সম্ভাবনার পর্যটনশিল্প দেশের পর্যটন স্পটসমূহ আন্তর্জাতিক মানের হোক

23

 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লিলাভূমি বাংলাদেশ। পর্যটনের তাবৎ সৌন্দর্যে ভাস্বর এদেশ। কী নেই এখানে ? আকাশে হেলান দিয়ে ঘুমায় পাহাড়। ঝর্ণার উচ্ছল নৃত্যে দুধের নহর। নদীরা বিধৌত করে তটেব কদম। লেকের স্বচ্ছজলে পানোখির ডুব। সমুদ্রের চড়াই উৎরাইয়ে সুন্দর হয় সৈকতের পা। চার শতাধিক ছোট-বড় নদীবিধৌত সমতল ভূমিতে উঁচু পাহাড়, টিলা, হাওর-বাউর, পুকুর-দিঘি, বিশেষায়িত বনাঞ্চলসহ সুজলা সুফলা বাংলার অপরূপ রূপে মুগ্ধ কবি জীবনানন্দ দাশ বলেন ‘ বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি তাই / খুঁজিতে চাইনা আর পৃথিবীর রূপ’। রূপসী বাংলার কবি বাংলার প্রকৃতির এক অসাধারণ চিত্র তুলে ধরেছেন তাঁর কবিতায়। মাইকেল মধূসুদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কবিরা বাংলার রূপের মায়াজালে বন্দী।
দেশের অধিকাংশ পর্যটন স্পট বৃহত্তর চট্টগ্রামে। খুলনার সুন্দরবন, কুমিল্লার ময়নামতি, সিলেটের চা-বাগান, জাফলং, ফেনির রাজা মহিপালের দিঘি, দিনাজপুরের রামসাগর, কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকত ইত্যাদি বাদ দিলে চট্টগ্রামের অন্তর্গত খাগড়াছড়ি পার্বত্যজেলা, রাঙামাটি পার্বত্যজেলা, বান্দরবান পার্বত্যজেলা, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ, সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়, পতেঙ্গা সমুদ্র সেকত, আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকত, বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত, মহেশখালীর আদিনাথ পাহাড়, চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারিপার্ক, চুনতি অভয়ারাণ্য, বাঁশখালী ইকুপার্কসহ মিরসরাই হতে টেকনাফ পর্যন্ত অসংখ্য পর্যটন স্পট দেশ বিদেশের ভ্রমণ বিলাসীর আরাধ্য। বিশ্ব বিখ্যাত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, রাঙামাটির কাপ্তাই লেক, খাগড়াছড়ির আলু টিলা, সাজেক এর সাথে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পর্যটন স্পটের সংখ্যা অনেক। পাহাড়ি প্রকৃতির সবুজ সমারোহ নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের আধার। বান্দরবানে মেঘলা, নীলাচল, নীলগীরি, থানছির রেমাক্রি জলপ্রপাত, নাফাখুম ছাড়াও নতুন পর্যটন স্পট তমাতুঙ্গী দেশের পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছে।
বর্তমান সরকার দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবানে তৈরি হচ্ছে নতুন পর্যটন স্পট। এখানকার পাহাড়ি প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের পাশাপাশি দেশের সমুদ্র সৈকত সমূহেও নতুন নতুন পর্যটন স্পট তৈরি হচ্ছে। বিষয়টা দেশের পর্যটন শিল্পের জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক। তবে দেশের দীর্ঘতম সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের যেরকম উন্নয়ন হওয়ার কথা, তাতে আমরা অনেকখানি পিছিয়ে রয়েছি। অন্তত বিদেশের সমুদ্র সৈকতের পর্যটন সুবিধার তুলনায় বিদেশি পর্যটকরা আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ। আমরা বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো সার্বিক সুযোগ সুবিধা এখনো নিশ্চিত করতে পারিনি। দেশের পার্বত্য অঞ্চলের পর্যটন স্পট সমূহে যাতায়াতের আরো সহজতর ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে আরো আকর্ষনীয় ভাবে সাজানো জরুরি। দেশের পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তার সার্বিক নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। বিদেশের পর্যটন স্পট সমূহে যে ধরনের পর্যটন সুবিধা রয়েছে তা দেখে দেশের পর্যটন স্পটসমূহের উন্নয়নে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে পর্যটন মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্ত গ্রহণে এগিয়ে আসতে হবে। পরিকল্পিতভাবে দেশের পর্যটন স্পটসমূহের উন্নয়নে পর্যটনমন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে দেশের পর্যটন শিল্পে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হবে। দেশের পর্যটন শিল্পের টেকসই উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ এবং পর্যটনবান্ধব পরিবেশ তৈরি করার উপর জোর দেয়া পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন এবং বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো পরিবেশ আমরা উপহার দিতে পারলে, দেশের পর্যটন খাতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।
অবশেষে কবির ভাষায় উচ্চারণ করছি …

‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে
আমার জন্মভূমি,
সে যে আমার জন্মভূমি’।