‘সম্প্রীতির ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন অত্যাবশ্যক’

59

নিজস্ব প্রতিবেদক

‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ১৭ মার্চ হতে ২৬ মার্চ পর্যন্ত এর দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষরাষ্ট্র প্রধানদের অংশগ্রহণে সরকারি-বেসরকারি, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালন করছে। এরই মধ্যে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটানের রাষ্ট্র প্রধানগণ বাংলাদেশে এসে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। আজ ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন, যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি সম্প্রীতি সমৃদ্ধি উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সম্ভাবনায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন অত্যাবশ্যক বলে মনে করছে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন’।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের এই যৌক্তিক মন্তব্য ও বিশ্লেষণ এবং সমর্থন উপস্থাপন করেন সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও মানবাধিকার বিশ্লেষক অধ্যাপক মাওলানা আবেদ আলী। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া, উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহম্মেদ আবুল কালাম, কেন্দ্রীয় পরিচালক লেখক ও কলামিস্ট ড. মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী, কৃষিবিদ ড. আজাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনের বক্তারা বলেন, ‘১৯৭১ সালে রক্তঝরা দিনগুলোতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের হাত থেকে প্রাণ বাঁচানোর জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতে প্রায় এক কোটি বাঙালি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল। ত্রিশ লক্ষ মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করেছিল। আমরা জানি বাংলাদেশের ভ‚খন্ড তিন দিকে ভারত একদিকে সাগরবেষ্টিত, তাই ভারতের সাথে সু-সম্পর্ক রেখে সকল অধিকার আদায় যুক্তি সঙ্গত। ইতোমধ্যে আপনারা জানেন, গত ৯ মার্চ ২০২১ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফেনী নদীর উপর নির্মিত মৈত্রী সেতু উদ্বোধন করেন।
এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ আসাম, মিজোরাম এবং মনিপুরের মধ্যে যোগাযোগ উন্নত হবে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। পূর্বাঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের একটি জীবন রেখা হয়ে উঠবে। ভারত হতে পণ্য চলাচলের জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে, এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার নতুন যুগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি রাজনৈতিক সীমানা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাঁধা হওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশের সাথে শুধু ভারতই নয়, নেপাল ও ভুটানের বাণিজ্য বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে। বাংলাদেশ অবস্থানগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযুক্ততার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হতে চায় এবং ভারতের সাথে ক্রমোন্নয়নশীল সীমান্ত পারাপারে পরিবহন ব্যবস্থা আঞ্চলিক বাণিজ্যের একটি ভ‚মিকা পালনে সক্ষম করে তুলবে। ২০১৯ সালের আগস্টে দুই দেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ যৌথ নদী কমিশনের সভায় মিলিত হয়েছিলেন। এই সভায় মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার, এবং ফেনী এই ৭টি নদীর জলবন্টনের ব্যাপারে তারা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ২০১৯ সালের ৩-৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর শেষে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ বিবৃতিতে যৌথ নদী কমিশনের প্রশংসা করা হয়’।
তারা জানান, ২০১৩ সালে ৪ মার্চ টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদনের সূত্র আপনাদের সামনে স্মরণ করিয়ে দিতে হয়, টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছিল, ‘অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ১৯৭০ সালের পর থেকে প্রথম ভারতীয় রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরের উজ্জ্বলতা ছায়াচ্ছন্ন করে দিয়েছে, কারণ বিরোধীদলীয় নেতা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রধান খালেদা জিয়া নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাত বাতিল করেছিল’। উক্ত ঘটনার ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক অঙ্গণে চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছিল। একটি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির পরিবেশ যেমনই হোক না কেন এ ঘটনা বৈদেশিক নীতির আওতায় পরে না। এ বিষয়ে বলতে হয় প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাষ্ট্রপতির সাথে এ আচরণ বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জা ও দুঃখজনক ছিল।
সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে একটি মহলের অপতৎপরতা ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বাংলাদেশের তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতার প‚র্ব নির্ধারিত সাক্ষাৎ বাতিলের ঘটনা মনে করিয়ে দেয় এবং তা একই সূত্রে গাঁথা বলে ধারণা করছি। ধর্মীয় সংগঠনগুলোর কাছে আমাদের জিজ্ঞাসা- মুসলিম বিশ্বের কোনো দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদীকে ধর্মবিদ্বেষী আখ্যায়িত করে বয়কট বা নিষিদ্ধ করেছে কি না? আশা করি বলতে পারবেন না। তাই বলছি আমাদের দেশের ধর্মীয় দলগুলোকে বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে আরো সচেতন হতে হবে বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সংযুক্ততার কেন্দ্রস্থল হিসেবে আবির্ভ‚ত হচ্ছে। এর অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন।
এই সংযুক্ততা শুধু বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যেই নয়, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ও নেপালের মধ্যে সংযুক্ততা বৃদ্ধি করবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পরিবহন সংযুক্ততার ফলে বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের শতকরা ১৭ ভাগ এবং ভারতের জাতীয় আয়ের শতকরা ৮ ভাগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সফলতা কামনা করে, যা উভয় দেশের জন্য উন্নয়ন, অগ্রগতি, শান্তি, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির বার্তা বয়ে আনবে। আমরা মনে করি, এই সফর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও দ‚রদর্শী নেতৃত্বের এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব ও আন্তরিকতার সাক্ষ্য বহন করে।