সবুজ প্রযুক্তির জন্য পৃথক নীতি নির্ধারণের দাবি

36

চিটাগাং চেম্বার, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলাপমেন্ট (বিল্ড) এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্স স্টাডি’র (বিসিএএস) যৌথ আয়োজনে ও ব্রিটিশ কাউন্সিল’র আওতাধীন প্রমোটিং নলেজ ফর একাউন্টেবল সিস্টেমের (পিআরওকেএএস) সহায়তায় ‘প্রমোটিং গ্রীন টেকনোলজি ইন বাংলাদেশি ইন্ডাস্ট্রি : অপরচ্যুনিটিস এন্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক ডায়ালগ গতকাল শনিবার সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতির বক্তব্যে চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল বলেন, মধ্য আয়ের এবং ক্রমান্বয়ে উন্নত দেশে পরিণত করতে হলে বাংলাদেশে অবশ্যই শিল্পায়ন বৃদ্ধি করতে হবে যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারসহ অন্যান্য সম্ভাবনাময় শিল্প যেমন, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্লাস্টিক, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি শিল্পে প্রচুর অগ্রগতি সাধিত হবে। তবে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গ্যাস নিঃসরণ, নদী ও স্থলে বিভিন্ন শিল্পবর্জ্য মিশ্রণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। তাই পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও মেশিনারিজ ব্যবহার করে দূষণ রোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সবুজ প্রযুক্তিকে সহায়তা করার জন্য বিভিন্ন রকম সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। যার মধ্যে হ্রাসকৃত হারে কর্পোরেট ট্যাক্স আদায়, গ্রীন ইন্ডাস্ট্রিজ’র ক্ষেত্রে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানিতে শুল্ক সুবিধা প্রদান এবং বিশেষ অর্থায়ন উল্লেখযোগ্য। কিন্তু সামগ্রিক নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে এখনো কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে তিনি বিশেষভাবে পৃথক নীতি-নির্ধারণের দাবি জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রামের ইডি আবু ফারাহ মো. নাসের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ,স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, সারা পৃথিবী এখন পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই এক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে এক সাথে কাজ করতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের পরিচালক মো. আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, শিল্প ক্ষেত্রে জিরো ওয়াটার ডিসচার্জ কার্যক্রম চট্টগ্রামে বেশ সাফল্য লাভ করেছে এবং এ অঞ্চলের অনেক কারখানা ইটিপি চালু করেছে। তিনি অদূর ভবিষ্যতে দূষণ আরো কমে আসবে বলে প্রত্যাশা করেন এবং বিশেষ করে অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্লাস্টার পদ্ধতি চালু করে ইটিপি স্থাপনের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আরিফ ইফতেখার বলেন, ইটিপি স্থাপন করা হলে কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে তা উদ্যোক্তাদের জানাতে হবে। তিনি স্থানীয় প্রযুক্তির উন্নয়ন, গবেষণার ক্ষেত্রে যথাযথ কর্মনির্দেশনা প্রদান এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে এক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করেন।
বিল্ড’র সিইও ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, উন্নত দেশগুলোতে পরিবেশবান্ধব শিল্প কারখানাগুলো বর্জ্য পদার্থ পুনঃপ্রক্রিয়া করে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করে থাকে। তিনি গবেষণার মাধ্যমে লব্ধ পদ্ধতিসমূহ শিল্প কারখানায় বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে গবেষকদের অন্তর্ভুক্তির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় অন্যান্য বক্তারা ইস্পাত শিল্পে দূষণমুক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করে যেসব কারখানা আহরণকৃত স্ক্র্যাপ রপ্তানি করে থাকে তাদের প্রণোদনা প্রদান, সরকার প্রদত্ত সুবিধাসমূহ সম্পর্কে উদ্যোক্তাদের অবহিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, স্থানীয় অর্থায়ন উৎসাহিত করতে ব্যাংক ঋণের সুদ হার কমানো, মহানগর থেকে বৃহৎ শিল্প স্থানান্তর করা, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিকে আর্থিক লাভে রূপান্তর ও পরিবেশ দূষণ শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।
এ সময় পিআরওকেএএস’র প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর ফরহাদ হোসেন, চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, নবনির্বাচিত পরিচালক এসএম আবু তৈয়ব, সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, লুব-রেফ বাংলাদেশ লি.’র পরিচালক সালাউদ্দিন ইউসুফ, বিসিএএস’র সিনিয়র রিসার্চ অফিসার সুবুরুন্নেসা বক্তব্য রাখেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিল্ড’র অতিরিক্ত রিসার্চ ডাইরেক্টর তাহমিদ জামী। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. নুরুন নেওয়াজ সেলিম, পরিচালক কামাল মোস্তফা চৌধুরী, ছৈয়দ ছগীর আহমদ, মো. আবদুল মান্নান সোহেল ও
তাজমীম মোস্তফা চৌধুরী, ব্যবসায়ী নেতা তাহের সোবহান, ওম্যান চেম্বার, বিকেএমইএ, বিএসআরএম গ্রুপ, মোস্তফা গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও প্যাসিফিক জিন্স’র প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।