সাংবাদিকদের হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি ছাত্রলীগের

12

চবি প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) কর্মরত সাংবাদিকদের আবাসিক হল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন কর্মী। এদের প্রত্যেকেই শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ বিজয়ের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের অনুসারী।
গত বৃহস্পতিবার তারা আলাওল হলে অবস্থিত সাংবাদিকদের রুমে এসে এ হুমকি দেয়। এসময় তারা, “এই হল আমাদের। হল আমরা লিজ নিছি। যখন ইচ্ছা তোদেরকে হল থেকে বের করে দেব। এই রুম যদি তোদের হয় পুরা হল আমাদের। কি করবি তোরা? নিউজ করবি? কর। আমরা সাংবাদিক-প্রক্টর খাই না।’’ এসব কথা বলে সাংবাদিকদের হুমকি দেন।
এ নিয়ে গতকাল সোমবার নয় জনের নাম উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ১৫ জুন রাত প্রায় দেড়টার দিকে সাংবাদিকদের বøকে এসে ছাত্রলীগকর্মী জোবায়ের নিলয়সহ ৫-৭ জন শিক্ষার্থী হৈ-হুল্লোড় করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে। পরদিন ১৬ জুন রাত ১২টার দিকে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মী চবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলামের কক্ষে ঢুকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আগের ঘটনার জেরে গালিগালাজ করতে থাকে। এ সময় অকথ্য ভাষায় সাংবাদিকদের হেনস্থা করে তারা সেখান থেকে চলে যায়। এরপর আরও দু’দফায় এসে তারা সাংবাদিকদের হুমকি দিতে থাকে তাদের বক্তব্য ছিল, ‘এটা হল আমাদের। হল আমরা লিজ নিছি। যখন ইচ্ছা তোদেরকে হল থেকে বের করে দেব। এই রুম যদি তোদের হয় পুরা হল আমাদের। কি করবি তোরা? নিউজ করবি তোরা? কর। আমরা সাংবাদিক, প্রক্টর খাই না।’
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ছাত্রলীগের এসব কর্মীরা বারবার কক্ষে ঢুকে সাংবাদিকদের মারার জন্য উদ্যত হয় এবং গায়ের উপর চড়াও হয়। তারা বেশ কয়েকবার রুমের বাতি বন্ধ করে দিয়ে রুম ভাঙচুরের চেষ্টাও করে। এছাড়া তারা অশ্রাব্য ভাষায় সাংবাদিকদের গালি দিতে থাকে।
সাংবাদিকদের হেনস্থা ও হুমকির সঙ্গে জড়িতরা হলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের (নিলয়), অর্থনীতি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের রানা আহমেদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের ওয়ায়দুল হক লিমন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ২০১৬-১৭ সেশনের আশিষ দাশ, দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুর রহমান, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী তুষার তালুকদার বাপ্পা, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের আবির আহমেদ ও একই বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের জাহিদুল ইসলাম এবং সংস্কৃত বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের প্রমিত রুদ্র।এ বিষয়ে চবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দীন বলেন, এ ধরনের ঘৃণ্য আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই আমরা হুমকি প্রদানকারী শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
অভিযোগের বিষয়ে চবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপগ্রুপ বিজয়ের একাংশের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, “সাংবাদিকেরা মঙ্গলগ্রহের প্রাণি। তারা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। এখানে আমার মন্তব্য এটাই।”
অভিযোগের বিষয়ে জোবায়ের নিলয় বলেন, ‘‘আলাওল হলের দ্বিতীয় তলার শেষ বøকে প্রতিদিন মধ্যরাত পর্যন্ত সাংবাদিকরা ক্রিকেট খেলে এবং হৈ-হুল্লোড় করে। এতে হলের শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হয়। তাদেরকে বিষয়টি বারবার জানানোর পরও তারা ক্রিকেট খেলে। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে আমাদের কিছু জুনিয়র সেখানে ক্রিকেট খেললে সাংবাদিক সমিতির সভাপতি জুনিয়রদের নাম জানতে চায়। আমি নাম না বলাতে তিনি আমার ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেন। পরে রাতে বিষয়টি মীমাংসা করতে সভাপতির কক্ষে গেলে আমাদের একজন তাদের বিছানায় বসলে তাকে সেখান থেকে উঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে এটা নিয়ে কিছুটা উচ্চবাচ্য হলেও বিষয়টা মীমাংসা হয়ে যায়। কিন্তু এরপরও তারা অভিযোগ দিয়েছে কেন আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। আমরাও প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দেবো।’’
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি জেনেছি। ছাত্রলীগের কোনো কর্মী সাংবাদিকদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারে না। আমরা তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। তারা যদি ছাত্রলীগের অনুসারী হয় তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।’’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভ‚ঁইয়া বলেন, ‘‘আমরা অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেছি। এছাড়া প্রমাণ হিসেবে বেশকিছু অডিও রেকর্ডও আমাদের হাতে এসেছে। এমন অশালীন আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে কখনোই কাম্য না। আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। ইতোমধ্যে হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা।’’