সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতের লৌহমানব

113

“কর্ম সাধনা, কিন্তু হাসিই জীবন। যিনি জীবনকে খুব কঠিনভাবে চিন্তা করেন তিনি কখনই জীবনকে উপভোগ করতে পারেন না। জীবনে যারা সুখ ও দুঃখকে সমানভাবে মেনে নিতে পেরেছেন তারাই জীবন উপভোগ করতে পেরেছেন।”
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের এই বিখ্যাত উক্তির মাধ্যমেই বোঝা যায় যে তিনি কর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। বল্লভভাই জাভেরভাই প্যাটেল, ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতা। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার প্রথম তিন বছরে তিনি ভারতের উপ-প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাঁর নিরলস পরিশ্রম ও কঠোর আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে ভারত সরকার ২০১৪ সাল থেকে তাঁর জন্মদিনকে ‘রাষ্ট্রীয় একতা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। ১৯৯১ সালে তাঁকে ‘ভারতরতœ’ সম্মানে ভূষিত করা হয়।
বল্লভভাই প্যাটেলের ‘সর্দার’ উপাধিটি দিয়েছিলেন তাঁর রাজনৈতিক গুরু মহাত্মা গান্ধী নামে সমাধিক পরিচিত মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্ম ১৮৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর গুজরাটের নাদিয়াডের এক চাষী পরিবারে। তাঁর বাবার নাম জাবেরভাই প্যাটেল। মায়ের নাম লাড বাঈ। জাবেরভাই ছিলেন ঝাঁসির রানি ল²ী বাঈয়ের সেনাবাহিনির একজন সদস্য। মা ছিলেন ধর্মশীলা সাধারণ গৃহবধূ।
বল্লভভাই প্যাটেল গুজরাটের কূর্মি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২২ বছর বয়সে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। শিক্ষা সম্পন্ন করার পর তিনি আইন পড়তে আগ্রহী হন এবং ব্যারিস্টারি পড়ার জন্যে লন্ডনে যান। দেশে ফিরে একজন আইনজীবী হিসেবে কাজে যোগ দেন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তিনি প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী হন।
তিনি ছিলেন গান্ধীজীর ভাব শিষ্য। কাজেই অচিরেই তিনি গান্ধীজীর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৩১ সালে তিনি কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং গান্ধীজীর ডাকে ওকালতি ছেড়ে বিখ্যাত ‘ভারতছাড়’ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯২৩ সালে যখন গান্ধীজী কারাগারে বন্দী ছিলেন তখন বল্লভভাই প্যাটেল নাগপুরে সত্যগ্রহ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯২৮ সালে বারদলি সত্যগ্রহ আন্দোলনের কারণেই প্যাটেল সাহেব ‘সর্দার’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। এই আন্দোলনের প্রভাব এতটাই ছিল যে পন্ডিত মতিলাল নেহরু কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে বল্লভভাই প্যাটেলের নাম গান্ধীজীর কাছে সুপারিশ করেন।
সর্দার বল্লভভাই বর্ণ প্রথা, মদ্যপান এর বিরুদ্ধে প্রচুর সমাজসংস্কারমূলক কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি ভারতবর্ষে নারীদের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাপারে প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের পর সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ভারতের উপ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি সদ্য স্বাধীন ভারতের সকল রাজ্যের একীভূতকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।
তিনি চেয়েছিলেন ভারত অর্থনীতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক। তিনি ভারতকে খুব দ্রæত শিল্পোন্নত দেখতে চেয়েছিলেন যাতে ভারত অন্যের উপর নির্ভরশীল না হয়। সদ্য স্বাধীন ভারতের বিভিন্ন অংশের অখÐতা রক্ষা এবং বিভক্ত ভারতকে শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি অচিরেই লৌহমানব বলে পরিচিত হন। তবে এসব দায়িত্ব পালনে যে মানসিক চাপ তাঁকে সামলাতে হয়, তাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ১৯৫০ সালে ১৫ ডিসেম্বর মুম্বইয়ে ভারতের এ কৃতি সন্তান ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।