‘সবুজ মেলা’ না হলে গাছ কেনা হত না!

188

সূর্যটা রক্তিম হয়ে পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে। প্রশান্তির বাতাস বইছে মেলাজুড়ে। ওই সমটায় ‘সবুজ মেলায়’ এসেছেন গৃহিনী তানিয়া ফয়সাল। সংসারের ব্যস্ততায় কখনও এভাবে সবুজের সাথে মেশা হয়নি তাঁর। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ‘ছোটকালে গ্রামে বড় হয়েছি। স্কুলের গন্ডি পেরুতেই শহরে পাড়ি। তারপর বিয়ে। সংসার আর নিজের পড়াশোনায় কেটে গেল অনেকগুলো বছর। ছাদের কোণায় বা গ্রামে গেলে সবুজ দেখতাম। তবে কখনও শহরের বুকে এতো সবুজ একসাথে দেখিনি। বেলকনির জন্য গাছ কিনেছি। বাসার জন্য টবও। তবে এমন সবুজ মেলা না হলে গাছ কেনা হত না।’
তিলোত্তমা চট্টগ্রামের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীর কাজীর দেউড়িতে চলছে ‘সবুজ মেলা’। মেলায় আসা তানিয়া ফয়সাল মেলা সম্পর্কে নিজের মতামত জানাতে গিয়ে এমনটা বলেন। শুধু তানিয়া নন শহরের অনেকেই প্রথমবার গাছ কিনেছেন এই মেলা থেকে। কেউ কৌতুহল থেকে দেখতে এসেছেন, কিনেছেন গাছ। সবাই গাছের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তবে কখনও গাছ কিনে কোথাও লাগানো হয় না। শহরের বুকে সবুজের এমন আয়োজনে অনেকেই সেই প্রয়োজনীয়তাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। মেলায় আগত ক্রেতাদের সাথে কথা বলে এসব জানা গেছে।
মেলা শুরু হয়েছে গেল মাসের ২৫ আগস্ট এবং শেষ হবে ৯ সেপ্টেম্বর। প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা। তবে আজ শুক্রবার হওয়ায় থাকছে আরও জমকালো আয়োজন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিখ্যাত শিল্পীরা গাইবেন সবুজ মেলার মঞ্চে। এছাড়াও আজ বিকাল ৫টায় থাকছে চট্টগ্রাম সিটি মেয়রের উপস্থিতিতে প্যানেল আলোচনা ‘সবুজায়নে আলাপ’।
দিনের শুরুতে দর্শনার্থী ও ক্রেতার সমাগম কম হলেও পড়ন্ত সূর্যের সাথে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে লোকসমাগম। সন্ধ্যা হতে হতে মেলা প্রাঙ্গণ জুড়ে বসে মানুষের আসর। আবার অনেকে নতুন প্রজন্মকে গাছের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে মেলায় নিয়ে এসেছেন। এমনই একজন মা কাজী মুনিয়া ইসলাম। তিনি তার সন্তানকে নিয়ে মেলায় এসেছেন সবুজ গাছ দেখাতে। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, এই প্রজন্মের শিশুদের শৈশব অনেকটা যান্ত্রিক হয়ে গেছে। সবুজ আর গাছের সান্নিধ্যে তাদের যাওয়ার সুযোগ নেই। পত্রিকায় এমন মেলার খবর দেখে ছেলেকে নিয়ে এসেছি। যাতে সে গাছগুলো চিনতে পারে। আর আমি মা হিসেবে ছেলেকে সবুজের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। তার যে গাছগুলো পছন্দ হচ্ছে সেগুলো কিনে দিচ্ছি।
মেলায় ঠিক মাঝখানে রয়েছে একটি সবুজ প্রজাপতি! দেখতে অনেকটা ওইরকম হলেও বাস্তবে সবুজ দিয়ে প্রজাপতি সদৃশ ‘ফটো বুথ’ করা হয়েছে। যেখানে ছবি তুলেননি এমন দর্শনার্থী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
মেলায় পঞ্চাশের অধিক স্টল রয়েছে। এর মধ্যে অবসরে শখের বাগান, সবুজ নার্সারী, বনরূপা নার্সারী, শিমুল পারুল নার্সারী, বাঁশবন নার্সারী, চিটাগাং নার্সারী, ব্র্যাক নার্সারী, ফতেয়াবাদ নার্সারী, চন্দন নগর বনফুল নার্সারী,
আরণ্যক নার্সারী, নিউ কসমো নার্সারী, কসমো নার্সারী, আরএনজে নার্সারী, তিলোত্তমা চট্টগ্রাম, অবসরে শখের বাগান, ন্যাশনাল নার্সারী, বাংলাদেশ নার্সারী, বাহাদুর নার্সারী, পুষ্প নার্সারী, এইচ বি আর নার্সারী ও কাঁশবন নার্সারীতে শহুরে বাড়ির ছাদবাগানের গাছসহ সবধরনের গাছের চারা বিক্রি হচ্ছে।
তবে সবুজের মাঝ্যে অনন্যতা ছড়িয়েছে একটি স্টল। সেটি হল ‘বিডি ক্লিন’। গাছ বিক্রি করতে নয়, মানুষকে সচেতন করতে মেলায় স্টল করেছে বিডি ক্লিন নামের সংগঠনটি। মেলায় আসা যেকেউ স্টলটিতে খালি প্লাস্টিকের বোতল জমা দিলে উপহার পাচ্ছেন একটি গাছের চারা। নির্ধারিত জায়গায় ময়লা ফেলায় উৎসাহ সৃষ্টির লক্ষ্যে এমন অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনঠি। গাছের স্টল ছাড়াও রয়েছে চাঁদপুর মৃৎশিল্প, সিরাজ ভাইয়ের নিজ হাতে তৈরি পঞ্চরসের আচার ও সুন্দরবনের আশ্চর্য গুণসম্পন্ন মধুর স্টল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলার দুটো স্টলের প্রতি ক্রেতাদের ছিল চরম আকর্ষণ। একট ‘বনসাই ড্রিমস’ ও অন্যটি ‘তিলোত্তমা চট্টগ্রাম’। বনসাই গাছের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে স্টলটি। অন্যদিকে ক্যাকটাস ও ছাদবাগানের গাছের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে তিলোত্তমা চট্টগ্রাম।