সব দলকে আবার সংলাপে ডাকবেন প্রধানমন্ত্রী

43

নির্বাচনের আগে যেসব দল এবং জোট সংলাপে অংশ নিয়েছে, তাদের ফের গণভবনে ডেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপে বসবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঐক্যফ্রন্ট-যুক্তফ্রন্টসহ ৭৫টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গণভবনে সংলাপ হয়েছিল। এখন নির্বাচন শেষ হয়েছে, আমাদের নেত্রী গতকাল (শনিবার) আমাদের সঙ্গে ওয়ার্কিং কমিটি ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ বৈঠকে বলেছেন, যাদের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে তাদেরকে আমন্ত্রণ করবেন, আহŸান করবেন, নিমন্ত্রণ করবেন।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ‘জাতীয় সংলাপ’ করার ঘোষণা দেওয়ার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমন বার্তা এল।
বিএনপিসহ কয়েকটি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দল নিয়ে গতবছর ১৩ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সাত দফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। সংসদ ভেঙে, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ছিল তাদের ওই সাত দফার মধ্যে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য ইসির প্রস্তুতির মধ্যেই ওই সাত দফা দাবিতে সংলাপের আহবান জানানো হয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে।
অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই সে আহবানে সাড়া দিয়ে কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে গণভবনে আলোচনায় বসেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর একে একে বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে সংলাপ করেন সরকারপ্রধান। সাত দফার একটিও পূরণ না হলেও ‘আন্দোলনের অংশ হিসাবে’ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
এরপর ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে মাত্র আটটি আসন পাওয়া ঐক্যফ্রন্ট শপথ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে অবিলম্বে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানায়। আর কামাল হোসেন জোটের পক্ষ থেকে জাতীয় সংলাপ করার ঘোষণা দেন।
ঐক্যফ্রন্টের ওই কর্মসূচিকে দুদিন আগে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের। তিনিই গতকাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চার জেলার নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকের আগে পুনরায় সংলাপের বার্তা দেন। খবর বিডিনিউজের
কাদের বলেন, তাদের সঙ্গে কিছু মতবিনিময় করবেন (প্রধানমন্ত্রী) এবং তাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকবে। এ ব্যাপারে আমরাও সবাই একমত, যারা সংলাপ এসেছিলেন তাদেরকে আবারও নেত্রী সংলাপে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। একসঙ্গে সবাইকে দাওয়াত দেওয়া হবে। তবে কবে নাগাদ এ সংলাপ হতে পারে সে বিষয়টি স্পষ্ট করেননি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি বলেন, সেটা খুব শিগগিরই জানিয়ে দেওয়া হবে। সকল রাজনৈতিক দল গণভবনে আমন্ত্রিত। ঐক্যফ্রন্ট আছে, যুক্তফ্রন্ট আছে, ১৪ দল আছে, জাতীয় পার্টি আছে, অন্যান্য যেসব দল আছে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। যাদের সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন তাদেরকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
আগামী উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে তাতে আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে কি না- এমন প্রশ্নে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রতিপক্ষকে আমরা কখনো দুর্বল মনে করি না। সেটা মনে করেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। সেদিক থেকে বিএনপি বা তাদের ফ্রন্ট নির্বাচনে যদি আসে, সেক্ষেত্রে তাদেরকে স্বাগত জানাই।
প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক নির্বাচনেরও আলাদা একটি মজা আছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে, আমরা সেই রকম নির্বাচনই আশা করি। তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এ রকমই আশা করব।
নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের প্রার্থী করা ‘ভুল’ ছিল বলে যে স্বীকারোক্তি কামাল হোসেন দিয়েছেন, সে বিষয়েও ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।
উত্তরে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, তিনি তো ‘জেনে শুনে বিষ করেছি বিষ পান’-বিষয়টি এমন। আমাদের দেশের নেতারা একেক সময় একেক কথা বলেন, কামাল হোসেনের বক্তব্য এখানে আমরা স্ববিরোধী বলে মনে করছি।
কেননা তিনি জেনে শুনেই তো বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করেছেন। জামায়াত ছাড়া তো বিএনপির কোনো অস্তিত্ব নেই, বিএনপি মানেই জামায়াত, জামায়াত মানে বিএনপি। এ অবস্থায় কামাল হোসেন সাহেব জেনে শুনে কেন এত বড় ভুল করলেন? এ ভুলের খেসারত তাকেই দিতে হবে।
ঢাকা ও আশপাশের জেলা, উপজেলা, পৌরসভায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভা মেয়রদের নিয়ে এই যৌথ সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।