সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য প্রদান শুরু

27

 

 

দেশে অব্যাহতভাবে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দিনের পর দিন বেড়েই যাচ্ছে। নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র মানুষগুলোর জীবন প্রায় ওষ্ঠাগত। এ অবস্থায় সরকার পবিত্র রমজানে আগে দেশের এককোটি নিম্ন আয়ের মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল ২০ মার্চ রবিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর শুরু হয়, চলবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। আপাতত সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে, তবে এ ধরনের উদ্যোগ সাময়িক। সবসময় টিসিবির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে নিত্য পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব নাও হতে পারে। এজন্য সরকারকে নিত্যপণ্যের বাজার দরের একটি স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। বাজারের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী স্বযং বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে এর প্রভাব আমাদের দেশের বাজারেও পড়বে, তবে অসাধু ব্যবসায়ীরা এর সুযোগ নিয়ে অতিরিক্ত মোনাফা লাভে তৎপর থাকেন, বাজার দর কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেন। আমরা পরিষ্কার হয়েছি অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা সম্পর্কে সরকার ভালোভাইে ওয়াকিবহাল। সরকার আন্তরিক হলে এসব অসাধু ব্যাসায়ীদের আইনের আওতায় আনা অসম্ভব কিছু নয়। তবে সম্প্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার ও গুদামে যে অভিযান চালানো হচ্ছে, তা অব্যাহত রাখলে বাজার দর কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে। এতে নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন। সূত্র জানায়, সরকার দেশব্যাপী এক কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারকে সাশ্রয়ীমূল্যে পণ্য প্রদান করবে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭২ পরিবারের মাঝে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করা হবে। দুই কিস্তিতে এক কোটি পরিবার টিসিবির পণ্য পাবে। প্রথম কিস্তি পাবে ২০ থেকে ৩০ মার্চ এবং দ্বিতীয় কিস্তি পাবে ৩ থেকে ২০ এপ্রিল। গত শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সভাকক্ষে টিসিবি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এসব তথ্য জানান। এ পণ্য সরবরাহে স্বচ্ছতার সাথে নির্বিঘœ করার জন্য এককোটি মানুষর জন্য ফ্যামিলি কার্ড সরবারহ করা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় স্থানীয় জনসংখ্যা ও দারিদ্র্যের সূচক বিবেচনায় রেখে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এক কোটি পরিবার টিসিবির পণ্য পাওয়ায় এতে প্রায় ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হবে। তিনি বলেন, বিতরণের আগের দিন সংশ্লিষ্ট ফ্যামিলি কার্ডধারীদের পণ্য বিক্রির স্থান ও সময় জানানো হবে। গতকাল দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রত্যেক পরিবার ১১০ টাকা দামে ২ লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা দামে ২ কেজি চিনি, ৬৫ টাকা দামে ২ কেজি মসুর ডাল ও ৫০ টাকা দামে ২ কেজি ছোলা পাবে। বাণিজ্যমন্ত্রী এসব পণ্য দেশব্যাপী সুষ্ঠুভাবে বিক্রির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। একইসাথে তিনি এ বিষয়ে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের আহবান জানান। আমরা লক্ষ করে আসছি, সরকার জনকল্যাণে সবসময় বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে থাকে। করোনাকালীন প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা কয়েকদফায় দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নিত্যপণ্যসহ নগদ অর্থ প্রদান করে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি, ডিলার ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কারসাজিতে গরিবের মাল বিভিন্ন দোকানে, গুদামে পাচার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় । সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়ায় স্বচিত্র প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। এতে সরকারের বিশাল অবদান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। যদিও অভিযুক্ত অনেক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আমরা দেখেছি। এবার টিসিবির পণ্য ফ্যামিলি কার্ডগ্রহিতারাই পাবেন-এ বিশ্বাস আমাদের। তবে শেষ পর্যন্ত গরিবের ঘরে এ পণ্য যাচ্ছে কিনা-এর প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে প্রশাসনকে। টিসিবির পণ্য সরবরাহে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে জনগণের সাথে সরকারও এর সুফল পাবে-এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।