব, সিইউজের টিভি ইউনিট প্রধান মাসুদুল হক, চট্টগ্রাম ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন, যমুনা টিভির ব্যুরো প্রধান জামশেদ রেহমান চৌধুরী প্রমুখ।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজের সাবেক সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, ও মোস্তাক আহমদ, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য আজহার মাহমুদ, সাবেক নির্বাহী সদস্য শামসুল হুদা মিন্টু, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের গ্রন্থাগার সম্পাদক মিন্টু চৌধুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলীউর রহমান, মনজুর কাদের মনজু, সদস্য দেবদুলাল ভৌমিক, শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, সিইউজের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইফতেখার ফয়সাল, সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আহমেদ কুতুব, প্রতিনিধি ইউনিটের ডেপুটি চিফ সরওয়ার আলম সোহেল প্রমুখ।
এছাড়াও সমাবেশে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ’র চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি এইচ এম মুজিবুল হক শুক্কুর ও সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ মুরাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেন। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।
প্রসঙ্গত: পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে যাওয়ার সময় রাস্তায় গাড়ির হর্ন দেয়াকে কেন্দ্র করে গত বুধবার বিকেলে একদল উম্মত্ত আইনজীবীর হামলার শিকার হন যমুনা টেলিভিশনের দুই সাংবাদিক। তারা হলেন স্টাফ রিপোর্টার আল আমিন সিকদার এবং ক্যামেরাপারসন আসাদুজ্জামান লিমন।
এদিকে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে দুইজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনকে সন্ধিগ্ধ হিসেবে এজাহারে আনা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এই মামলা দায়ের করেন হামলায় আহত যমুনা টেলিভিশনের রিপোর্টার আল আমিন সিকদার। এই বিষয়ে মামলার বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির জানান, কোর্ট হিল এলাকায় সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় সাহেদুল হক ও ইসহাক আহমেদের নামে দুইজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।