সবাইকে সাশ্রয়ী হতে ফের সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী

6

পূর্বদেশ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, একের পর এক সেতু ও সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের ফলে এখন মোংলা বন্দর আমাদের খুব কাছে এসে গেছে। সেই সাথে আমাদের স্থলবন্দর বেনাপোল, ভোমরাসহ কুষ্টিয়া অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। এই যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে আমাদের ওই সব অবহেলিত অঞ্চলগুলো আরো উন্নত হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মধুমতী নদীর ওপর নির্মিত মধুমতী সেতু এবং শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সমগ্র বাংলাদেশ সফর করে তিনি যে বিষয়টি অনুধাবন করেছেন তা হচ্ছে সর্বাগ্রে প্রয়োজন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। যা সাধ্যমত তিনি করে চলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যখনই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন তখনই জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন এবং আওয়ামী লীগ সবসময়ই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে।এটাই আওয়ামী লীগের ইতিহাস। পাশাপাশি দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছে আওয়ামী লীগ। খবর বাসস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমবার সরকারে এসেই যমুনা সেতুর ওপর বহুমুখী সেতু নির্মাণ করে সরকার। এছাড়াও আরো অনেকগুলো সেতুর নির্মাণ সম্পন্ন করে। যার মধ্যে রয়েছে ধরলা সেতু, গাবখান সেতু, শিকারপুর ও দোয়ারিকা সেতু এবং ভৈরব নদীর ওপরও সেতু নির্মাণ। সমগ্র বাংলাদেশকে একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনাই ছিল সরকারের প্রচেষ্টা। তিনি বলেন, এখন আমরা দাবি করতে পারি দেশের সমগ্র এলাকার মাঝেই যেন যোগাযোগ স্থাপিত হয় সে কাজ আমরা করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিশ্ব ব্যাংকের ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার প্রসংগ টেনে বলেন, আজকের মধুমতি সেতু এবং নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু দুটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত করার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথমে কালনা সেতু হিসেবে বর্তমান মধুমতি সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও এটা যেহেতু মধুমতি নদীর ওপরে নির্মিত এবং মধুমতি নামটিও অনেক মিষ্টি তাই এটার নাম মধুমতি সেতু রাখার সিদ্ধান্ত নেন। পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ’৭৫ এর জাতির পিতাকে হত্যার প্রতিবাদকারী নাসিম ওসমানের নামে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নামকরণ করেছেন। ইতোপূর্বে সরকার নারায়ণগঞ্জবাসীর উন্নয়নে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর আরো দুটি সেতু এবং মুক্তারপুর সেতু নির্মাণ করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আরো বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দুহাইলান।
সেতুগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন। সেতু প্রকল্পের উপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়।
শেখ হাসিনা সরকারের যোগায়োগ ব্যবস্থার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, একের পর এক সেতু ও সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের ফলে এখন মোংলা বন্দর আমাদের খুব কাছে এসে গেছে। সেই সাথে আমাদের স্থলবন্দর বেনাপোল, ভোমরাসহ কুষ্টিয়া অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। এই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে আমাদের ঐসব অবহেলিত অঞ্চলগুলো আরো উন্নত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি এই সেতু দু’টি নির্মাণে সহযোগিতার জন্য বন্ধু প্রতীম দেশ জাপান এবং সৌদি আরবকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনা ভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও নিষেধাঞ্জা এবং পাল্টা নিষেধাঞ্জার পরিক্ষেতিতে সবাইকে সাশ্রয়ী হবার আহবান জানিয়ে তিনি সমগ্র দেশে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী ফেলে না রেখে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন ।
শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধের ফলে সমগ্র বিশ^ই আজকে কষ্ট ভোগ করছে। সে জন্য আমাদের আবেদন থাকবে-আমরা যুদ্ধ চাইনা, শান্তি চাই, মানুষের উন্নতি চাই। তিনি বলেন, এই যুদ্ধে অস্ত্র বিক্রি করতে গিয়ে বা অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যে অর্থ ব্যয় হয় সে অর্থ সমগ্র বিশ্বের শিশুদের জন্য ব্যয় করা হোক। তাদের শিক্ষা, চিকিৎসা এবং উন্নত জীবনের জন্য ব্যয় করা হোক, সেটাই বিশ^বাসীর কাছে আমি আহবান জানাই।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আমরা সকলে মিলে নিরলস পরিশ্রম করে যাবো, এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।