সরকারকে কামাল এভাবে পার পাবেন না

31

ক্ষমতাসীনরা নিজেদের ভোটে নির্বাচিত বললেও জনগণ তা মনে করে না বলে দাবি করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা কামাল হোসেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন নির্বাচন নির্বাচন করে যেন তারা মজা পেয়ে গেছেন? ভোট না দিয়েই মানুষকে বলা যায় যে এই তো বৈধতা পেয়েছি। দেশের মানুষ তো অন্ধ না। সরকারে অথবা সরকারের সমর্থিত যারা আছেন, তারা যদি এই দাবিটা করেন, তারা মনে করবেন না যে, দেশের মানুষ অন্ধ, তাদের বিচার করার ক্ষমতা নাই’।
গতকাল শনিবার ঢাকার গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডির কেন্দ্রীয় সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একথা বলেন গণফোরাম সভাপতি কামাল।দেশ এখন সংবিধান অনুযায়ী চলছে না বলেও দাবি করেন তিনি। সরকারকে হুঁশিয়ার করে কামাল বলেন, ‘এসব করে পৃথিবী থেকে কেউ পার পায়নি, এই ধরনের মিথ্যা বলে কেউ পার পায়নি। সরকারকে বলব, সোজা কথা, আপনারা নির্বাচন দেন। প্রথমে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, নির্বাচন কমিশন হতে হবে সৎ ও স্বচ্ছ’।
এই দাবিতে জনগণকে আন্দোলনে শামিল করাতে ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘এখানকার কথা পাড়া-মহল্লায়, জেলা-উপজেলায়, গ্রামে-ইউনিয়নে পৌঁছাতে হবে। প্রত্যেক ইউনিয়ন থেকে শুরু করে জেলায় জেলায় মিটিং করেন। প্রত্যেক দিন মানুষকে বোঝান’।
বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ ভেঙে জন্ম নেওয়া জাসদ পরে নানা ভাগে ভাগ হয়; তারই একটি অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আ স ম আবদুর রব, যাদের কাউন্সিল হলো শনিবার। সম্মেলনের প্রথম পর্ব উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে তা উদ্বোধন করেন রব। দ্বিতীয় পর্বে রুদ্ধদ্বার কাউন্সিল অধিবেশন হয়। খবর বিডিনিউজের
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি মনে করি, জাসদ বাংলাদেশের রাজনীতির প্রথম সন্তান। জাসদ বেশ কয়েকটা খন্ডে বিভক্ত হয়েছে। আমি যতদিন বেঁচে থাকব, আসম আবদুর রবের জাসদকেই আসল মনে করব’।
অনুষ্ঠানে জেএসডি সভাপতি রব জাতীয় সরকারের দাবি জানিয়ে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবী শক্তির সংলাপের মাধ্যমে তা গঠনের রূপরেখাও তুলে ধরেন। আওয়ামী লীগকে হটাতে আন্দোলনে বিজয়ের আশা রেখে তিনি বলেন, ‘স্বৈরশাসনের পতনের পর রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সংকট নিরসনে জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। জাতীয় ঐক্য ভিত্তিক জাতীয় সরকারই স্বৈরশাসনের পতনের পর অনাকাঙ্খিত সংঘাত-সংঘর্ষ ও রক্তপাতের ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে’।
রবের সভাপতিত্বে ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আবদুল মঈন খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, বিকল্পধারার নুরুল আমীন ব্যাপারী, জেএসডির তানিয়া রব, মো. সিরাজ মিয়া বক্তব্য রাখেন।
৮ এমপির পদত্যাগ দাবি কাদের সিদ্দিকীর
একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পর সংসদে যোগ দেওয়ায় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে আসা কাদের সিদ্দিকী জোটের আট সংসদ সদস্যকে পদত্যাগ করে আইনসভা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট হয় নাই। সাড়ে তিনশ সদস্যের এই অবৈধ সংসদ। ভাত খাবার সময় যেমন ভাত পড়ে যায়, ঠিক তেমনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৮ জন সদস্যকে নির্বাচিত দেখানো হয়েছিল। তারা কিন্তু সংসদেও গেছে। যদি সংসদ অবৈধ হয়, আপনাদের যে ৮ জন গেছে- এরাও অবৈধ। হয় তারা পদত্যাগ করুন, নয় ৩০ তারিখে আগেই তাদের বহিষ্কার করুন’। কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘দ্বিচারিতা করা রাজনীতিতে শুভ কথা নয়। একদিকে থাকতে হবে, সেই দিক হচ্ছে মানুষের দিক। মানুষের দিক ছাড়া লাভ নাই, লাভ নাই, লাভ নাই’।
ধীরে ধীরে প্রতিরোধ: মান্না
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্না বলেন, ‘এই রাত গেলে পরে যে রাত আসবে, সেই রাত (২৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে কালো রাত। ওই রাতে বাংলাদেশের ১০ কোটি ভোটারের ভোট সমস্ত রাষ্ট্র মিলে লুট করে, ডাকাতি করে নিয়ে গেছে ’। এর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিবাদ করতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘সারাদেশে যে দুঃশাসন চলেছে, সেই দুঃশাসনের ইতিহাস লম্বা। সরকারের মন্ত্রীরা আছে, মন্ত্রীদের প্রধান আছেন। তিনি নিজে, তারা মাইকের সামনে এসে বক্তৃতা করছেন, এর চাইতে সুন্দর ভোট কিভাবে হতে পারে। তাদের চেহারার মধ্যে কান্নার চেহারা। মনে হয় যেন কত কষ্ট পেয়েছেন যে, আমরা এই ভোটটা মানিনি। আমি তাদের কষ্ট আরও বাড়ানোর জন্য বলতে চাই, মানি না, মানব না। আজ মানিনি, কাল মানিনি, যত দিন পর্যন্ত তাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে না পারব, ততদিন মানব না। এজন্যই আজকে রাত পোহালে যে রাত আসবে, সেইদিন থেকে শুরু করবো প্রতিবাদ এবং ধীরে ধীরে প্রতিরোধ’।
আগামিকাল রবিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে দুপুর ২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মান্না বলেন, ‘৩০ তারিখ আমার দল এবং আমি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের ব্যানারে প্রেস ক্লাবের সমানে দাঁড়াব। আমি পুলিশের কাছে দরখাস্ত করেছি যেন আমাদের পল্টনের মোড়ে অনুমতি দেওয়া হয়। ৩০ তারিখ আওয়ামী লীগ না কি গণতন্ত্র মঞ্চ বানাবে তাদের অফিসের সামনে। ওইখানে লোহ-লক্কর, কাঠ-খড়ি আনা হচ্ছে মঞ্চ বানানোর জন্য। ওরা যদি মঞ্চ বানাতে পারে, আমি মঞ্চ বানাতে পারব না- এটা মগের মুল্লুক না। আমি মঞ্চ বানাব, ওই মঞ্চে যাব, কথা বলব। যদি বাধা দেন, মানব না’।
রাজপথে ঐক্য, টেবিলে নয় : সাকি
বাম দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সাকি বলেন, ‘রাজপথের সংগ্রাম ছাড়া বর্তমান শাসককে টলানো যাবে না। রাজপথে সংগ্রামের জন্য প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের রাজপথে নামা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে সত্যিকার অর্থে কার্যকর রাজনৈতিক ঐক্য তৈরি হয়েছে রাজপথে, টেবিলে নয়। ফলে আমরা যদি প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী রাজপথে থাকি, সত্যিকার অর্থে সংগ্রাম গড়ে তুলি, তাহলে রাজপথে নতুন ঐক্যের সমীকরণ তৈরি হবে’।
সাকি বলেন, ‘ আমরা আপনাদের কাছে এই আহ্বান জানাব, আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী, সাধ্য অনুযায়ী রাজপথে এই সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করব। আপনারা আপনাদের অবস্থান থেকে রাজপথে এই লড়াইয়ে অংশ নেবেন এবং এই লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের একটা নতুন ভবিষ্যত আমরা রচনা করতে পারব’।