সরকারি ওষুধ চুরিতে সক্রিয় ১৫ চক্র

32

ফারুক আবদুল্লাহ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ বিনামূল্যের ওষুধ কৌশলে চুরি করে ফার্মেসিতে বিক্রি করে বেশ কয়েকটি চোর চক্র। বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধসহ দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এ তথ্য পেয়েছে। ইতিমধ্যে ওষুধ চুরির বিষয়টি অনুসন্ধানে চার সদস্যের কমিটি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
গত সোমবার (৭ ফেব্রæয়ারি) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেট থেকে দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে অন্তত সাড়ে তিন লাখ টাকার সরকারি ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দুইজন হলেন- আশু চক্রবর্ত্তী (৩৫) ও মো. সৈয়দ (৬২)। এদের মধ্যে আশু হাসপাতালের স্থায়ী কর্মচারী ও সৈয়দ আউটসোর্সিং হিসেবে হাসাতালে কাজ করেন। এদিকে এই ঘটনার পর গতকাল মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে দুইজনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের ব্যাগ তল্লাশি করে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। এসব ওষুধের পাতায় ‘বিনামূল্যের সরকারি ওষুধ’ সিল দেওয়া আছে। জব্দ ওষুধের বাজার দর এক লাখ ১০ হাজার টাকা। এসময় গ্রেপ্তার আশুর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার বাসায় তল্লাশি করে আরও দুই লাখ ৪০ হাজার টাকার ওষুধ জব্দ করা হয়।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর বলেন, গ্রেপ্তার দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদে নানা তথ্য জানিয়েছে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে- ওষুধগুলো চমেক হাসপাতালের স্টোর থেকে রোগীদের জন্য বরাদ্দ হয়ে ওয়ার্ডে যায়। সেখান থেকে ওষুধগুলো বিনামূল্যে রোগীদের কাছে সরবরাহ করা হবে। কিন্তু কতিপয় অসাধু কর্মচারী ওষুধগুলো গোপনে ওয়ার্ডের শেলফ থেকে সরিয়ে ফেলে। পরে সেগুলো সুবিধামত সময়ে বিক্রি করে দেয় হাসপাতালের আশপাশে বিভিন্ন ফার্মেসিতে। গ্রেপ্তার দুইজনের কাছ থেকে উদ্ধার করা ওষুধগুলো চমেক হাসপাতালের ২৬ নম্বর অর্থোপেডিকস ওয়ার্ড থেকে চুরি করা বলে জানান তিনি। ওসি জানান, এ বিষয়ে আরও তথ্য পেতে গ্রেপ্তার দুইজনকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার আরাফাতুল ইসলাম বলেন, চমেক হাসপাতালের কতিপয় কর্মচারী, যাদের মধ্যে আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারি রয়েছে, বহিরাগত দালাল এবং ফার্মেসির লোকজন মিলে অন্তত ১২ থেকে ১৫টি চক্র ওষুধ চুরিতে সক্রিয়। এদেরকে শনাক্তের কাজ চলছে। সবাইকে আইনের আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ওষুধ চুরির ঘটনায় চমেক হাসপাতালের স্টোর অফিসার ডা. মো. হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান জানান, ওষুধ চুরির ঘটনা তদন্তে সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা নার্সদের নিয়ে বৈঠক করেছি। চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে কথা বলব। যাতে করে সম্পূর্ণরূপে ওষুধ পাচার বন্ধ করা যায়।