সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ভালবাসায় সিক্ত মুহিত

3

পূর্বদেশ ডেস্ক

সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা সিক্ত হলেন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, ভাষাসৈনিক, সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত। সাধারণ মানুষ গতকাল শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যক্তি, বিশিষ্টজন, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় সাবেক এ অর্থমন্ত্রীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তার ছোট ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি (আবুল মাল আবদুল মুহিত) অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তিনি বলছিলেন যে, ‘আমার প্রাপ্তি হয়েছে, আমার কাজ শেষ, তোমরা দেখো বাকিটুকু।’ কয়েকদিন ধরেই তিনি বলছিলেন সিলেট চলে যাবেন। তার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বন্ধের দিনেও তাকে অফিসে দেখা যেতো। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি সফল ছিলেন। এদেশের রাজনীতিতে সৎ মানুষ বেশি নেই, মুহিত সাহেব শতভাগ সৎ লোক ছিলেন। তিনি অর্থমন্ত্রী হিসেবে সংসদে ১২টি বাজেট পেশ করেছেন। তার মধ্যে ১০টি শেখ হাসিনার সরকারের সময়।
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে আমরা দেশের অর্থনীতিতে অনন্য অবদান রাখা একজন প্রাজ্ঞ, বিজ্ঞ, ভদ্র মানুষকে হারালাম। ভব্যতা-ভদ্রতাসহ অনেক কিছু তার কাছে শেখার ছিলো উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, কনিষ্ঠ ও অনুজদের মুহিত ভাই যেভাবে আপন করে নিতেন, তা ছিলো অভাবনীয়। তার মৃত্যু আমাদের দেশ ও দলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি বলেন, আবুল মাল আবদুল মুহিতের মাধ্যমে দেশে মোট ১২টি বাজেট পেশ হয়েছে, যার মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের দশটি বাজেট দিয়েছেন একাধারে জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ এবং এই প্রাজ্ঞ মানুষটি। আমরা তার বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।
এর আগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কবীর আহাম্মদ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকারের পক্ষে সার্জেন্ট এট আর্মস কমোডর এম এম নাঈম রহমান। শ্রদ্ধা জানান, জাসদ সভাপতি ও তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে, গুলশান আজাদ মসজিদে সকাল ১১টা ৫ মিনিটে নানা শ্রেণি পেশার মানুষের অংশগ্রহণে মুহিতের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। তবে জাতীয় সংসদ প্লাজায় সাবেক এই অর্থমন্ত্রীর দ্বিতীয় জানাজা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো শেষে দুপুর দেড়টার দিকে মুহিতের মরদেহ নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মুহিতের মরদেহ বনানীর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে দাফনের জন্য মরদেহ নিয়ে গতকাল রাতে সড়কপথে তার জন্মস্থান সিলেটে পৌঁছায়।
জানা গেছে, পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। নগরীর রায়নগরের ডেপুটি বাড়ি বা সাহেব বাড়ি হিসেবে পরিচিত পৈত্রিক বাড়ি সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। আজ দুপুর ২টায় নগরীর ঐতিহাসিক আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সর্বশেষ জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হবে। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য জানাযার আগে দুপুর ১২টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রয়াত অর্থনীতিবিদ মুহিতের মরদেহ রাখা হবে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি… রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় সাবেক অর্থমন্ত্রী বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। মাঝে তাকে কয়েক দফায় হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত ১২টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন।
মন্ত্রী ও বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের শোক
সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
গতকাল পৃথক শোক বার্তায় তারা আবুল মাল আবদুল মুহিতের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তার পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বীরপ্রতীক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
এছাড়া, আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির ও গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন।