সরকারি স্বীকৃতির পথে গুলিয়াখালী সৈকত

55

জাহেদুল আনোয়ার চৌধুরী, সীতাকুন্ড

বাংলাদেশ ও বিশে^র পর্যটকনন্দিত, সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কক্সবাজার সি বিচ। বিশে^র অনেক দেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষ বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সাগরের উত্তাল ঢেউ দেখতে ছুটে আসেন এই সমুদ্র সৈকতে। এই সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে কক্সবাজার জেলা শহরে গড়ে উঠেছে হোটেল, মোটেল জোন। এই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের চাপ কমাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকার ইতিমধ্যে সীতাকুন্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। এই প্রস্তাবের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও সীতাকুন্ড উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে রাস্তা প্রশস্ত ও রাস্তা সংস্কার কাজ শুরু করেছে। হোটেল, মোটেল জোন করতে জায়গা অধিগ্রহণ ও খাস জায়গা শনাক্তের কাজ শুরু করেছে। পর্যটন কর্পোরেশনের বিচ স্বীকৃতির আবেদন মঞ্জুরের পথে।
গুলিয়াখালী সৈকতের সোনালি আভার গোধূলি লগ্ন এক অনন্য মায়াবি বন্ধন। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর সীতাকুন্ড উপজেলাধীন মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। বাহারি রঙের বৃক্ষ আর আর সবুজের সমারোহ পরিবেশকে আরো সৌন্দর্যমন্ডিত করেছে। বিশাল আয়তনের এই পর্যটন স্থান দেখতে দূর দূরান্ত থেকে অধীর আগ্রহে পর্যটকরা ঘুরতে আসেন। একদিকে দিগন্ত জোড়া জলরাশি আর অন্যদিকে কেওড়া বন। আছে সবুজ গালিচার বিস্তৃত ঘাস। তার মাঝে বয়ে চলেছে আঁকাবাঁকা ছড়া। জোয়ারের পানিতে সবুজ ঘাসের ফাঁকে ছড়াগুলো কানায় কানায় ভরে ওঠে। এরই মাঝে রয়েছে ছোট ছোট লাল কাঁকড়া। জোয়ার চলে গেলে ফিরে যায় আগের অবস্থায়। মৃদু বাতাস আর গাছের পাতার গুঞ্জনে তপ্ত দুপুর, স্নিগ্ধ বিকেল কিংবা আনন্দঘন সন্ধ্যাটি যে কাউকে রাঙিয়ে তুলবে বর্ণিল অনুভবে। খাল ধরে এগিয়ে গেলে মিলবে সমুদ্রের অপার সৌন্দর্য উপভোগের এক অভাবনীয় মুহূর্ত। চোখের সামনে অনন্য সুন্দরের এক সৈকত। গুলিয়াখালী বিচকে সাজাতে কোনো কার্পণ্য করেনি প্রকৃতি। সবকিছু মিলে এ যেন প্রকৃতির অন্যরকম আশীর্বাদ।
এই সৈকতের একপাশে রয়েছে সাগরের জলরাশি, অন্যপাশে কেওড়া বন। দেখা মিলবে সোয়াম্প ফরেস্ট আর ম্যানগ্রোভ বনের অন্য রকম মিলিত রূপ।
গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতকে পর্যটন খাতের আওতায় আনতে নেয়া হচ্ছে মহাপরিকল্পনা। রাস্তার প্রশস্তকরণ, সংস্কার, উন্নয়ন, হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট গড়ে তুলতে ভূমি জরিপের জন্য দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকারি স্বীকৃতিস্বরূপ পর্যটন কর্পোরেশনের প্রস্তাব হাতে পেলে উপজেলা প্রশাসন খুব দ্রুত পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে হোটেল, মোটেলের কাজ শুরু করবে।
স্থানীয়দের কাছে সৈকতটি মুরাদপুর সি বিচ নামে পরিচিত। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড বাজার থেকে দূরত্ব মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া না লাগলেও এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলবেঁধে অনেক দর্শনার্থী ছুটে আসছেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এই সৈকতে। সংশ্নিষ্টদের মতে, দ্রুত সরকারি উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গুলিয়াখালী বিচ হতে পারে দেশের পর্যটনের অন্যতম একটি স্থান। এতে দেশের পর্যটন খাতে অনেক বড় অবদান রাখা সম্ভব হবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইতিমধ্যে আমরা গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতের জন্য রাস্তা প্রশস্তকরণ, হোটেল, মোটেল, জোনের জন্য খাস জায়গা অধিগ্রহণের কাজ শুরু করেছি। পর্যটনের অপার সম্ভাবনা সীতাকুন্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত। খুব কাছ থেকে পাহাড়ি ঝর্ণা ও সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গ উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। দিন দিন পর্যটকের ভিড় জমতে দেখায় গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতকে পর্যটনকেন্দ্রে রূপ দিতে নেয়া হয়েছে নানা পরিকল্পনা। ধীরে ধীরে পরিকল্পনা গ্রহণ করে কক্সকাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের চাপ কমাতে গুলিয়াখালী বিচকে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে রূপ দেওয়া হবে। সীতাকুন্ডে পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম বিষয়গুলো হবে- গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি- বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক, সুউচ্চ চন্দ্রনাথধাম, ভাটিয়ারি গলফ ক্লাব সংলগ্ন ভাটিয়ারি লেক, বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ছোট দারোগারহাট সহস্র ধারা ঝর্নাসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে।