সব সহকর্মীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বেঁচে যাওয়া সালাম

3

আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই

বাবুর্চি আব্দুস সালামেরও সাগরে সলিল সমাধি হতে পারতো অন্য আট সহকর্মীর মতো। কিন্তু ভাগ্যক্রমে ড্রেজার ডুবির ৩০ মিনিট আগে সাঁতার না জানায় ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে বেড়িবাঁধে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসেন তিনি। এরপর তীব্র বাতাস ও সাগর উত্তাল হলে তার সঙ্গে থাকা একই ড্রেজারের ৮ শ্রমিক নিখোঁজ হন। তাদের হারিয়ে বাকরুদ্ধ সালাম। সালামরা সবাই ওই ড্রেজারেই থাকা খাওয়াসহ সবই করতো।
নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সালাম সারাক্ষণ সাগরের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। গত ৪ দিন এভাবেই কেটেছে তার। ভুলতে পারছেন না সহকর্মীদের সেই বিভীষিকাময় মূহুর্ত।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গত সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে উপজেলার ১৬নং সাহেরখালি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বসুন্ধরা ৩নং জেটি এলাকা থেকে প্রায় ১ হাজার ফুট দূরে বঙ্গোপসাগরে ড্রেজার ডুবির এই ঘটনা ঘটে।
আবদুস সালাম জানান, ড্রেজারে রান্না করতেন তিনি। তারা সবাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে বেপজার ঠিকাদার খোকন কনস্ট্রাকশনের হয়ে সাগরে বালু তোলার কাজ করছিলেন। সিত্রাংয়ের প্রভাবে সোমবার সন্ধ্যা ৭ টার পর থেকে সাগর উত্তাল হয়ে উঠে পাশাপাশি ঝড়ো বাতাস বয়ে যায়। ড্রেজার নতুন হওয়ায় মিস্ত্রিসহ সবাই ড্রেজার ছেড়ে যেতে চাচ্ছিল না। তীব্র বাতাসের সঙ্গে সাগরে ঢেউ শুরু হলে পাশের অন্য ড্রেজারের লোকজন ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে এসে তাদের কিনারে যেতে অনুরোধ করেন।
তিনি আরো বলেন, আমি সাঁতার না জানায় ড্রেজারের মিস্ত্রি শাহীন মোল্লা আমাকে নৌকায় তুলে দেয়। বাকি ৮ জন ড্রেজারে থেকে যায়। পাড়ে ফেরার কিছুক্ষণ পর জানতে পারি আমাদের ড্রেজার ডুবে যাওয়ায় সবাই আটকা পড়ে সেখানেই মারা গেছে। তখন থেকে আমার হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। সারাক্ষণ শুধু ড্রেজারের দিকে তাকিয়ে থাকি, যদি একজনও বেঁচে ফেরে।
আব্দুস সালামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার মজু চৌধুরীঘাট এলাকায়। দুই যুগ ধরে বালু তোলার ড্রেজারে রান্নার কাজ করেন তিনি। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের রাতে ড্রেজারে ডুবে মারা গেছেন তার আট সহকর্মী। একমাত্র তিনিই বেঁচে আছেন।