সব দলের প্রার্থী থাকায় নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং

46

নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, পরষ্পরের মধ্যে আমেজ থাকবে। সেটা যেন কন্ট্রোলের বাইরে না যায়, নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হোক সেটা আমরাও চাই। অতীতে চট্টগ্রামের সব নির্বাচন ভালো হয়েছে। এটাও জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় একটু আবেগ থাকবে। একাধিক দলের প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করায় এ নির্বাচন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হবে।’ তিনি গতকাল সকাল ১০টায় সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা এখনো ইভিএম নিয়ে ভয় পাই। এক জায়গায় ভোট দিলে আরেক জায়গায় চলে যায় এমন সন্দিহান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে ব্যালট বক্স, ব্যালট পেপার ছিনতাই করা যায়। ইভিএম সে সুযোগ দেয় না। ইভিএম ভোট শুরুর আগে কেউ উন্মুক্ত করতে পারবে না। কোনো নেটওয়ার্কের সাথে সংযোগ নেই। যন্ত্রটা যদি কেউ নিয়ে যায় সে এটি ছাড়তে পারবে না। ইচ্ছেমত ভোট দেয়ার সুযোগ নেই। একমাত্র যে ভোটারের তথ্য সেখানে আছে সে ছাড়া কেউ এটি ছাড়তে পারবে না। ইভিএমে ভুল করে ভোট দিলেও তা আবার সংশোধন করা যায়। একবার ভোট হলে দ্বিতীয়বার রেসপন্স করবে না ইভিএম। এ যন্ত্র কেউ নিয়ে গেলেও ফেলে দিতে হবে। এ কারণে একটু ঝুঁকিমুক্ত থাকা যাবে। ব্যালট পেপারে যে সমস্যাগুলো হয় তেমন কোনো সমস্যা ইভিএমে হবে না।
ইসি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি একটু নিরপেক্ষভাবে দেখলে কোনোধরনের সমস্যা হবে না। নির্বাচন ভালো হলেই ইসির পক্ষে কতটুকু বলা হয় জানি না, তবে ছোট ত্রূটি বিচ্যুতি কিন্তু কমিশনের উপর বর্তায়। আমরা চাই না নির্বাচন কমিশন কোনো একটা আসনে নির্বাচন নিয়ে বিতর্কিত হোক। নির্বাচন থেকে গেজেট হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনকালীন সময়টা বিরাজ করে। এ সময়ে কোনোধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে অবনতি না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। যে জায়গাগুলোয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে এরকম ম্যাসেজ দিতে হবে। সম্ভাবনাগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। সঠিক তথ্যটা আমাদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। সবধরনের পরিস্থিতি কন্ট্রোল করতে পদক্ষেপ নেয়া উচিত। যে ধরনের ফোর্স লাগবে তা দিতে প্রস্তুত আছি।
নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বেগম কবিতা খানম বলেন, তফসিল ঘোষণার পর পোস্টার থাকার কথা না। প্রতীক বরাদ্দের আগে যেন কোনো পোস্টার না থাকে। এটা কঠিন কোথায়? চাকরি যাবে না, খুব বেশি হলে বদলি হবেন। তখন হয়তো একটু কষ্ট হবে। সাহসের সাথে কাজ করলে সবাই ভালোটাই দেখবে। আমি চাই না সেখানে কোনো পোস্টার থাকুক। নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখবেন। চ্যালেঞ্জ যত কাজ করাই তত মজা। চ্যালেঞ্জ থেকেই কাজ করে সফলতা আনতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা সভায় বোয়ালখালীর ইউএনও ও ওসির না থাকার বিষয়ে কবিতা খানম বলেন, বোয়ালখালীতে নির্বাচন হচ্ছে অথচ ওসি ও ইউএনও কেন নেই। চিঠি দিয়ে জানাতে হবে কেন? ফোন দিলেই তো হয়ে যায়। সভায় দুইজনকে খুবই দরকার ছিল। ওসি বোয়ালখালী নিয়ে যে তথ্য দিত তা আমাদের কাজে আসতো।
অনুষ্ঠানের সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘এটি উপ-নির্বাচন হলেও জাতীয় নির্বাচনের মতো গুরুত্ব দিতে হবে। এ আসনে লড়াই হবে ত্রিমুখী। ইতোমধ্যে ১৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়েছি। যতগুলো ফোর্স লাগবে দিব। সকল প্রার্থীকে আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। আমরা এখন মুখে বলে যাচ্ছি। প্রচারণা শুরু হলে অ্যাকশনে চলে যাবো।’
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ১৭০টি ভোটকেন্দ্রের ৮৫০টি কক্ষে ভোটগ্রহণ হবে। প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেয়া হবে। বোয়ালখালীর আটটি ইউনিয়ন ও চসিকের পাঁচটি ওয়ার্ডে চার লক্ষ ৭৫ হাজার ৯৯৬ জন ভোটার আছেন। সমন্বিত উদ্যোগেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। দেশে যে এখনো নির্বাচন সুন্দর হতে পারে আমরা সে লক্ষ্যেই এ আসনে কাজ করছি।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিজিবি পরিচালক লে. কর্নেল মুনির হাসান, পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা, উপ-পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক, ডিজিএফআই ডিএডি আজিজুর রহমান খন্দকার, পুলিশ সুপার (সিটিএসবি) মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ, র‌্যাব-৭ এর সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান মামুন, আনসার পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান, এনএসআই যুগ্ম পরিচালক মো. শরিফুল হাসান, জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন খান, পাঁচলাইশ নির্বাচন কর্মকর্তা সাহিদ হোসাইন, চান্দগাঁও নির্বাচন কর্মকর্তা জাকিয়া হোসনাইন, বোয়ালখালী নির্বাচন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম প্রমুখ।