সরকারি জমিতে বস্তি ৫০ জনের সিন্ডিকেট

85

কর্ণফুলীর তীরে সরকারি খাস জমি দখল করেই তৈরি করা হয়েছিল বস্তি। এ বস্তিতেই শনিবার গভীর রাতে আগুনে পুড়ে মারা গেছে ৯ জন। ৫০ জনের সিন্ডিকেট এ জমি দখল করে রেখেছিল। সরকারি দলের রাজনীতির সাথে জড়িত তাদের কয়েকজন। বস্তিতে বসবাসকারীরা কদিন আগেই সরে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু দখলদাররা তাদের সরতে বাধা দিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
কর্ণফুলীর তীরে বিশাল এলাকা জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে বস্তি। ভেড়া মার্কেট নামে পরিচিত এ বস্তি। এখানে রয়েছে কয়েকশ’ ঘর। মাসে আদায় হয় কয়েক লাখ টাকা। সে টাকা পদবি অনুযায়ী ভাগ হয়।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, ২০০২ সালের দিকে দখল করা হয় এসব জমি। কয়েক একর জমি দখল করে নেয় তারা। তারপর সেখানে ছোট ছোট অসংখ্য কাঁচা ঘর তৈরি করা হয়। নিম্ন আয়ের লোকজনকে এসব ঘর ভাড়া দেয়া হয়। ভ্যান চালক, রিকশা চালক, মাছ বিক্রেতা, পান দোকানদারসহ স্বল্প আয়ের লোকজনই ভাড়া থাকত বস্তিতে। প্রতিটি ঘরের ভাড়া ছিল ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় সরকারি জমি দখল করে বস্তি নির্মাণের সাথে জড়িত ৫০ জনের একটি সিন্ডিকেট। তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন যুবলীগ নামধারী আকতার ওরফে কসাই আকতার ও আবদুল করিম। আকতার বক্সিরহাট ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। তার সঙ্গে রয়েছে আবদুস সাত্তার, বেলাল, হেলাল, মাসুম, ফরিদ, মামুন, কাসেম, সুমনসহ ৫০ জন। তবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতো আকতার ও করিম। তারা দু’জনেই ভাড়া আদায় করতো। ভাড়ার টাকার বেশিরভাগ অংশ পেতো তারা দু’জন। বাকিদের সামান্যই দেয়া হতো।
জানা যায়, এক সময় বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত আকতার জমি দখল করার পর ছোট ছোট প্লটে ভাগ করে। তার অধীনে ছিল কয়েকশ’ প্লট। এসব প্লটের অর্ধশতাধিক বিক্রি করলেও বেশিরভাগই ভাড়ায় দিয়েছিল। প্রতিটি প্লট এক থেকে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করেছিল সে।
হাইকোর্টের নির্দেশে কর্ণফুলী তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমে তালিকায় এ বস্তিটিও পড়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদালতে দেয়া তালিকায় রয়েছে এ ভূমিটি। এ ভূমিতে বসবাসরতদের সরে যেতে তিন সপ্তাহ আগেই নোটিশ দেয় জেলা প্রশাসন। নোটিশে তাদের এক সপ্তাহর মধ্যে সরে যেতে অনুরোধ করা হয়। নোটিশ পেয়ে অর্ধশতাধিক পরিবার অন্যত্র চলেও যায়। দখলদাররা তাদের যেতে বাধা দিলেও রাতের আধারে তারা বস্তি ছাড়ে। বাকি পরিবারগুলোও সরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দখলদাররা তাদের যেতে বাধা দেয়। তাদের বলা হয়, চলে যেতে হলে তিন মাসের ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। তাদের আরো বুঝানো হয়, নোটিশ দিলেও তাদের উচ্ছেদ করা হবে না। কারণ সরকার বস্তি উচ্ছেদের বিপক্ষে। দখলদাররা চেয়েছিল, বস্তির লোকজনকে রাখতে পারলে উচ্ছেদ করার সাহস করবে না জেলা প্রশাসন। তাই তাদের যেতে দেয়নি তারা।
জেলা প্রশাসনের তালিকায় তৃতীয় ধাপে এ ভূমি উচ্ছেদের কথা ছিল। তার আগেই তাদের সরে যেতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু দখলদারদের কারণে তারা যেতে পারেননি।
জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, এ বস্তির দখলদার কারা এবং তারা বস্তিবাসীদের সরতে বাধা দিয়েছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। যদি তা হয় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ দায়ি হলে ছাড় দেয়া হবে না।
বস্তিতে বসবাসকারী রুমা নামে এক নারী জানান, তারা তিন দিন আগেই চলে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাদের বাসার মালিকরা যেতে দেননি। মাহমুদা বেগমও জানান একই কথা। তিনি বলেন, তাদের লোভে পড়ে আমি সব হারিয়েছি।
দেখা যায়, এ বস্তিতে গ্যাস সংযোগ না থাকলেও রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। অবৈধভাবে দেয়া হয়েছে এ সংযোগ। বিদ্যুৎ বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা দখলদারদের যোগসাজসে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা।