সর্বজনীন পেনশন স্কিম জনকল্যাণমুখী প্রশংসনীয় উদ্যোগ

22

সরকারের জনকল্যাণমুখী নানা পদক্ষেপের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম অন্যতম প্রশংসনীয় উদ্যোগ। গণমাধ্যম সূত্রে জেনেছি, কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাসংক্রান্ত কৌশলপত্র উপস্থাপনকালে তিনি সর্বজনীন পেনশন স্কিমের জন্য জরুরি ভিত্তিতে আইন প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার এই নির্দেশনার আলোকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের কাজ শুরু করেছে অর্থ বিভাগ। এই স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি কোনো নাগরিক যদি মাসে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা জমা করেন, তাহলে তার বয়স ৬০ পার হলেই সরকার তাকে প্রতি মাসে পেনশন দেবে ৩২ হাজার টাকা।
আর জমানো অর্থের পরিমাণ যদি এক হাজার টাকা হয়, তাহলে তিনি পাবেন ৬৪ হাজার টাকা। এই টাকা জমা শুরু করা যাবে ১৮ বছর বয়স থেকেই আর তিনি এই সুবিধা পাবেন ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত। এ স্কিমে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বয়সভেদে আর্থিক সুবিধার পরিমানও কম-বেশি হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, এ স্কিম চালানোর মতো আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে সরকারের। প্রথমে স্বেচ্ছায় যারা এ স্কিমে যুক্ত হতে চাইবেন, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে; পরে এটি বাধ্যতামূলক করা হবে। তিনি আরও বলেছেন, এ লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়ন করা হবে, এরপর বিস্তারিত বিধিবিধান নিয়ে আসা হবে এবং স্কিম পরিচালনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাইরে এটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের ষাটোর্ধ্ব সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত একটি মহৎ ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ স্কিম চালু হলে জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে লক্ষণীয় অগ্রগতি ঘটবে। বিসিএসের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে মোট শ্রমশক্তির সংখ্যা ৫ কোটি ৮৭ লাখ। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী ৫ শতাংশ আর বেসরকারি খাতে নিয়োজিত রয়েছে ১০ শতাংশ। এ ১৫ শতাংশ হলো দেশের প্রাতিষ্ঠানিক খাত, বাকি ৮৫ ভাগই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের, যাদের কোনো নিয়োগপত্র নেই। তারাও পেনশন স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন।
উল্লেখ করা যেতে পারে, বর্তমান সরকারের প্রথম নির্বাচনি ইশতেহারে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের অঙ্গীকার ছিল। সেই অনুযায়ী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য সরকার অবশ্যই ধন্যবাদ পেতে পারে। দেশে গড় আয়ু ও প্রবীণের সংখ্যা বাড়ায় সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি বাড়ছে। এ অবস্থায় সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রয়োজনীয়তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশ্য এটি নতুন কোনো ধারণা নয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এ স্কিম চালু করা হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকা ও আফ্রিকার প্রায় উন্নত দেশে এ স্কিম কার্যকর রয়েছে। বস্তুত, কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা থেকেই এ চিন্তার উদ্ভব। স্কিমটি পরিচালনা করাও এমন কোনো কঠিন কাজ নয়।
জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে নাগরিকদের একটি পৃথক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। সেই অ্যাকাউন্টে পেনশন পাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত টাকা জমা দিতে হবে। যে যার সক্ষমতা অনুযায়ী ৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত জমা করতে পারবেন। আমরা মনে করি, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের নাগরিকদের জন্য এ এক বড় সুযোগ। তবে এ প্রক্রিয়াগুলো সহল ও সাবলিল করতে হবে। কোন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় যেন কোন পেনশনভোগী না পড়েন সে বিষযটিও আইনে রাখতে হবে। আমাদের দেশে সরকার অনেক ভারে কাজ ও কর্মসূচি নিয়ে থাকে। কিন্তু নানা জটিলতায় তা সাধারণ মানষের নাগালে থাকেনা। এক্ষেত্রে আগে থেকে সতর্কতা জরুরি। সরকারের মহৎ কাজের সফলতা যেন জনগণ পায় সে দিকে নজর দিতে হবে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে, এটাই প্রত্যাশা।