সলিহর সঙ্গে ‘ফলপ্রসূ’ আলোচনায় পিটিএতে জোর হাসিনার

19

পূর্বদেশ অনলাইন

বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয় এসেছে দুই দেশের সরকারপ্রধানের যৌথ বিবৃতিতে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহের সঙ্গে তার বৈঠক অত্যন্ত ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে, সেখানে দুই দেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

আর মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সলিহ বলেছেন, দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সফর বিনিময়ের মধ্য দিয়ে এ বছর বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসের খবরে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকালে প্রেসিডেন্ট সলিহর দপ্তরে পৌঁছালে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। পরে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন এবং বৈঠক শেষে তাদের উপস্থিতিতে দুটি চুক্তি এবং একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম সলিহ এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ উন্নয়নের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট সলিহের সাথে তার বিশদ আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, যুব ও ক্রীড়া, মৎস্য ও কৃষি খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করতে তারা সম্মত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে একসঙ্গে কাজ করতেও সম্মত হয়েছেন।

দুই দেশের মধ্যে একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) এবং পারস্পরিক বিনিয়োগ সুবিধার জন্য একটি দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর বৈঠকে জোর দিয়েছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সুযোগ থাকার পরও আমরা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে এখনো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি এ কথা জানাতে পেরে আনন্দিত যে আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয়ে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি। আমরা আমাদের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি এবং ফলাফল সন্তোষজনক পেয়েছি।”

বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতা, একে অপরের প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়া এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সহযোগিতার বিষয়েও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে তিনি গণমাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করেন; প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে মালদ্বীপে মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহের প্রস্তাব দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “এটা অত্যন্ত সন্তুষ্টির বিষয় যে বাংলাদেশ থেকে স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের নিয়োগের জন্য মালদ্বীপের প্রস্তাব বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে। আমরা মালদ্বীপের ছাত্রদের জন্য বিশেষায়িত স্নাতকোত্তর মেডিকেল কোর্সের সুযোগ তৈরি করব।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলার ফ্লাইট শুরুর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

“আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও ঢাকা-মালে ফ্লাইট চালুর কথা ভাবছে। আমরা আশা করি, সরাসরি ফ্লাইটের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে যোগাযোগ এবং পর্যটন সহযোগিতার আদান-প্রদান বৃদ্ধি পাবে। আমরা একটি সরাসরি শিপিং লাইন স্থাপনের সম্ভাবনাও পর্যালোচনা করছি।”

কনস্যুলার ও কমিউনিটির সমস্যাগুলো দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনিবন্ধিত বাংলাদেশি কর্মীদের নিবন্ধনের বিষয়টি মালদ্বীপ আলোচনায় তুলেছে। বাংলাদেশ মালদ্বীপের নাগরিকদের জন্য ‘অন অ্যারাইভাল ভিসা’ ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০২১ সালকে বাংলাদেশ-মালদ্বীপ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য ‘যুগান্তকারী বছর’ হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এর আগে সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে একবার মালদ্বীপে এলেও এটি তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।

চলতি বছরের মার্চ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে যোগ দিতে প্রেসিডেন্ট সলিহর ঢাকা সফরের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।