সরকার বিএনপির ওপর দায় চাপাতে চায়

18

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘সরকার বিভিন্ন এজেন্ট দিয়ে ঘটনা ঘটাচ্ছে। চাঁদপুর, নোয়াখালীর চৌহমুনী ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন রকম সমস্যা তৈরি করে দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ড. হাছান মাহমুদ সাহেব বার বার বলেছেন, এটার পিছনে বিএনপির হাত আছে, করাচ্ছেন তো আপনারা। কারণ আপনারা জানেন এসব ঘটনা না ঘটলেও জনগণ গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করবে।’ গতকাল শনিবার বিকালে নগরীর কাজির দেউড়ির একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি আয়োজিত কর্মিসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসব ঘটনায় নিরীহ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের সামনে অনেক বিপদ। গভীর সংকট পার করছি। দেশে গণতন্ত্র নেই, কথা বলতে দেয়া হয় না, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। ২০০৮ সালে ১০ টাকা দরে চাল, বিনা পয়সায় সার আর ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। এখন চালের কেজি ৭০ টাকা, সারের দাম বাড়তি, জেলেদের ইলিশ ধরা বন্ধ করে দিয়েছে। জাল পুড়িয়ে দিচ্ছে সরকার। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর জেলে রাখছে। এ সরকার মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু গণতন্ত্র তারা বিশ্বাস করে না। তারা সুপরিকল্পিতভাবে মানুষের অধিকারগুলো কেড়ে নিচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রের মোড়কে একদলীয় শাসন কয়েম করছে। জনগণের সাথে প্রতারণা করছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নেই। সার্চ কমিটি যাকে পছন্দ তাকে দিয়ে করবেন। নির্বাচনের আগের দিন ভোট হয়ে যাবে। আমরা আর আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনের ফাঁদে পা দিচ্ছি না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের প্রস্তাব ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চারটি নির্বাচন হয়েছে। সে নির্বাচনগুলো নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একবার তারাও নির্বাচিত হয়েছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই স্বৈরাচারী সরকার শুধু বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে নয়, ওয়ার্ড কমিটি, ইউনিয়ন কমিটির হাজার হাজার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে প্রায় এক লক্ষ মামলা দিয়েছে। ইলিয়াস আলী, নুরুল আলমসহ ৫শ’র অধিক মানুষ গুম হয়ে গেছে। এক হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আজকে আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা এখনো পর্যন্ত স্বৈরাচারকে সরাতে পারেনি। সে জন্য আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমাদের নেতৃবৃন্দ অতি দ্রুত সংগঠনকে সংগঠিত করছেন।
তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, গণআন্দোলন যারা করতে চান, অভ্যুত্থান করতে চান, সংগ্রাম করে, বিপ্লব করে বাংলাদেশকে মুক্ত করতে চান তাদেরকে অবশ্যই সত্যিকার অর্থে সাচ্চা সৈনিক হিসেবে তৈরি হতে হবে। তাদের মধ্যে আদর্শ থাকতে হবে। তাদের মধ্যে সংগঠনের প্রতি ভালোবাসা এবং সেনাপতির নির্দেশ মানার মানসিকতা থাকতে হবে।
কর্মীদের উদ্দেশ তিনি বলেন, যারা নেতা মানে না তারা আন্দোলন করতে পারে না। আমি অসুস্থ, ৭৩ বছর বয়স আমার। আপনারা যে বিশৃঙ্খলা করছেন সেটা হয় না। এটা সাধারণ কোনো কর্মিসভা নয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নেতারা কমিটি করেছেন। সেখান থেকে যে নেতৃত্ব তাদের নিয়ে এই কর্মিসভা। এখানে যদি বিশৃঙ্খলা হয় তাহলে কিভাবে আন্দোলন হবে? বিশৃঙ্খল কোনো সেনাবাহিনী যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারে না। সুশৃঙ্খল হোন। ফেসবুকে ছবি দিয়ে আন্দোলন হবে না। সংগ্রাম করতে হলে সাচ্চা কর্মী হতে হবে। সেনাপতির নির্দেশ মানার মানসিকতা থাকতে হবে।
‘হৈ হৈ করলে রাজনীতি হবে না। মাথা ঠান্ডা রেখে, সুপরিকল্পিতভাবে চিন্তা করে রাজনীতি করতে হবে। এই যুবকদের কাজ হচ্ছে আওয়ামী লীগ থেকে দেশকে রক্ষা করা। ফেসবুক রাজনীতি করলে হবে না। নেতা ডাক দিলে মাঠে নামতে হবে,’ বলেন মির্জা ফখরুল।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখানে এসে দেখলাম চট্টগ্রামে অনেক ফ্লাইওভার করেছে। পাকা ড্রেন করেছে। সাধারণ মানুষের জন্য কি করেছে? সাধারণ মানুষের জন্য তারা কিছুই করেনি। লকডাউনের পর লকডাউন দিয়ে সব শেষ করেছে। আর প্রণোদনা দিল আওয়ামী লীগের নেতাদের। গরীব মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে দিবে বলেছে সেটাও আওয়ামী লীগ নেতাদের দিয়েছে। দেশে গরিব আরো গরিব হচ্ছে আর আওয়ামী লীগ তাজা, মোটাতাজা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় সভায় সভাপতির বক্তব্যে আহŸায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। কুমিল্লায় প্রথমে যে ঘটনা ঘটিয়েছে তাকে গ্রেপ্তার করা দরকার ছিল। আজ পর্যন্ত যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের গ্রপ্তারের আওতায় আনতে পারেনি। এতে পরিষ্কার সরকার সুপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ফায়দা লুটতে এগুলো করিয়েছে। আজকে কাদের নামে মামলা হচ্ছে, বিএনপি ও আমাদের সাথে যাদের জোট আছে তাদের নামে।
সাম্প্রদায়িক হামলা সরকারের পরিকল্পনার অংশ জানিয়ে ডা. শাহাদাত বলেন, এই সরকারের অধীনে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ-খিস্টান কেউ নিরাপদ নয়। তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে দাঙ্গা লাগিয়ে ফায়দা লুটে। ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে তারা ফায়দা লুটতে চায়। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা বিএনপি জনগণকে সাথে নিয়ে রুখে দিবে।
প্রধান বক্তা বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, ফ্যাঁসিবাদী সরকার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে জনগণের ত্রাহি অবস্থা। এই সরকার মাফিয়া সরকার। আমরা অনেক কর্মসূচি পালন করেছি। খালেদা জিয়াকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। আজকে খালেদা জিয়া বন্দী নন, গণতন্ত্র গৃহবন্দী।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহব্বায়ক আবু সুফিয়ান, সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহব্বায়ক এম এ আজিজ, যুগ্ম আহব্বায়ক মো. মিয়া ভোলা, এড. আবদুস সাত্তার, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, ছাত্রদলের আহব্বায়ক সাইফুল আলম, সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন প্রমুখ।