সম্ভাবনার শুঁটকি পল্লী আনোয়ারা উপকূলে

10

খালেদ মনছুর, আনোয়ারা

আনোয়ারা উপকূলে শুঁটকি তৈরির ধুম পড়েছে। উপকূলে বাঁশ দিয়ে মাচাং তৈরি করে চলছে শুঁটকি শুকানোর কাজ। অনেকে আবার সাগরে মাছ ধরার নৌকায়ও শুকাচ্ছেন শুঁটকি। এসব শুঁটকি নগরীর পাইকারী বাজার আছাদগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া স্থানীয়ভাবে খুচরায়ও বিক্রি হয় প্রচুর। মৎস্যজীবীরা জানান, দাম কম আর টাটকা শুঁটকির জন্য উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন শুঁটকি কিনতে ভিড় করেন উপকূলের শুঁটকি পল্লীতে। বাঁশখালীর ট্রলার থেকে মাছ কিনে এনে আনোয়ারা উপকূলে শুকিয়ে শুঁটকি করা হয়। তবে শ্রমিক সংকটে বিকাশ হচ্ছে না এ ব্যবসা। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শুঁটকির চাহিদা ব্যাপক। দেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকির বাজার চট্টগ্রামের আছাদগঞ্জ। সেখান থেকে সারাদেশের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হয় শুঁটকি। আর চট্টগ্রাম নগরীর সন্নিকটে আনোয়ারা উপজেলা। এখানে রয়েছে সামুদ্রিক মাছের ব্যাপক উৎস। আনোয়ারা উপকূলে তাই একটি মানসম্মত, আধুনিক শুঁটকি পল্লী গড়ে তুলতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। সরেজমিন দেখা যায়, আনোয়ারার গহিরা বাছা মিয়া মাঝিরঘাট এলাকায় ইসমাইল নামের একজন মৎস্যজীবী মাচাং থেকে শুঁটকি তুলে পরিবহনের জন্য প্রস্তুত করছিলেন। তাকে সহযোগিতা করছিলেন আরও একজন। মাচাংয়ে ও চাটাই বিছিয়ে শুকানো হচ্ছে নানা শুঁটকি।
ইসমাইল জানান, তারা ছয়জন মিলে এ মৌসুমে শুঁটকির ব্যবসায় নেমেছেন। বড় সাইজের প্রতি কেজি শুঁটকি ১ হাজার টাকায় পাইকারী দরে বিক্রি হয়। মাঝারি সাইজের এক কেজি শুঁটকি ৮০০ টাকা। যা পাইকাররা দেড় হাজার থেকে দুই হাজর টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। সপ্তাহে একদিন নগর থেকে পাইকাররা এসে শুঁটকি নিয়ে যান। একবার ১৫ থেকে ১৬টন শুঁটকি সরবরাহ করা হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে এক চালানে এ লাখ টাকা লাভ হয়।
অন্যদিকে স্থানীয় অনেক মৎস্যজীবী সাগরে মাছ ধরার নৌকায় শুঁটকি শুকান। তারা ছুরি শুঁটকির পাশাপাশি লইট্টা, ফাইস্সাসহ নানা প্রকার শুঁটকি শুকান। এসবের বেশিরভাগই স্থানীয়ভাবে খুচরা বাজারে বিক্রি করা হয়। সাগর থেকে টাটকা মাছ তুলে তা নৌকায় শুকানোর ফলে এসব শুঁটকি ভালো মানের ও খুব সুস্বাদু হয়। এজন্য পাইকারদের কাছে আনোয়ারার গহিরার শুঁটকির আলাদা একটা কদর রয়েছে।
স্থানীয়রা আশা প্রকাশ করে বলেন, সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে আনোয়ারায় শুঁটকির ব্যবসা আরো ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়বে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখা সম্ভব হবে।
স্থানীয় মৎস্যজীবী মো. হারুন বলেন, এখানে বড় ঘাট না থাকায় মাছ ধরার ট্রলার ভিড়ে না। ফলে আমাদেরকে বাঁশখালী ও নগরের ফিশারি ঘাট থেকে মাছ এনে শুঁটকি করতে হয়। তার উপর স্থানীয় শ্রমিকদের মজুরি বেশি। সরকার এখানে নজর দিলে একটি মানসম্পন্ন শুঁটকি পল্লী গড়ে তোলা সম্ভব।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. রাশিদুল হক বলেন, আনোয়ারা উপকূলে শুঁটকির ব্যবসা নানা সীমাবদ্ধতায় বিকাশ হচ্ছে না। সরকারিভাবে আমাদের সহায়তার পরিমাণ সামান্য। তারপরও আমরা তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্গানিক পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নিব।