সভাপতি বহাল থাকলেও সম্পাদককে ঘিরে আপত্তি!

48

নিজস্ব প্রতিবেদক

৪১ নম্বর পতেঙ্গা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল সকালে পতেঙ্গা বাটারফ্লাই পার্ক সংলগ্ন এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় এ সম্মেলন। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন শেষে বর্তমান সভাপতি সালেহ আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক পদে নুরুল আলমকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বহাল রাখা হয়েছে। তবে সভাপতি পদে সালেহ আহমদ ছাড়া আর কেউ প্রার্থী না থাকায় তাকে সভাপতি করা নিয়ে কেউ আপত্তি তুলেননি। সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন প্রার্থী থাকায় এ পদে নুরুল আলমের নাম ঘোষণা করলে তাঁকে নিয়ে আপত্তি তুলেন অপর দুই প্রার্থী। অন্যদের মতামতকে উপেক্ষা করে সাধারণ সম্পাদক পদে নুরুল আলমের নাম ঘোষণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। প্রথম অধিবেশন শেষে দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতি পদে সালেহ আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক পদে নুরুল আলমের নাম ঘোষণা করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। সাধারণ সম্পাদক পদে নুরুল আলমের নাম ঘোষণা করলে আব্দুল হালিম ও মো. আলমগীর নামে দুই প্রার্থী আপত্তি তুলেন। এসময় মো. আলমগীর ও আব্দুল হালিমকে দুটি পদ দেয়ার কথা বললেও তারা মানতে চাননি। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন তাদের সাথে বৈঠক করে পরিস্থিতি সামাল দেন।
এর আগে সকালে প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। তিনি বলেন, আমাদের অগোচরে কোনো অপশক্তি যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে তৃণমূলস্তরের নেতাকর্মীদের সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। এই তৃণমূলস্তরটি হলো আওয়ামী লীগের মূল শক্তি। তাদেরই প্রধান দায়িত্ব সমাজে যেন অপশক্তির বীজ বপিত না হয় এবং মাটি খুঁড়ে অপশক্তির বীজ তুলে ফেলে সমাজকে পাপ, অনাচার ও কলুষতামুক্ত করতে হবে। একনাগাড়ে ১৪ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকায় আত্মতুষ্টি ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের অবকাশ নেই। কেননা আজ দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশে নানামুখী চক্রান্তের জাল বোনা হচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ শক্তি ও সক্ষমতা বিচার-বিবেচনায় সব সময় সক্রিয় ও গতিশীল এবং দল ও জাতির কঠিন দুর্দিনে কখনো কক্ষচ্যূত হয়নি এবং রাজপথেই সক্রিয় ছিল ও আছে। এ ধারাবাহিকতা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের জন্মের পর থেকে তাকে ধ্বংস করার জন্য নানাভাবে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মেই আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়নি। বরং অধিকতর শক্তিশালী হয়ে টিকে ছিল, টিকে আছে এবং টিকে থাকবে। কারণ আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস বন্দুকের নল নয়, জনগণ। মাছ যেমন পানির মধ্যে পরমায়ু পায়, ঠিক তেমনিই আওয়ামী লীগ জনগণের মাঝে পরমায়ু পেয়েছে। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে জনগণ যতদিন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় চাইবে, ততদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে। এর আগে যারা অবৈধভাবে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দেওয়ার অপচেষ্টা করবে জনগণই তাদের ধ্বংস করে দেবে এবং ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে।
সম্মেলনের উদ্বোধক চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের মতো এত অর্জন, সাফল্য ও উন্নয়ন আর কোনো সরকারের আমলে হয়নি। অথচ ঈর্ষান্বিত একটি মহল যাদের জন্ম ক্যান্টনমেন্টে এবং পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করে অতীতে জনগণকে জিম্মি করে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে, তারা কিন্তু এসব কিছুই দেখেন না। তারা চোখ থাকিতে অন্ধ। এরা মিথ্যাচারে পটু।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রের নির্দেশনা ও পরামর্শ অনুযায়ী সংগঠনের স্তর ও কাঠামোকে বিনির্মাণ করে চলেছে। আমরা সাংগঠনিক সুদৃঢ় ঐক্য ও শৃঙ্খলাকে যথাযথ অনুসরণ করে চলেছি। এ ক্ষেত্রে কখনো ব্যত্যয় ঘটতে দেওয়া হয়নি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের শেষের দিকে অথবা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সংগঠনের তৃণমূলস্তরের কাঠামো ও নেতৃত্ব সৃষ্টিতে উদ্যোগী হয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের ব্রত ও একমাত্র লক্ষ্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ণাঙ্গ তিনটি এবং তিনটি আংশিক আসন সহ মোট ৬টি আসনে কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তাঁর বিজয় শতভাগ নিশ্চিত করা। এই ব্রত ও লক্ষ্য পূরণে মহানগর আওয়ামী লীগ তৃণমূলস্তরে নতুন রক্তের সঞ্চালন ঘটাতে আগ্রহী। আমরা চাই তৃণমূলস্তরের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে প্রবীণ ও অভিজ্ঞদের সাথে নতুনের মেলবন্ধন ঘটাতে।
পতেঙ্গার বাটার ফ্লাই পার্কে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছালেহ আহমদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, কার্যনির্বাহী সদস্য কামরুল হাসান বুলু, পতেঙ্গ থানা আওয়ামী লীগের আবদুল হালিম ও এম.এম ইসলাম। সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এড. সুনীল কুমার সরকার, উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আলহাজ শফর আলী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক হাজী আবু তাহের, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য জাফর আলম চৌধুরী, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ, হাজী বেলাল আহমেদ, ৪০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন আজাদ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গতকাল ৪১ নং পতেঙ্গা ওয়ার্ডের সম্মেলনের মধ্যদিয়ে নগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ওয়ার্ড সম্মেলন শুরু হয়। কোরবানের সপ্তাহখানেক পর থেকে পুরোদমে ওয়ার্ড সম্মেলন শুরু হবে।